আজ ১৩ জুলাই রোববার। ২০২৪ সালের এই দিনটি ছিল শনিবার। সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকলেও এদিন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লায় শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং পুলিশের সম্মিলিত হামলায় নিন্দার ঝড় ওঠে সারাদেশজুড়ে। বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা প্রতিবাদ জানায় ক্যাম্পাসে-রাস্তায় দাঁড়িয়ে। তারা ন্যায্য দাবি আদায়ে আরও বেশি সংকল্পবদ্ধ হয়। দিন যতই যাচ্ছিল স্বৈরাচারী হাসিনার প্রতি জনগণ বিক্ষুব্ধ হচ্ছিল। কতিপয় সুবিধাবাদী আমলা এবং পুলিশ হাসিনার ক্ষমতার মসনদ টিকিয়ে রাখার মরণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। তারা মনে করেছিল হাসিনার মৃত্যুর আগে কেউ তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জীবনপণ লড়াইয়ে হাসিনার মসনদ তাসের ঘরের দশা হবে তা কোনভাবেই ধারণা করতে পারেনি দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা। ছাত্রলীগ ও যুবলীগ সঙ্গে থাকায় আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে প্রশাসন। কুমিল্লায় প্রতিরোধ গড়ে ওঠায় ঢাকা এবং সারাদেশের মানুষের মনে আরও বেশি আন্দোলনের স্পৃহা জাগ্রত হয়।

আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ওইদিন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। সেখানে বিপুল সংখ্যক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। অংশীজনেরা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে মাঠে নামে। এর আগের দিন শুক্রবার ১২ জুলাই রাতে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সের পরিবহন বিভাগের গাড়িচালক খলিলুর রহমান বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১১ জুলাই কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি ছিল। সে অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অজ্ঞাতপরিচয় ছাত্ররা জড়ো হয়ে বিভিন্ন হলের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করে বিকেল ৪টার সময় স্লোগান দিতে দিতে শাহবাগ মোড়ের দিকে অগ্রসর হতে থাকেন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা শাহবাগ মোড় অতিক্রম করে বেআইনি জনতায় আবদ্ধ হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা সৃষ্টি করেন। তারা শাহবাগ মোড়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলেন এবং পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করেন। এসময় কর্তব্যরত পুলিশ সদস্যদের মারধর করে সাধারণ জখম করেন। পরে তারা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের দিকে অগ্রসর হতে থাকলে পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তারা ছাত্রদের বুঝিয়ে শুনিয়ে পুনরায় শাহবাগ মোড়ে ফিরিয়ে আনতে যান। এ সময় বিএসএমএমইউয়ের পাশে নিরাপদ স্থানে রাখা এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যাননের চারদিকে ঘেরাও করে অনেক সংখ্যক আন্দোলনকারী উদ্দাম নৃত্য শুরু করেন। তারা ওয়াটার ক্যানন চালককে গাড়ি থেকে জোর করে বের করার চেষ্টা ও গতিরোধ করেন। এর ফলে এপিসি ২৫ এর সামনের দুইটি এসএস স্ট্যান্ড, বনাটের উপরে বাম পাশে রেডিও অ্যান্টেনা এবং ডান পাশের পেছনের চাকার মার্টগার্ড চলি এবং ওয়াটার ক্যাননের বাম পাশের লুকিং গ্লাস ভেঙে অনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেন। এ বিষয়ে শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ছাত্রদের অন্যান্য সিনিয়র স্যাররা বুঝিয়ে শুনিয়ে এপিসি-২৫ ও ওয়াটার ক্যানন থেকে নামিয়ে আনেন এবং পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে পানির বোতল, টেপটেনিস বল ও ইটের টুকরা ছুড়ে মারেন। এতে অনেক পুলিশ সদস্য আঘাতপ্রাপ্ত হন।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত সব সিনিরয় কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে অজ্ঞাতপরিচয় ছাত্ররা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগের আন্দোলনে যোগ দিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বারডেম হাসপাতালের গেটের ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশ সদস্যদের আহত করেন। তারা পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিভিন্ন ধরনের কটূক্তি করেন। ছাত্ররা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা এবং শাহবাগ থানায় ছাত্রদের ধরে নিয়ে গেছে বলে গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুলিশকে মারতে তেড়ে আসেন ও পুলিশকে বিভিন্ন ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে শাহবাগ মোড় ত্যাগ করেন। বিবাদীরা বেআইনিভাবে জড়ো হয়ে দাঙ্গা সৃষ্টি করে সরকারি কাজে বাধা দেন। তারা স্বেচ্ছায় আঘাত করেন, গতিরোধ, দাঙ্গা দমনকারী কর্তব্যরতদের প্রতি আক্রমণ ও বাধা দিয়ে ক্ষতিসাধন ও ভয়ভীতি দেখান বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

মামলার বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছিলেন, কোনো ধরনের ক্ষতি হয়নি। তাহলে হঠাৎ অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দেওয়া হলো কেন, সে বিষয়ে আমরা জবাবদিহি চাইছি। ছাত্রসমাজকে এ রকম মামলা-হামলার ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। এ ছাড়া বৃহস্পতিবারের কর্মসূচিতে বিভিন্ন স্থানে হামলায় জড়িত পুলিশ সদস্য ও সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এর আগে বৃহস্পতিবার পুলিশের রমনা জোনের এডিসি শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমাদের সাঁজোয়া যান ছিল, শিক্ষার্থীরা তার পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলেছে। এখানে কোনো ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। এদিকে, সময় টিভির সাংবাদিকদের ওপর হামলার অভিযোগে চ্যানেলটির পক্ষ থেকে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। এজাহারে বলা হয়, গত বৃহস্পতিবার চ্যানেলটির সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় আন্দোলনকারীরা।

এদিন রাতেই রাষ্ট্রপতিকে স্মারক লিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এর আগে অবশ্য আরও কঠোর কর্মসূচী দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। পরবর্তীতে ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। সেই প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি বর্তমানে সভাপতি এস এম ফরহাদ দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, ১৩ তারিখ সন্ধ্যায় মাহফুজ ভাই ফোন দিয়ে বললেন, কর্মসূচি দেবো কি করা যায়? আমি বললাম যে, রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেন। তখন তিনি বললেন, কেন? আমি বলি যে সবশেষ রাষ্ট্রের সুপিরিয়র প্রধানকে শেষ বারের মতো একবারের জন্য হলেও জানাতে চাই। আমরা একটা ফরমালিটির মধ্য দিয়ে যেতে চাই। মাহফুজ ভাই বললেন, তাহলে ডিসকাস করে দেখি। তারপর তারা ডিসকাস করলো অনেকক্ষণ। রাতে আমাকে ফোন দিয়ে বললো, আমরা এই কর্মসূচি দিলাম। এখন আপনারা স্মারকলিপিটা ম্যানেজ করে দেন। এরপর আমি আমার এক টিম মেম্বারকে বললাম। তিনি স্মারকলিপিটা টাইপ করলেন। এরপর মাহফুজ ভাইকে রাত তিনটা বাজে ফোন দিয়ে বললাম ভাই দেখেনতো। তারপর দেখলো এবং বললো যে আল্টিমেটাম ৭২ ঘন্টা দিয়েছেন সেটা আরও কমিয়ে দেন। পরে আল্টিমেটামটা কমিয়ে দিলাম। এরপর আমরা স্মারকলিটির কপি ৬৪ জেলার দায়িত্বশীলদের পাঠিয়ে দিলাম। তাতে স্বতস্ফূর্ত মনে হলো। যিনি লিখেছেন তাকে ফোন দিয়ে বললাম, এটা তুমি একটু ড্রাইভে রাখো। এটা আমরা পাবলিক করে দেই। তাতে মানুষ এখান থেকে না নিলেও বুঝবে যে এটা স্বতস্ফূর্ত হয়েছে। পরে ৬৪ জেলায় বাস্তবায়িত হয়েছে।

২০২৪ সালের ১৩ জুলাই ঢাকার আন্দোলনের সাথে মিল রেখে রাজশাহীতে রেলপথ অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা। ঢাকায় কর্মসূচি সাংবাদিক সম্মেলন করে আন্দোলনরতরা। তারা অভিযোগ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, মামলা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তারা ঘোষণা করে যে পরের দিন তারা সব গ্রেডের সরকারি চাকুরিতে কোটা সংস্কারের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি দেবে।

১৩ জুলাই রাষ্ট্রপতি বরাবর পাঠানো স্মারকলিপি লেখার দায়িত্ব পড়ে ছাত্র শিবিরের ঢাবি শাখার ওপর। দায়িত্বের অংশ হিসেবে শিবির স্মারকলিপি প্রস্তুত করে দেয়।

রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া স্মারকলিপিতে যা লেখা ছিল

বরাবর,

মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ।

বিষয় : জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরির সব গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে আইন প্রণয়ন প্রসঙ্গে।

মহামান্য,

যথাযথ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক নিবেদন এই যে, সাম্প্রতিক সময়ে চলমান কোটা সংস্কারসংক্রান্ত বিতর্কের প্রেক্ষিতে আমরা চাকরিপ্রত্যাশী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আপনার কাছে নিম্নোক্ত বক্তব্য পেশ করছি। আপনি অবগত আছেন, ২০১৮ সালে সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের গণআন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকারি চাকরি (নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেড) থেকে কোটাপদ্ধতি বিলুপ্ত করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে জাতীয় সংসদে কোটা বিলুপ্তির ঘোষণা দেন। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে সরকারি চাকরি থেকে কোটাপদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করা হয়। কোটা সংস্কার ছিল শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের প্রাণের দাবি। বৈষম্যমুক্ত ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে চাকরিতে কোটা পদ্ধতির পুনর্বিবেচনা করে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিল শিক্ষার্থীরা। সরকার সার্বিক বিবেচনায় নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডে কোটার বিলুপ্তিকে সমাধান মনে করেছিল। ২০১৮ সালের এই পরিপত্র জারি হবার পরে কোটামুক্তভাবে কয়েকটি সরকারি চাকরির পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

কিন্তু ওই পরিপত্রটি সংবিধানের আলোকে ত্রুটিযুক্ত থাকায় ২০২১ সালে ৬ ডিসেম্বর মহামান্য হাইকোর্ট একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেন এবং গত ৫ জুন, ২০২৪ এই রুলকে অ্যাবসলিউট হিসেবে রায় দেন আদালত।

রায়ে এই পরিপত্রকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেন। যার ফলে ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের চাকরির নিয়োগে কোটা পুনর্বহাল হয়। পরবর্তীতে গত বুধবার সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটাপদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলে পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায়ের কিছু অংশ গত বৃহস্পতিবার প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে। আমরা মনে করি, ২০১৮ সালের পরিপত্রে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের আশা আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। কেননা শিক্ষার্থীরা সকল গ্রেডের সরকারি চাকরিতে কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিল। প্রথমত, কোটার অসহনীয় মাত্রা মানে দেশের লাখ লাখ তরুণ-তরুণীদের দাবি ও আন্দোলনের সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের প্রহসন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূলমন্ত্র সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার তা নিশ্চিত করতে ও একটি দক্ষ প্রশাসন গড়তে মেধাভিত্তিক নিয়োগের কোনো বিকল্প নেই। দ্বিতীয়ত, কোটা পদ্ধতি না থাকলে নাগরিকদের অনগ্রসর অংশ প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ থেকে বঞ্চিত হবে। তৃতীয়ত, ওই পরিপত্রটি শুধু ১ম ও ২য় শ্রেণির সরকারি চাকরির জন্য প্রযোজ্য। কিন্তু সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৫ শতাংশ কোটাকে ছাত্রসমাজ যৌক্তিক মনে করে। তাই আমাদের দাবি হচ্ছে- সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠী ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের জন্য কোটাকে ন্যায্যতার ভিত্তিতে ন্যূনতম পর্যায়ে (সর্বোচ্চ ৫%) এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতিকে সংস্কার করতে হবে।

মহামান্য, ছাত্রসমাজের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আপনার নিকট আকুল আবেদন জানাচ্ছি, জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে বাধিত করবেন। মহামান্য, হাইকোটের রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করতে পারবে। ছাত্রসমাজ দীর্ঘদিন ধরে ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে রাজপথে ঝড়-বৃষ্টি-খরতাপকে উপেক্ষা করে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। আমাদের কারণে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হোক তা আমরা কখনোই চাই না। আমরা দ্রুতই পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চাই। ছাত্রসমাজ আশা রাখে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জাতীয় সংসদের জরুরি অধিবেশন ডেকে সরকারি চাকরিতে সকল গ্রেডে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে বাধিত করবেন। অন্যথায় ছাত্রসমাজ নিজেদের অধিকার রক্ষায়, বৈষম্যমুক্ত ও মেধাভিত্তিক বাংলাদেশ নির্মাণে সর্বাত্মক আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে বাধ্য হবে।

এইদিন রাত ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে চলমান আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সমন্বয়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৩৮ সদস্যের এ কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাচের ২৪ জন শিক্ষার্থীকে সমন্বয়ক এবং ১৪ জনকে সহসমন্বয়ক হিসেবে রাখা হয়। এদিকে কোটা সংস্কারের দাবিতে রাজবাড়ী রেলস্টেশনের সামনে শনিবার রেললাইনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় ঢাকাগামী মধুমতী এক্সপ্রেস আটকে দেন তারা।

এদিন সন্ধ্যায় বগুড়া শহরে পৌর এডওয়ার্ড পার্কের শহীদ টিটু মিলনায়তনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতাদের সংর্বধনা ও প্রয়াত ব্যক্তিদের মরণোত্তর সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়েই কোটা বাতিল করেছিল, হাইকোর্ট সেটি পুনর্বহাল করেছিল, সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছে। সুতরাং কোটা সমাধান আদালতের মাধ্যমেই হতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়টি যাঁরা বোঝেন না বা বুঝেও বুঝতে চান না বা যাদের বিএনপিসহ অন্যরা ইন্ধন দিচ্ছে, তাদের বলব, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করবেন না।

সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবির প্রসঙ্গে মন্ত্রী বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলেন, কোটা সরকার পুনর্বহাল করেনি। সরকার বরং শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে কোটা বাতিল করেছিল। বাতিলের পর কোটাহীনভাবে সরকারি ও অন্যান্য চাকরিতে নিয়োগ হচ্ছে। হাইকোর্ট রায় দিয়েছে কোটা পুনর্বহালের জন্য। সুপ্রিম কোর্ট সেটি স্থগিত করেছে। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। হাছান মাহমুদ বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে বা বিচারাধীন বিষয়ে সরকার কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তাহলে আদালত অবমাননা হবে। এসব বুঝেও যারা জনভোগান্তি ঘটাচ্ছেন, সেই ভোগান্তি যাতে না ঘটে, সে জন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর এবং আশা করব শিক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।