সাব্বির আহমেদ। রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা। জুলাই আন্দোলনের সময় পুলিশ তার চোখে গুলি করে। এতে দুটি চোখ-ই অন্ধ হয়ে যায়। সারা জীবনের জন্য তার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গেছে। সেদিনের ঘটনা শুনিয়েছেন দৈনিক সংগ্রামকে। লিখেছেন ইবরাহীম খলিল।
দৈনিক সংগ্রাম : সাব্বির আহমদ আপনি কখন কিভাবে জুলাইযের আন্দোলনে শরিক হলেন ? আর কিভাবে আহত হলেন ?
সাব্বির আহমেদ : আমর বাড্ডা ইস্ট-ওয়েস্ট সহ বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র-জনতা রামপুরা মৌচাক হয়ে বাংলামোটর দিয়ে যখন শাহবাগের দিকে যাই; তখন পুলিশ এবং ছাত্রলীগের ছেলেরা কিছু ভাইকে গুলি করে। পরবর্তীতের আমাদের মিছিলের সামনের অংশ শহীদ মিনারে সংযুক্ত হয়। আর পেছনের দিকে ছিলাম আমরা যাতে কেউ পেছন থেকে হামলা করতে না পারে।
দৈনিক সংগ্রাম : পেছনে কি ঢাল হিসেবে ছিলেন?
সাব্বির আহমেদ : জি¦ ঢাল হিসেবে ছিলাম। কোন ভাই আহত না হয়। ২টার পর থেকেই দেখি টিয়ার সেল নিক্ষেপ করছে পুলিশ। গুলিও করা আরম্ভ করে।
দৈনিক সংগ্রাম : এটা কোন জায়গাটা?
সাব্বির আহমেদ : বাংলা মোটর এলাকা। তখন পুলিশ ছিল হোটেল সোনারগাওয়ের দিকে। তখন ছাত্র-জনতার বিশাল মিছিল দেখে পুলিশ পিছনের দিকে চলে যায়। পরে পুলিশ আবার হামলা করে। তখন আমরা আবার পুলিশকে ধাওয়া দেই। তখন পুলিশ বিপদে পরে এবং সোনারগাও মোড়টা আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। পরে আরেকটা ধাওয়া খেয়ে পুলিশ ফার্মগেইট পর্যন্ত চলে যায়।
দৈনিক সংগ্রাম : ঠিক কোন জায়গাটায় আপানার ওপর হামলা হয়?
সাব্বির আহমেদ : বেলা ৫টার দিকে আমি যখন কাওরান বাজার মেট্রোরেল স্টেশনের নিচে যাই। একুশে টিভির ভবনটা। প্রথমে ছত্রভঙ্গ হলেও তারা আবার একত্রিত হয়ে শটগান দিয়ে গুলি করা শুরু করে। এটা ছিল তাদের মরণ কামড়। আমরা একটু পর নামাজ পড়বো এমন সময়। তখন ওপেন গোলাগুলি করে। তখন আমরা কিছুটা পিছু হটি। আমি দেখছিলাম কয়েকজন গুলি বিদ্ধ হয়েছে। এসময় এক পর্যায়ে আমিও গুলিবিদ্ধ হই। চার আগস্ট কারওয়ান বাজার মোড়ে পুলিশের গুলিতে আমার চোখে গুলি লাগে গুলি লাগার পর আমার এক চোখ বের হয়ে যায় অন্য চোখের নার্ভ ছিড়ে যায় এবং মনি গলে যায় যার কারনে আমার দু চোখে অন্ধ হয়ে যায় । এখন আমি চোখেই দেখি না।
দৈনিক সংগ্রাম : গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর কি হলো?
সাব্বির আহমেদ : গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আমি রাস্তায় পরে যাই। তারপর সামনে পেছনে কয়েকজন ভাই ছিল। তারা দেখলো আমি রাস্তায় পরে আছি। তারা বলতে লাগলো যে সাব্বির ভাই আহত হয়েছেন্ তাকে হাসপাতাল নিতে হবে। তখন কয়েকজন ধরে আমাকে পিজি হাসপাতালে নিয়ে যায়। মেডিকেলে আমাকে মৃতদের সাথে রাখা হয়। ঢাকা মেডিকেল এবং চক্ষু বিজ্ঞান নিউরো সাইন্স সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ সিএমএস হসপিটালে চিকিৎসা করা হয়।
দৈনিক সংগ্রাম : ওই সময় কি কেউ মারা গেছেন?
সাব্বির আহমেদ : তাৎক্ষনিক জানতে পারিনি। তবে পরবর্তীতে কয়েকজন মারা গেছেন। আমার সাথে এক বড় ভাই ছিলেন। তিনি বলেছেন যে কয়েকজনের লাশ তিনি হাসপাতালে দেখেছেন।
দৈনিক সংগ্রাম : আপনি যখন হাসপাতালে ছিলেন পরিবেশটা কেমন ছিল?
সাব্বির আহমেদ : আমার অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল ছিল। ডাক্তার তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসেছেন। রক্ত প্রয়োজন ছিল। তখন রক্ত ম্যানেজ হয়েছে তাড়াতাড়ি-ই। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েই তারা বললেন নিউরো সায়েন্সে নিয়ে যাওয়ার জন্য। যেহেতু ব্রেনে সমস্যা তাই সেখানে নিয়ে যেতে হবে। ওখানে যাওয়ার পর সিটি স্ক্যান করে দেখে যে গুলি বের হয়ে গেছে। আমার চোখটা বের হয়ে গালের নিচে নেমে আসে। চোখের নিচের হাড়গুলো ভেঙ্গে গেছে। তারপর তারা আমাকে চক্ষুবিজ্ঞানে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে যখন দেখলো যে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে; তার জীবনটা আগে। তারা আবার সাথে সাথে ঢাাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। তবে সেখানে আমার নামে পুলিশবাদী মামলা হয়ে যায়।
দৈনিক সংগ্রাম : আপনি যখন আহত হন তখন পরিবারের লোকজন কিভাবে নিয়েছে।
সাব্বির আহমেদ : আমার বাবাও আন্দোলনে ছিল। তিনি সেদিন শাহবাগের দিকে ছিলেন। তিনি খবর পেয়ে আমার কাছে মেডিকেলে আসেন।
দৈনিক সংগ্রাম : ঢাকা মেডিকেলে থাকা অবস্থায় কি দেখেছেন?
সাব্বির আহমেদ : আমার চোখে তো কিছু দেখিনি। তবে সেদিন শহীদ মিনারে গোলাগুলি হচ্ছিল শব্দ শুনেছি। বাইরে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। ৪ তারিখ রাতে বেশি আওয়াজ পেয়েছি।
দৈনিক সংগ্রাম : বর্তমানে আপনার চোখের অবস্থা কি রকম?
সাব্বির আহমেদ : আমার ডান চোখ অপারেশেন করে ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। ডাক্তার বলেছেন আর ঠিক হবে না। বাম চোখটা একটু নাড়াতে পারি। ডাক্তার বলে দিয়েছেন বাংলাদেশে এর চিকিৎসা শেষ।
দৈনিক সংগ্রাম : আপনার শেষ ইচ্ছা কি ?
সাব্বির আহমেদ : কিন্তু উন্নত মানের চিকিৎসার জন্য আমাকে দেশের বাহিরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু হসপিটালে ডাক্তাররা বোর্ড বসে আমার চোখ ভালো হবে না বলেছে কিন্তু আমরা এখনো চাই যে উন্নত মানের চিকিৎসা দিলে দেশের বাহিরে নিয়ে গেলে হয়তোবা আমার দুটি চোখে আলো আসতেও পারে ।
তাই সকলের কাছে আমার আবদার যাতে আমাকে উন্নতমানের চিকিৎসা দেয়া হয় আমি ফাজেল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলাম আমি আশানুল্লাহ ইউনিভার্সিটি থেকে ডিপ্লোমা কমপ্লিট করি পড়ালেখার পাশাপাশি একটা জব করতাম; যা দিয়ে আমার পরিবার চলতো আমার বাবা-মা বিদ্যা আমার তিন ভাই ওরা আমার ছোট ওরা পড়াশোনা করে আমার ইনকাম দিয়ে। ওরাও চলতো কিন্তু চোখ হারানোর পর আমার চাকরি চলে যায় যার ফলে সব এলোমেলো হয়ে যায় ।
আমার বর্তমান অবস্থা এখন আমি চাই যে আমাকে উন্নত মানের চিকিৎসা দেয়া হোক দেশে বা দেশের বাহিরে আমি যেন একটি চোখের আলো ফিরে পাই এবং আমাকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক । কারণ যেন আমি আমার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারি আমাকে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া হউক। এটাই আমার সরকারের কাছে প্রত্যাশা।