দেবী বিসর্জনে শেষ হলো সনাতন ধর্মীদের ৫ দিনের শারদীয় দুর্গাপূজা। গতকাল দশরথী দুর্গার বিদায় উপলক্ষে নানা আনুষ্ঠানিকতা সারেন বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। গতকাল মণ্ডপে মণ্ডপে ভক্তরা দেবী দুর্গাকে সিঁদুর দেন। খেলেন সিঁদুর খেলা। দুপুরের পর আরতি, শোভাযাত্রা শেষে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়।

দেবীর বিদায়ের দিন সকাল থেকেই ভক্তরা দলে দলে মণ্ডপে জড়ো হন ভক্তরা। সকাল ১০টার দিকে শুরু হয় বিজয়া দশমী বিহিত পূজা। পূজা শেষে ভক্তরা দেবীর দর্পণ বিসর্জন করেন। খামারবাড়ি পূজামণ্ডপের পুরোহিত অবিনাশ চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, প্রথমে আমরা দশমীর বিহিত পূজা করেছি। পূজা শেষে দেবীর দর্পণ বিসর্জন হয়েছে। শাস্ত্রমতে, দেবীর দর্পণ বিসর্জনের মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজা শেষ হয়েছে। মা বিদায় নিয়েছেন। তারপর ভক্তরা অঞ্জলি দিয়েছেন। ভক্তরা মাকে সিঁদুর দেন, মায়ের আশীর্বাদ নেন এবং মাকে বিদায় জানান।

এদিন পূজার পর অঞ্জলি দেওয়া শুরু হয় সকাল সাড়ে ১০টার দিকে। এ সময় ভক্তদের জন্য হাতে হাতে অঞ্জলির ফুল দেওয়া হয়। ফুল হাতে পুরোহিতের সঙ্গে সঙ্গে ভক্তরা মন্ত্র বলেন। মন্ত্র পাঠ শেষে ভক্তরা অঞ্জলির ফুল তুলে দেন। তখন উলুধ্বনি বাজিয়ে মা দুর্গাকে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। পূজামণ্ডপে ভক্তরা আসতে থাকায় পরবর্তী সময় আরও দুবার অঞ্জলি দেওয়া হয়।

ভক্তদের প্রত্যাশা মায়ের আশীর্বাদে সবার জীবনে বয়ে আনবে শান্তি, সুখ আর সমৃদ্ধি। অন্যায়ের অন্ধকার দূর হবে, সত্য ও ন্যায়ের আলো ছড়িয়ে পড়বে সবার মাঝে। বেলা ১১টার দিকে দেবীকে সিঁদুর মেখে দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ভক্তরা সিঁদুর হাতে নিয়ে মঞ্চের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। শঙ্খ বাজিয়ে উলুধ্বনি দিয়ে আরতি দেওয়া হয়। পরে পুরোহিত দেবীর পায়ে সিঁদুর মাখিয়ে দেন এবং প্রণাম করেন। পরে সারিতে দাঁড়ানো ভক্তরা একে একে দেবীকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন।

এ সময় মণ্ডপে পূজার গান বাজানো হয়। দেবীকে সিঁদুর দেওয়া শেষ করে ভক্তরা নিজেদের মধ্যে সিঁদুর খেলা করেন। একে অন্যকে সিঁদুর মাখিয়ে দেন, শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বেলা একটার পর মণ্ডপ থেকে প্রতিমা নিয়ে শোভাযাত্রা করে ঢাকেশ্বরীতে যাওয়া হয়। সেখানে একত্র হয়ে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়।

এ বছর রাজধানীর ২৫৪টি পূজামণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জনের জন্য বুড়িগঙ্গা, তুরাগ ও বালু নদের ১০টি ঘাট নির্ধারণ করা হয়। ঘাটগুলো হলো বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট, নবাববাড়ি ঘাট, লালকুঠি ঘাট, তুরাগের ধউর ঘাট, মিল ব্যারাক ঘাট, পোস্তগোলা শ্মশান ঘাট, আমিনবাজার ব্রিজ ঘাট, বছিলা ব্রিজ ঘাট এবং বালু নদের কয়েতপাড়া ঘাট। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রতিমা বিসর্জন হয়ে থাকে বিনা স্মৃতি স্নান ঘাট, ওয়াইজ ঘাট ও নবাববাড়ি ঘাটে।