কোন আসনে একজন প্রার্থী থাকলেও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ থাকছে না। তাকে ‘না’ ভোটের সাথে লড়াই করে বিজয়ী হতে হবে। আর ‘না’ ভোট বিজয়ী হলে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করে সেখানে ভোট করা হবে। এদিকে কোন প্রকার অনিয়ম ও বিশৃংখলার কারণে পুরো আসনের ফলাফল বাতিল করার ক্ষমতাও ফিরিয়ে আনছে ইসি। আর হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচনের পরও তদন্ত করে নির্বাচন কমিশন এমপি পদ বাতিল করতে পারবে।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংস্কারের একগুচ্ছ সুপারিশ চূড়ান্ত করতে মুলতবি বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এ বৈঠক শুরু হয়। চার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ, তাহমিদা আহমদ, মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ ও ইসি সচিব আখতার আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাচন ভবনে মুলতবি কমিশন সভা শেষে ইসি সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে থাকছে না ইভিএম। ‘না’ ভোটের বিধানও ফিরিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ইসি চাইলে ৩০০ আসনের ফল বাতিল করতে পারবে।

ইসি আরপিও সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে জানিয়ে সানাউল্লাহ বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে ৩০০ আসনের ফলাফল বাতিল করতে পারবে। না ভোটের বিধান আনা হয়েছে। যেখানে একজন প্রার্থী থাকবে। বিনা ভোটে কেউ নির্বাচিত হতে পারবে না। ফলাফলে সমান ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে নির্ধারণ হবে না, পুনরায় ভোট হবে। জোটগতভাবে নির্বাচন করলে দলগুলোকে নিজ নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করবে। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে নির্বাচনের পরও তদন্ত করে এমপি পদ বাতিল করতে পারবে কমিশন।

তিনি বলেন, নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে একটি, দুটি কেন্দ্র অথবা পুরো আসনের ফল নির্বাচন কমিশন চাইলে বাতিল করতে পারবে। এ ছাড়া ফলাফল ঘোষণার সময় সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন।

ইসি জানান, এখন থেকে কমিশন যেকোনো নির্বাচনী এলাকার ফল স্থগিত বা বাতিল করার ক্ষমতা রাখবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকরের বিধানও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

তিনি বলেন, জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও)।

বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর ইভিএম ব্যবহার করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছিল। এখন আরপিও থেকে তা বাদ দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইভিএম ব্যবহার হবে না, তাই যাবতীয় বিধান বিলোপ করা হয়েছে আরপিও’র প্রস্তাবিত সংস্কারে। নির্বাচন কর্মকর্তাদের দায়িত্বে অবহেলার শাস্তি সুস্পষ্ট করা হয়েছে। তিন কর্মদিবসের তদন্ত ও ব্যবস্থা ইসিকে জানাতে হবে তিনদিনের মধ্যে।

আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘না’ ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। যদি কোথাও একজন প্রার্থী হয় সেক্ষেত্রে বিনা ভোটে নির্বাচিত হবে না। সার্বিকভাবে ‘না’ ভোট নয়। কোনো আসনে একজন প্রার্থী হলে তাকেও নির্বাচনে যেতে হবে, তাকে ‘না’ ভোটের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে। সেখানে না ভোট বিজিত হলে পুনরায় ভোট হবে,। আবারও ‘না’ ভোট জয়ী তাহলে আর ভোট হবে না। তখন ব্যক্তি প্রার্থী নির্বাচিত হবে।

আরপিও একগুচ্ছ সংস্কার প্রস্তাব চূড়ান্ত হলে আগামী সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, সরকারের সায় পেলে তা সংশোধন অধ্যাদেশ নামে জারি হবে। সেই সঙ্গে ঐকমত্য কশিমনের কোনো সুপারিশ থাকলে তা পরে যুক্ত করা হবে।