হজ্ব পারমিট ছাড়া হজ্ব পালন না করার অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল হজ্ব ব্যবস্থাপনা, হজ্বযাত্রীদের কল্যাণ এবং বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিবেচনায় দেশে ও সৌদিতে অবস্থানকারী বাংলাদেশীদের প্রতি এ অনুরোধ জানানো হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে চলতি হজ¦ মৌসুমে ভিজিট ভিসায় মক্কা কিংবা সে দেশের পবিত্র স্থানগুলোতে অবস্থান না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া হজ¦ বিধিমালা অমান্যকারী ভিজিট ভিসাধারীকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, পরিবহন করা, সংরক্ষিত হজ¦ এলাকায় প্রবেশে সহায়তা করা ও তাদের হোটেল কিংবা বাড়িতে আবাসনের ব্যবস্থা করা থেকে বিরত থাকতেও বাংলাদেশীদের অনুরোধ জানানো হয়।
এ বছর হজ¦যাত্রীদের মক্কায় প্রবেশ সুগম করা, অতিরিক্ত ভিড় নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাপত্তা জোরদার করতে নতুন বিধিমালা জারি করেছে সৌদি সরকার। এ বিধিমালা অনুসারে সে দেশের পবিত্র স্থানগুলোতে কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বৈধ অনুমতিপত্র, মক্কায় নিবন্ধিত বসবাসের প্রমাণপত্র (ইকামা) ও সরকারিভাবে ইস্যু করা হজ¦ পারমিট থাকলেই কেবল মক্কায় প্রবেশ করা যাবে।
আসন্ন হজ¦ মৌসুমে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা দিয়ে সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হজ¦ পারমিট ছাড়া কেউ হজ¦ পালনের চেষ্টা করলেই তাকে সর্বোচ্চ ২০ হাজার সৌদি রিয়াল জরিমানা গুনতে হবে। এ কাজে সহায়তা করলেও রয়েছে এক লাখ রিয়াল পর্যন্ত জরিমানার বিধান। শুধু জরিমানাই নয়, অপরাধ প্রমাণিত হলে সহায়তাকারীর নিজস্ব যানবাহনও আদালতের রায় অনুসারে বাজেয়াপ্ত করা হবে।
সৌদি সরকার আরও জানিয়েছে, যদি কোনও বিদেশী নাগরিক নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করে কিংবা বৈধ অনুমতি ছাড়াই হজ¦ পালনের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং পরবর্তী ১০ বছর তাকে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। জিলকদ মাসের ১ তারিখ (২৯ এপ্রিল) থেকে জিলহজ¦ মাসের ১৪ তারিখ (১০ জুন) পর্যন্ত এই বিধান কার্যকর থাকবে। এই সময়ের মধ্যে হজে¦র অনুমতি ছাড়া মক্কা নগরী বা আশপাশের পবিত্র স্থানগুলোতে কেউ প্রবেশ কিংবা অবস্থান করতে পারবে না। বিশেষ করে যারা ভিজিট ভিসা নিয়ে সৌদি আরবে প্রবেশ করেছেন, তাদের ওপর নজরদারি থাকবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
সুষ্ঠু হজ¦ ব্যবস্থাপনায় আইন-কানুনের কঠোর প্রয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, ‘হজে¦র সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনার স্বার্থে সৌদি সরকার ঘোষিত আইন-কানুন ও বিধিনিষেধ অনুসরণ করা আবশ্যক। সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় জড়িত আছে। প্রায় ৩৫ লাখ বাংলাদেশী সৌদিতে কর্মরত। এ দেশ থেকেই আসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স। দুদেশের বিদ্যমান সম্পর্কের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামানিক বলেন, হজ¦ একটি দ্বিরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা এবং টিম ওয়ার্ক। সৌদি আরব এবং মুসলিম দেশগুলোর তত্ত্বাবধান ও ব্যবস্থাপনায় হজ¦ পরিচালিত হয়। তবে হজ¦ সংক্রান্ত নীতি নির্ধারণী বিষয়ে সৌদি আরব মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। সুপরিকল্পিত কর্মসূচি, আইন-কানুনের যথাযথ প্রয়োগ ও অংশীজনের সহযোগিতা ছাড়া সুশৃঙ্খল হজ¦ ব্যবস্থাপনা সম্ভব নয়।’ সুষ্ঠু হজ¦ ব্যবস্থাপনার স্বার্থে হজ¦যাত্রীদের সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সৌদি সরকারের প্রচলিত আইন কানুন ও বিধি বিধান অনুসরণের ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
এখন পর্যন্ত হজে¦ গেছেন ১৫ হাজার ১৫৪ জন একজনের মৃত্যু
পবিত্র হজ¦ পালনের জন্য সৌদি আরবের উদ্দেশে এখন পর্যন্ত ১৫ হাজার ১৫৪ জন ঢাকা ছেড়েছেন। এরমধ্যে একজন হজ¦যাত্রী মারা গেছেন।
বাংলাদেশ হজ¦ ব্যবস্থাপনা পোর্টাল থেকে জানা গেছে, মৃত হজ¦যাত্রীর নাম খলিলুর রহমান। তার বাড়ি রাজবাড়ীর পাংশায়।
ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের হজ¦ অফিস থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। জানা গেছে, গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মোট ১৫ হাজার ১৫৪ জন হজ¦যাত্রী সৌদি আরবে গমন করেছেন। এরমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসে গিয়েছেন ৬ হাজার ২০২ জন, সৌদী এয়ারলাইনসে ৪ হাজার ৮৫৮ জন এবং ফ্লাই নাস এয়ারলাইনসে গিয়েছেন ৪ হাজার ৯৪ জন।
গত ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে হজ¦ ফ্লাইট। এ পর্যন্ত ৩৭টি ফ্লাইট ঢাকা ত্যাগ করেছে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ফ্লাইট সংখ্যা ১৫টি, সৌদী এয়ারলাইনস পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ১২টি। এ ছাড়া ফ্লাইনাস এয়ারলাইনস পরিচালিত ফ্লাইট সংখ্যা ১০টি।
এবার বাংলাদেশ থেকে হজে¦ যাচ্ছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন। এরমধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ৫ হাজার ২০০ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাচ্ছেন ৮১ হাজার ৯০০ জন।