বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজের অর্থ আত্মসাতের মামলায় সাবেক ভিসি নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। দুর্নীতি দমন কমিশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া তার রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগে গত ১৮ জুন সাবেক দুই উপাচার্য কলিমউল্লাহ এবং এ কে এম নূর-উন-নবীসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে দুদক।
গেল ৭ অগাস্ট মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে কলিমউল্লাহকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ-ডিএমপির গোয়েন্দা গোয়েন্দা শাখা-ডিবি। ওইদিনই জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মিনহাজ বিন ইসলাম মঙ্গলবার তার ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আসামীর উপস্থিতিতে শুনানির দিন গতকাল বুধবার ধার্য করেন। এদিন শুনানিকালে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহকে আদালতে হাজির করা হয়। তার আইনজীবী শাহনাজ সুমি রিমান্ড আবেদন বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন।
শুনানিতে এই আইনজীবী বলেন, অধ্যাপক কলিমউল্লাহ নিয়মবর্হিভূতভাবে কিছু করেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সবকিছুতে একার বিষয় থাকে না। চাইলেই দুই-চারজন মিলে টাকা আত্মসাৎ করে নিতে পারেন না। তিনি একজন বয়স্ক, অসুস্থ মানুষ। তার রিমান্ড আবেদন বাতিল করে জামিন প্রার্থনা করেন আইনজীবী সুমি।
দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর দেলোয়ার জাহান রুমি জামিনের বিরোধীতা করেন। তিনি আদালতে বলেন, দুদকের মামলা হঠাৎ করে হয় না। দীর্ঘ সময় অনুসন্ধান হয়। আসামিও সে বিষয়ে অবগত থাকেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত কলিমউল্লাহর পাঁচ দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এ মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুইজন উপাচার্য ছাড়াও আসামী করা হয়েছে সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্য সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, ঠিকাদার মো. আ. সালাম বাচ্চু এবং এম এম হাবিবুর রহমান।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, পরস্পর যোগসাজশ, বিশ্বাসভঙ্গ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বেরোবিতে উন্নয়ন প্রকল্পে অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন এবং ৩০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চুক্তি মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই সম্পাদন করা হয়। এছাড়া, ঠিকাদারের চলতি বিল থেকে কাটা নিরাপত্তা জামানত এফডিআর (স্থায়ী আমানত) আকারে ব্যাংকে জমা রেখে, সেই এফডিআরকে লিয়েনে রেখে ঠিকাদারকে ঋণ দিতে না-আপত্তি সনদ প্রদান করা হয়, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় তথা সরকারের প্রায় চার কোটি টাকা সরাসরি ঠিকাদারকে দিতে সহযোগিতা করা হয়।
ঠিকাদারের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে অগ্রিম অর্থ দেওয়ার কোনো বিধান না থাকলেও, আর্থিক সহযোগিতা দেখিয়ে ব্যাংক গ্যারান্টি নিয়ে অগ্রিম বিল দেওয়া হয়। সেই অগ্রিম বিলের বিপরীতে নেওয়া ব্যাংক গ্যারান্টিগুলো বিল সমন্বয়ের আগেই অবমুক্ত করা হয়। এছাড়া, প্রথম পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের দেওয়া নকশা ও পরিকল্পনা না মেনে সরকারি ক্রয়বিধির বাইরে গিয়ে দ্বিতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়। আবার দরপত্রে অস্বাভাবিক মূল্যদানের (ফ্রন্ট লোডিং) মত বিষয় থাকার পরেও, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস (পিপিআর), ২০০৮ অনুযায়ী যথাযথ মূল্যায়ন না করেই কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপির) উপ-উপাচার্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের কারণে তিনি ব্যাপক পরিচিতি পান।
কলিমউল্লাহকে ২০১৭ সালের ৩১ মে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি করা হয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, তিনি ক্যাম্পাসে যান না। ঢাকায় লিয়াজোঁ অফিস থেকেই দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন অধিকার সুরক্ষা পরিষদ এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ৩১ মে পর্যন্ত দায়িত্বের ১ হাজার ৪৬০ দিনের মধ্যে ১ হাজার ২২০ দিন তিনি অনুপস্থিতি ছিলেন।