নারী অধিকার আন্দোলনের সভানেত্রী মমতাজ মাননান বলেছেন, ঈদ মানে আনন্দ। মুসলিমদের জন্য অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কিন্তু পবিত্র রমযান থেকে গাজা ভূখন্ডে জায়নবাদী ইহুদীদের দ্বারা যে ভয়াবহ গণহত্যা চলছে তা ঈদের আনন্দকে বেদনায় পরিণত করেছে। আমরা গভীর সমবেদনার সাথে গাজার মুসলিম ভাই বোনদের স্মরণ করছি।
গতকাল বুধবার নারী অধিকার আন্দোলন কর্তৃক গুলশানে আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী ও ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। তিনি ইসলামে ঈদ উদযাপনের পদ্ধতি, ঈদের সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও মানবিক দিক এবং দীর্ঘদিনের ফিলিস্তিন সংকটের গভীরতা ও এ থেকে উত্তরণে করণীয় কি তার উপর আলোচনা করেন। তিনি এ বিষয়ে মুসলিম বিশ্বের নিরবতা ও নিস্ক্রিয়তা এবং এ প্রেক্ষিতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার বিষয়টির উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- নারী অধিকার আন্দোলনের সহ-সভানেত্রী যথাক্রমে নাঈমা মোয়াযযম, আফিফা মুশতারী, সেক্রেটারি নাজমুন নাহার, জয়েন্ট সেক্রেটারি যথাক্রমে ডা. তাহেরা বেগম, ডঃ শারমীন ইসলাম, বিভাগীয় সেক্রেটারি নূরুন্নাহার নীরু, সৈয়দা শাহীন সুলতানা। আরো উপস্থিত ছিলেন আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সভানেত্রী প্রফেসর শামীমা তাসনিম, সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা বকুল, দেশীকের প্রিন্সিপাল নুরুন্নিসা সিদ্দিকা, ডাঃ হাবিবা চৌধূরী সুইট এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।
সম্মিলিত নারী প্রয়াসে সভানেত্রী প্রফেসর ডঃ শামীমা তাসনিম তার বক্তব্যে হুঁশিয়ারী দিয়ে বলেন, শেষ জমানার মুসলমানদের দুনিয়া প্রীতি এবং মৃত্যু ভয় তাদেরকে কাপুরুষ বানিয়ে দিবে এবং দুশমনদের অন্তর থেকে মুসলমানদের ভয় ভীতি ও প্রভাব প্রতিপত্তি উঠে যাবে। আজ আমরা ফিলিস্তিনে তাই দেখতে পাচ্ছি, আমরা মৃত্যুর কথা ভুলে গিয়েছি এবং দুনিয়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। সুতরাং এই পরিস্থিতিতে আমাদেরকে বেশি বেশি মৃত্যুকে স্মরণ করতে হবে এবং দুনিয়ার চেয়ে আখেরাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
প্রফেসর ডাঃ নাঈমা মোয়াযযম বলেন, যে ব্যক্তি রমযান মাস পেল অথচ আল্লাহর ক্ষমা হাসিল করতে পারলো না তার উপর আল্লাহর লানত। আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে আমরা যেন আল্লাহর লানতের মধ্যে পড়ে দুনিয়া এবং আখেরাতে ধ্বংস হয়ে না যাই। তাই আমাদেরকে রমযান পরবর্তী জীবন আচরণের ক্ষেত্রে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে যাতে করে রমযানের শিক্ষা আমরা বাকি এগারো মাস মেনে চলতে পারি।
নুরুন্নেসা সিদ্দিকা ইসরাইল রাষ্ট্রের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বর্ণনা করে বলেন, মুসলমানদের প্রথম কেবলা ঐতিহাসিক মসজিদুল আকসা আজ জায়নবাদীদের দখলে। মসজিদুল আকসার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের পরীক্ষা করছেন। তবে এ পরীক্ষায় ঈমানদাররাই বিজয়ী হবে। আল্লাহর কাছে দু’আ এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর মাধ্যমে ঈমানের হক আদায় করতে হবে। তিনি বলেন, জুলুমবাজ কখনো টিকে থাকতে পারেনা। অতীতে আল্লাহ বহু নিপিড়ক ও দুর্বিনীত জাতিকে ধ্বংস করেছেন। রাসুল (সা:) এর ভবিষ্যতবানী অনুযায়ী ইসরাইল রাস্ট্রটির পরিণতিও তাই হবে। আর জেরুজালেম থেকেই পুনরায় ইসলামের উত্থান হবে এবং মুসলমানরা বিশ্বে নেতৃত্ব দিবে এ কথা সত্য। তাই মুসলমানদের কুরআন ও হাদিসের ভিত্তিতে এ সকল বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা এবং গবেষণ করে প্রস্তুত থাকার ওপর জোর বক্তব্য রাখেন তিনি।
সম্মিলিত নারী প্রয়াসের সেক্রেটারি ফেরদৌস আরা বকুল ফিলিস্তিনের শিশুদের দুঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরে তাদের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেন ।
নারী অধিকার আন্দোলনের বিভাগীয় দায়িত্বশীলা লেখিকা নূরুন্নাহার নীরু তার বক্তব্যে ঈদ উৎসবের অতীত ও বর্তমান প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, ঈদ শুধু একটি উৎসবই নয়, এটি একটি ইবাদত। তাই ঈদ উৎসবের আয়োজনে কোনপ্রকার শিরক ও বেদাত যেন না হয় তার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এবং পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও ছড়িয়ে দিতে হবে ঈদ উদযাপনের প্রকৃত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। ঈদ শোভাযাত্রায় প্রকৃতি পূজার প্রতীক যাতে না ঢুকতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে বলেও তিনি দৃঢ় মত ব্যক্ত করেন।
বক্তব্য রাখেন মানারাত স্কুলের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষিকা মুশফিকা রহমান, নারী উদ্যোক্তা হাবিবা হাসনাত চৌধুরী, অন্বেষণ স্কুলের সাবেক প্রিন্সিপাল শিউলি খান, বেগম শারমিন সিদ্দিকী প্রমুখ। তারাও ফিলিস্তিনে ইসরাইলের চলমান আগ্রাসনের ভয়াবহতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন নারী অধিকার আন্দোলনের সহ সভানেত্রী আফিফা মুশতারী এবং কুরআন তিলাওয়াত করেন নারী অধিকার আন্দোলনের যুগ্ম সেক্রেটারি ডাঃ তাহেরা বেগম।
সবশেষে নারী অধিকার আন্দোলনের সেক্রেটারি নাজমুন নাহার অনুষ্ঠানটি সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারার জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এবং অংশগ্রহণের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
অতঃপর ফিলিস্তিনের নির্যাতিত অধিবাসী এবং গাজা ভূখন্ডে যারা শাহাদাত বরণ করেছেন ও ২০২৪ এর বিপ্লবে যারা শহিদ হয়েছেন তাঁদের সহ মুসলিম উম্মার ঐক্য ও কল্যাণ কামনা করে এক আবেগঘন দু’আ ও মুনাজাত পরিচালনা করেন বিশিষ্ট সমাজ সেবক ডাক্তার আমেনা বেগম। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।