আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন করে ভারতের আদানির সঙ্গে করা অসম চুক্তি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা পর বিদ্যুৎ খাতে অনিয়ম ও স্বার্থবিরোধী চুক্তির অভিযোগে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত জাতীয় পর্যালোচনা কমিটিও ওই বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ বলেছে। এব্যাপারে আরো অধিকতর তদন্তের জন্য জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি আবারো পুর্ণগঠন করা হয়। ঠিক সেই সময়ে নিজের মতো দাবি করা বকেয়া বিল পরিশোধ না করলে আবারও বিদ্যুৎ বন্ধের আলটিমেটাম দিয়েছে ভারতীয় প্রতিষ্ঠানটি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আদানীর দহরম মহরম ছিল হাসিনার সরকারের সাথে। যার ফলে সে সময়কার চুক্তি ছিল বিশেষগোষ্ঠিকে খুশি করার জন্য। চলমান সময়ে আদানী বিভিন্ন কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। বকেয়া বিল আদায়ের জন্য এর আগেও একাধিকবার আলটিমেটাম দেওয়ার পাশাপাশি নানা কৌশলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া এবং বন্ধও করেছিল আদানি।
সূত্র জানায়, আদানী বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলে গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ব্যবসাকে প্রভাবিত করবে। কারণ, বাংলাদেশ এই কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের একমাত্র ক্রেতা। প্রতি মাসে ৯-১০ কোটি ডলারের বিলের মানে হলো এই কেন্দ্র থেকে আদানির ১১০ কোটি ডলার বা ৯ হাজার কোটি রুপির বেশি অর্থ আয় হয়। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারে পতনের পর আদানি ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য চেষ্টা করছে। দেশটিতে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে এবং দাম পরিশোধেও কোনো সমস্যা নেই। কোম্পানিকে বলা হয়েছে, স্থানীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালনব্যবস্থায় একটি সংযোগের জন্য আবেদন করতে। অনুমোদন পেলে বিহারের লাখিসরাইয়ে অবস্থিত একটি সাবস্টেশন থেকে সংযোগ দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, আগামী ১০ নভেম্বরের মধ্যে সব বকেয়া পরিশোধ না হলে ১১ নভেম্বর থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে আদানি পাওয়ার লিমিটেড (এপিএল)। বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করলেও চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ক্যাপাসিটি পেমেন্ট বা কেন্দ্র ভাড়া বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ দিতে হবে বাংলাদেশকে।
জানা গেছে, অন্তর্বর্তী সরকার পুরনো বকেয়া পরিশোধ করার পর কয়লার বাড়তি দাম নিয়ে বিরোধ তৈরি হয় আদানির সঙ্গে। এদিকে বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য সিঙ্গাপুরের সালিশি আদালতের মাধ্যমে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দিয়েছে আদানি। তবে এতে রাজি নয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।
পিডিবি বলছে, বিষয়টি বাংলাদেশের আদালতে বিচারাধীন এবং অনিয়মের অভিযোগ তদন্তাধীন থাকায় এখন সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু করলে সময় ও অর্থের অপচয় হবে। ফলে আদানি-বিপিডিবি সম্পর্কের চলমান টানাপড়েন এখন দুই দেশের বিদ্যুৎ বাণিজ্যে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
জানা গেছে, আদানিসহ অধিকাংশ বিদ্যুৎ চুক্তিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি। এর সঙ্গে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারসহ আমলা ও ব্যবসায়ীরাও জড়িত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তি হওয়ায় যথাযথ প্রমাণ ছাড়া চুক্তি বাতিল করা সম্ভব নয়। বিশেষ বিধানে সম্পাদিত বিদ্যুৎ খাতের চুক্তিগুলো পর্যালোচনার লক্ষ্যে গঠিত কমিটি ১ বছর পর রোববার একটি অন্তর্বর্তী প্রতিবেদন বিদ্যুৎ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ সময় কমিটির সদস্যরা সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব তথ্য জানান।
ফাওজুল কবির বলেন, আদানির সঙ্গে করা চুক্তির বিষয়ে যদি দুর্নীতি প্রমাণ হয়, তাহলে সে চুক্তি বাতিল হতে পারে। তবে চুক্তি চাইলেই বাতিল করা যায় না। তিনি আরও বলেন, সবার সহযোগিতা পেলে দুদকের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সব তথ্য দুদকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
কমিটির প্রধান সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম বলেন, দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ আইনের আওতায় বড় ধরনের দুর্নীতি করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এই চুক্তি হয়েছে বিভিন্ন দেশের কোম্পানির সঙ্গে। ভারতের আদানিসহ যেসব কোম্পানি এ কাজের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর অধীন সম্পাদিত চুক্তিগুলো পর্যালোচনার লক্ষ্যে গঠিত জাতীয় কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীকে।
কমিটির কার্যপ্রণালীতে বলা হয়েছে, কমিটি যেকোনো সূত্র থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও প্রয়োজনীয় যে কোনো নথি নিরীক্ষা করতে পারবে, সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে শুনানিতে আহ্বান করতে পারবে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ (সংশোধিত ২০২১)-এর আওতায় ইতোমধ্যে সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে সরকারের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে কি না তা নিরীক্ষা করবে, নিরীক্ষার ভিত্তিতে পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন করবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কমিটিকে সাচিবিক ও আনুষঙ্গিক সহায়তা দেবে।
সূত্র জানায়, ভারতের বহুজাতিক শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপের সঙ্গে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তিতে ভয়াবহ অনিয়ম, আর্থিক ফাঁকি ও প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতার তথ্য রাষ্ট্রক্ষমতার পরিবর্তনের পর একের পর এক প্রকাশ পাচ্ছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এই এক চুক্তিতেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অন্তত ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৬৭ মার্কিন ডলার শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে যা টাকার মূল্যে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকারও বেশি।
এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আদানি গ্রুপের সঙ্গে স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ সরবরাহ চুক্তির পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা শুরু করার ঘোষণা দিয়েছে। দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থা চুক্তির আর্থিক, প্রশাসনিক ও আইনগত দিক বিশ্লেষণের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি বিশেষ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক আল-আমিন এর নেতৃত্বে গঠিত কমিটিতে আরও আছেন উপ-পরিচালক মুহাম্মদ জয়নাল আবেদীন ও সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান। তারা তিনজনই সরকারি প্রকিউরমেন্ট ও উচ্চমূল্যের আন্তর্জাতিক চুক্তি বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল জানিয়েছেন, এই কমিটি আদানির সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিটি আর্থিক, আইনগত ও প্রযুক্তিগত দিক থেকে পর্যালোচনা করবে। চুক্তির কাঠামো, শুল্ক ফাঁকির ধরন, কর অব্যাহতির বৈধতা, এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর অনুমোদন প্রক্রিয়া যাচাই করা হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় স্বার্থবিরোধী কোনো ধারা বা অনিয়ম থাকলে তা নিরীক্ষা প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হবে।
শুল্ক গোয়েন্দা প্রতিবেদনের হিসেবে, ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত আদানির গড্ডা কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশ মোট ১,০৫৮ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার ৮৪ কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ আমদানি করেছে। এর আর্থিক মূল্য প্রায় ১২৮ কোটি ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪২ ডলার।এই আমদানিতে ৩১ শতাংশ শুল্ক, ভ্যাট ও অন্যান্য কর মিলিয়ে প্রায় ৩৯ কোটি ৭৩ লাখ ডলার রাজস্ব পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু আদানিকে করমুক্ত সুবিধা দেওয়ায় তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা পড়েনি।
বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্রমতে, যে অসম প্রক্রিয়ায় আদানির সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি হয়েছিল, তা নিয়ে তদন্ত করছে চুক্তি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। এরই মধ্যে ব্যাপক অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে তারা। মাসখানেকের মধ্যে আরও শক্ত প্রমাণ মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আদানির আলটিমেটাম :
গত ৩১ অক্টোবর পিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিমের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে আদানি পাওয়ারের ভাইস চেয়ারম্যান অবিনাশ অনুরাগ অভিযোগ করেন, পিডিবি ৪৯৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে ২৬২ মিলিয়ন ডলারকে পিডিবি নিজেই ‘বিরোধহীন পাওনা’ হিসেবে স্বীকার করেছে।
চিঠিতে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ‘২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর স্বাক্ষরিত বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির ১৩.২ ধারায় বলা আছে, বকেয়া পরিশোধে ব্যর্থ হলে সরবরাহ স্থগিতের অধিকার রাখে কোম্পানি। ১০ নভেম্বরের মধ্যে সব বকেয়া নিষ্পত্তি না হলে আমরা ১১ নভেম্বর থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য হব।’
ভারতীয় কোম্পানিটি জানিয়েছে, সরবরাহ বন্ধ থাকলেও চুক্তি অনুযায়ী ‘নির্ভরযোগ্য উৎপাদন সক্ষমতা’ ধরে সক্ষমতা চার্জ পাওয়ার অধিকার তারা রাখবে। অর্থাৎ, বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও বাংলাদেশকে নির্দিষ্ট অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
আদানির বিদ্যুৎ বন্ধের আলটিমেটামের বিষয়ে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘এটা তো তারা (আদানি) সবসময় দেয়। ঠিক আছে, দেখি আমরা কী করতে পারি।’
আপাতত মধ্যস্থতায় রাজি নয় পিডিবি :
চলমান বিরোধ মেটাতে আদানির প্রস্তাবিত মধ্যস্থতা প্রক্রিয়ায় আপাতত না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পিডিবি। গত ২ নভেম্বর সিঙ্গাপুর আন্তর্জাতিক সালিশ কেন্দ্রের (এসআইএসি) রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, এখনই মধ্যস্থতা শুরু করা অনুচিত। বিষয়টি উচ্চ আদালতে বিচারাধীন এবং অনিয়মের অভিযোগ তদন্তাধীন।
চিঠিতে পিডিবির পরিচালক (কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন) প্রকৌশলী মকসুদুর রহমান ও সচিব রাশেদুল হক প্রধান স্বাক্ষর করেন। তারা জানায়, আদানি ৩০ অক্টোবরের চিঠিতে পিপিএর ধারা ১৯.৩(খ) অনুযায়ী, মধ্যস্থতা শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পিডিবি বলছে, চুক্তির ধারা ১৯.৩ অনুসারে মধ্যস্থতা ঐচ্ছিক, বাধ্যতামূলক নয়। ধারা ১৯.৩ (ঘ) অনুযায়ী, বিশেষজ্ঞের মতামত চূড়ান্ত নয় এবং যেকোনো পক্ষ চাইলে সালিশি প্রক্রিয়ায় যেতে পারে।
চিঠিতে বলা হয়, চুক্তিসংশ্লিষ্ট অনিয়ম, কমিশনবাণিজ্য ও জালিয়াতির অভিযোগ বর্তমানে হাইকোর্টের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্তাধীন। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তাই এখন মধ্যস্থতায় গেলে তা আদালতের নির্দেশনা ব্যাহত করতে পারে।
পিডিবি রেজিস্ট্রারকে অনুরোধ করে জানিয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো বিশেষজ্ঞ নিয়োগ বা মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত নয়। সংস্থাটি সতর্ক করেছে, পিডিবির আপত্তি উপেক্ষা করে যদি রেজিস্ট্রার বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দেন, তবে সেই খরচের দায়ভার আদানি বা সংশ্লিষ্ট পক্ষকেই নিতে হবে।
বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, আদানির চুক্তিতে যদি কোনোরকম অনিয়ম পাওয়া যায়, তাহলে বাতিল করতে দ্বিধা করব না। তবে যথাযথ কারণ থাকতে হবে।
কমিটির সদস্য ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের ফ্যাকাল্টি অব ল অ্যান্ড সোশ্যাল সায়েন্সের অর্থনীতির অধ্যাপক মোশতাক হোসেন খান বলেন, আদানির চুক্তির অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে মাসখানেকের মধ্যে শক্ত প্রমাণ সামনে আসবে। এসব প্রমাণ নিয়ে দেশ-বিদেশে আইনি প্রক্রিয়া নেওয়া যাবে।
গত সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ২০১৭ সালের ৫ নভেম্বর পিডিবির সঙ্গে নিজেদের মতো করে একতরফা চুক্তি সই করে পিডিবি। ভারতের ঝাড়খ- রাজ্যের গড্ডায় ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লাভিত্তিক আল্ট্রা সুপারক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে আদানি, যার সব বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হয়। এ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ২৫ বছর ধরে কিনবে বাংলাদেশ। গত সোমবার রাত ৮টায় কেন্দ্রটি থেকে বাংলাদেশ ১ হাজার ৩০৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পেয়েছে বলে পিডিবি জানিয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রমতে, আদানির চুক্তিতে কয়লার দাম নির্ধারণে বাংলাদেশের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। পিডিবির হিসাব অনুযায়ী, অন্য কেন্দ্রগুলোর তুলনায় প্রতি টন কয়লায় ১০ থেকে ১২ ডলার বেশি দিতে হচ্ছে, বছরে প্রায় ২০ কোটি ডলারের অতিরিক্ত ব্যয় তৈরি করছে।
এরই মধ্যে আদানি পিডিবিকে তাদের এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) নবায়নের জন্য চাপ দিচ্ছে। ২০১৭ সালের চুক্তির অধীনে কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে ইস্যু করা এলসি গত ৩০ অক্টোবর মেয়াদোত্তীর্ণ হলেও তা নবায়ন করা হয়নি। আদানি বলছে, এলসি নবায়নে দেরি পিপিএর ১৩.২ ধারার লঙ্ঘন এবং চুক্তিভঙ্গজনিত ঘটনা হিসেবে গণ্য হতে পারে।