রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে প্রাণহানির ঘটনায় ৬ দফা দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টায় এই ঘটনার প্রতিবাদে কলেজের গোল চত্বরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের সব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেয় সরকার। এছাড়াও এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর ঘোষণা দেরি করে দেওয়া ইস্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকেও প্রত্যাহার করা হয়। তারপরও সচিবালয়ে ঢুকে ভাঙচুর চালায় একদল শিক্ষার্থী। আর দাবি মেনে নেওয়ার পরেও এ সহিংসতার পেছনে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ইন্ধন রয়েছে বলে জানা গেছে। নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন সচিবালয়ের আন্দোলন অংশ নিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিকে সমর্থন জানিয়ে ছাত্রলীগের সকল নেতা-কর্মীদের সচিবালয় অভিমুখে আন্দোলনে অংশ নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি। এছাড়া আন্দোলনে অংশ নিতে নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেয়া তার একটা অডিও প্রকাশ পেয়েছে।
জানা গেছে , দাবি মেনে নেওয়ায় উত্তরায় মাইলস্টোনের সামনে আন্দোলন শেষে সব শিক্ষার্থী চলে যাচ্ছিল। সেখানে পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করে যুবলীগ সন্ত্রাসী রিয়াদ। পরে ছাত্র-জনতা ধরে ফেলার পর প্রমাণ পায় সে যুবলীগ করতো। পরে তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সন্ত্রীসার বাড়ি ফেনী দাগনভুঞা ২নং রাজাপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডে। তিনি ২নং রাজাপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সহ-সম্পাদক।
এছাড়া সচিবালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ঢুকে যায় ছাত্রলীগ। সেখানে আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে বলা হয় আমরা আবারো শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনবো। এসব বক্তব্য বিভিন্ন গনমাধ্যমে প্রচার হয়। এছাড়া ছাত্রলীগ সন্দেহে একজনকে বিস্ফোরকসহ আটকের খবরও পাওয়া যায়। আন্দোলনে নরসিংদী ছাত্রলীগের নেতা রাফসান আহমেদ রাফি উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া আন্দোলন শিক্ষার্থীদের দাবি করা হলেও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে অনেকে কোনো প্রতিষ্ঠানের ছাত্র তা বলতে পারেনি।
জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীরা যখন আন্দোলন করছিল তখন ছাত্রলীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এক ঘণ্টায় অন্তত ১০টি পোস্ট শেয়ার করা হয়। যেখানে সব পোস্টেই আন্দোলনে ‘উসকানি’ দেওয়া হয়। এছাড়াও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও সহিংসতায় ‘উসকানি’ দিচ্ছেন এবং অংশ নিচ্ছেন, যার বিভিন্ন স্ক্রিনশট ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এদিকে, সচিবালয়ে ঘেরাও করতে আসা আন্দোলনকারী অনেককেই নিজেদের শিক্ষার্থী হিসেবে দাবি করলেও নিজেদের পরিচয় ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম বলতে পারেনি।
এর আগে, শিক্ষা সচিব ও উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে সচিবালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ শুরু করেন রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় পুলিশ তাদের ধাওয়া দিলে কয়েকজন দৌড়ে দূরে সরে যান। এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি নিয়ে রাত ৩টায় সিদ্ধান্তের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করে গাড়ি ভাঙচুর করেছেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের লাঠিপেটায় ছত্রভঙ্গ হয়ে যান তারা। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পক্ষ থেকে যেসব দাবি তোলা হয়েছে তা হলো দুর্ঘটনায় নিহতদের সঠিক নাম ও পরিচয় প্রকাশ করতে হবে। আহতদের নির্ভুল ও পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করতে হবে। ঘটনাস্থলে শিক্ষকদের গায়ে সেনাসদস্যদের ‘হাত তোলার’ অভিযোগে নিঃশর্ত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। নিহত প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পরিবারকে বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিমানবাহিনীর ব্যবহৃত পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ বিমান বাতিল করে নতুন ও নিরাপদ প্লেন চালু করতে হবে। বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণ এলাকা মানবিক ও নিরাপদভাবে পুনর্বিন্যাস করতে হবে। যা ইতোমধ্যে মেনে নিয়েছে সরকার।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রবেশে ঘটেছে। এমন ঘটনা উদঘাটন করে জুলাই রেভুল্যাশনরী এলায়েন্স (জে আর এ) তাদের ফেসবুকে লিখেছেন, দুই জায়গার (মাইলস্টোন ক্যাম্পাস এবং সচিবালয়) আন্দোলনেই ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা অনুপ্রবেশ করেছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এদের পুলিশে দিন আগে। এরা আন্দোলন নস্যাৎ করতে এসেছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় ইমিতিয়াস সিহাব লিখেছেন দোষ ছাত্রদের, তাদের বুঝা উচিত ছিল শত্রুপক্ষ আমাদের ব্যবহার করে ক্ষতি করার চেষ্টা করবে! আজাদ হোসেন লিখেছেন, আরো আছে আমি মাত্র গুলিস্তান থেকে আসলাম। ফয়সাল খান লিখেছেন, ওকে আটক করে পুলিশে দেন। মারুফ হাসান লিখেছেন, আজকে(মঙ্গলবার গন্ডগোলে করার জন্য ঢাকাতে মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগ তাদের সন্ত্রাসীদের জড়ো করেছে সবাই সচেতন হোন। ইউনুস স্যার ঢাকার নিরাপত্তা বাড়ান। শফিউল ইসলাম রনি লিখেছেন, ওদেরকে আটক না করার কারণে আবার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে ওরা। ইমাম হাসান লিখেছেন, সবগুলো গ্রাম থেকে পালিয়ে ঢাকা শহরে অবস্থান করছে। জীবন আনন্দ লিখেছেন, সবাই সাবধান টোকাইলীগ ডুকে পড়ছে’ সব নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্র লীগ ।