গতকার মার্চ ফর গাজা কর্মসূচীকে কেন্দ্র করে সব বয়সী মানুষের এই গণজমায়েতে সবার দৃষ্টি কাড়ে একদল শিশু। তারা কেউ মাথায় ব্যান্ডেজ, কেউ হাত-পা বেঁধে , কেউবা হাতে করে নিয়ে এসেছিল ছোট কফিনে মোড়ানো ‘শিশুর লাশ’। এভাবেই ‘আহত ফিলিস্তিনী’ সাজে মিছিলে অংশ নেয় সাইমুম শিল্পীগোষ্ঠী নামক একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিশু শিল্পীরা। শিশুরা সাদামাটা অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তুলে ধরে গাজার শিশুদের যন্ত্রণাদায়ক বাস্তবতা। একজন শিশু ‘বাবা’ সেজে কাঁধে করে নিয়ে আসেন নিজের সন্তানের প্রতীকী মরদেহ। এসব দৃশ্য দেখে অনেক পথচারী আবেগে কেঁপে ওঠেন, কেউ কেউ ফেলেছেন চোখের পানি। আবার এমন দৃশ্যে কেউ বা গগনবিদারী চিৎকারে দিয়েছেন ‘নারায়ে তাকবির,আল্লাহু আকবর’ স্লোগান।
এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন জুলাই বিপ্লবে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনরাও। ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মিছিল-সমাবেশে যোগ দেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন জুলাই বিপ্লবে আহতরা। এসময় সাধারণ মানুষদের সঙ্গে তাদেরকেও নারায়ে তাকবিরসহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। আহতদের একজন জরিফুল ইসলাম, মাথায় ফিলিস্তিনের পতাকা বেঁধে হুইল চেয়ারে করে শাহবাগে এসেছিলেন। নিজে আহত হয়েও কেন এসেছেন, জানতে চাইলে জরিফুল ইসলাম বলেন, আমরা হয়তো হাঁটতে পারছি না, কিন্তু গাজার মানুষের পাশে দাঁড়াতে শরীর নয়, লাগে মন। সেই মন আমাদের এখানে এনেছে। ফিলিস্তিনবাসীর জন্য আমরা আমাদের জীবনটাও উৎসর্গ করে দিতে পারি। মীর সারওয়ার হোসেন নামের আরেকজন বলেন, হাসপাতালের বেডে শুয়ে ছিলাম। কিন্তু পাশেই গাজাবাসীদের পক্ষ নারায়ে তাকবির স্লোগান শুনে আর শুয়ে থাকতে পারলাম না। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে একবার আহত হয়েছি, এবার সুযোগ পেলে ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধ করে শহীদ হয়ে যাবো।
ঢাকার রাস্তায় ট্রাম্প-নেতানিয়াহু হাতে রক্তের দাগ!
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলী বাহিনীর গণহত্যা, ট্রাম্প প্রশাসনের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা এবং আরব বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের হামলায় নিশ্চুপ থাকার ঘটনা নিয়ে প্রদর্শনী করেছেন কয়েকজন ছাত্র। প্রদর্শনীতে দেখা যায়, নেতানিয়াহুর মুখোশ পরা একজন রক্তের বাটি হাতে নিয়ে হাঁটছেন যার পুরো শরীরে ফিলিস্তিনী মানুষের রক্ত। তার পাশেই ট্রাম্পের মুখোশ পরা একজন নেতানিয়াহুকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তারও শরীরজুড়ে রক্তের দাগ। অন্যদিকে আরব নেতারা তাদের দুজনের আশপাশে ঘোরাফেরা করছেন এবং তাদের হাতে চুমু খাচ্ছেন, আনুগত্য প্রকাশ করছেন। তাছাড়া, তাদের ঠিক পেছনেই সাদা কাফনে মোড়ানো অসংখ্য লাশের প্রতিকৃতি রাখা হয় যা নেতানিয়াহু, ট্রাম্প ও তার সহযোগী আরব বিশ্বের নেতারা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছেন।
আয়োজকদের একজন বলেন, আমরা দেখছি ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী গণহত্যা চালাচ্ছে যার প্রত্যক্ষ মদত দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাছাড়া আরব বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানরা এসব দেখেও একেবারে নিশ্চুপ। অর্ধলক্ষাধিক নিরীহ মুসলিমের রক্তেও তাদের ঘুম ভাঙছে না। তাই আমরা এর প্রতিবাদ হিসেবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছি।