পাঁচ বছরের বেশি সময় পর আগামী ৭ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ঢাকায় দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের চতুর্থ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক হওয়া তৃতীয় দেশ হতে যাচ্ছে তুরস্ক। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকায় ভারতের সঙ্গে এবং চলতি বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাংলাদেশ ও তুরস্কের পররাষ্ট্রসচিবেরা রাজনৈতিক পরিসরে সম্পর্ক জোরদার, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়ানো ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাকে অংশীদারত্বে রূপ নেওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন। ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। তুরস্কের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বেরিস একিন্চি। দুই দিনের সফরে ৬ অক্টোবর তার ঢাকায় আসার কথা রয়েছে।

কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, দুই দিনের সফরের প্রথম দিনে তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী একিন্চি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করবেন।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, ওই বৈঠকে অংশ নেওয়ার পর তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

তুরস্কের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত: ফেব্রুয়ারিতে আঙ্কারা সফর করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) নজরুল ইসলাম। তিন দিনের ওই সফরের সময় তিনি তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী বেরিস একিন্চির সঙ্গে বৈঠক করেন। এ ছাড়া তিনি অর্থ, বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বিনিয়োগ সংস্থা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।

এপ্রিলে আনতোলিয়া ডিপ্লোমেসি ফোরামে অংশ নেওয়ার ফাঁকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে দুই দেশের অংশীদারত্বকে ভবিষ্যতে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার বিষয়ে তাঁদের আলোচনা হয়। গত জুলাইতে ঢাকায় আসেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা শিল্প সংস্থার প্রধান হালুক গরগুন। এক দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর আগে তিনি সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক্সে দেওয়া এক পোস্টে জানায়, বাংলাদেশে প্রতিরক্ষা শিল্পের বিকাশে সম্ভাব্য কারিগরি ও কৌশলগত সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে তুরস্ক।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের কৃষি খাতের উত্তরণে তুরস্কের আধুনিক প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে তুরস্ককে নতুন অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি বছর ঢাকা ও আঙ্কারার মধ্যে চারটি উচ্চপর্যায়ের সফর হয়েছে। এরপর আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকটি দুই দেশের অংশীদারত্বের নানা বিষয় আলোচনার জন্য গুরুত্ব পাচ্ছে। বাংলাদেশের কৃষি খাতের উত্তরণে তুরস্কের আধুনিক প্রযুক্তিকে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। জ্বালানির ক্ষেত্রে তুরস্ককে নতুন অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

তারা জানান, তুরস্ক জ্বালানি আমদানি করলেও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আর নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে কাজে লাগিয়ে নতুন প্রযুক্তির জ্বালানির বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন করেছে। পাশাপাশি জ্বালানি শোধনাগারের প্রযুক্তিতেও দেশটি এগিয়ে গেছে। ভবিষ্যতে জ্বালানি খাতে এক দেশ অন্য দেশকে কীভাবে সহায়তা করতে পারে, সেটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

জানা গেছে, ঢাকা সফরে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় জ্বালানি খাতে সহযোগিতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করার কথা রয়েছে তুরস্কের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানান, আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরও ঢাকা-আঙ্কারা সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে রাজনৈতিক পরিসরের পাশাপাশি নানা খাতে সহযোগিতা জোরদার করা নিয়েও আলোচনা হবে। পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়াসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পরিসরে পরিবর্তনশীল নানা ইস্যুতে দুই দেশের অভিন্ন সহযোগিতার বিষয়গুলো উঠে আসবে পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকে।