ঢাকার উত্তরখান থানার দোবাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা জোবায়ের বেপারী (৪২) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে নির্মমভাবে গুলীবিদ্ধ হয়ে শহীদ হয়েছেন। ২৪ এর ১৯ জুলাই বিকেলে রাজধানীর আজমপুর এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিছিল চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলীতে তিনি প্রাণ হারান।

জোবায়ের বেপারী ১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারি দোবাদিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আবদুস ছুবুর বেপারী (৭৬) একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং মাতা আমেলা বেগম (৫৫) গৃহিণী। তিনি এইচএসসি পাশ করার পর একটি গাড়ি কিনে পরিবহন ব্যবসা শুরু করেন এবং পৈতৃক বাড়িতেই পরিবারসহ বসবাস করতেন। তার স্ত্রী ও দুই পুত্রসন্তান রয়েছেÑরাফিউল বেপারী জায়ান ও রাইয়ান বেপারী মেহরাব, যারা যথাক্রমে নার্সারি ও প্লে-গ্রুপে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়াশোনা করছে।

১৯ জুলাই সকালে আন্দোলনে যোগ দিতে তিনি নিজ বাড়ি থেকে আজমপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং আজমপুর জামে মসজিদে জুমার নামায আদায় করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, নামাযের পর আজমপুর বিএনএস সেন্টারের পাশে অবস্থানকালে আন্দোলন উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ছাত্রজনতা যখন শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল শুরু করে, তখন আগে থেকে প্রস্তুত থাকা পুলিশ এবং যুবলীগের সশস্ত্র সদস্যরা আন্দোলনকারীদের উপর টিয়ারশেল, রাবার বুলেট এবং ছোড়রা গুলী নিক্ষেপ করে।

বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে জোবায়ের বেপারী পেছন দিক থেকে গুলীবিদ্ধ হন। গুলী তার পিঠ ভেদ করে বুক দিয়ে বেরিয়ে যায়। আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে কুয়েত-মৈত্রী হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পরদিন শনিবার (২০ জুলাই) সকাল ৯টায় দোবাদিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে জানাযা অনুষ্ঠিত হয় এবং পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

শহীদের প্রতিবেশী বিল্লাল হোসেন বলেন, জোবায়ের ভাই ছিলেন অত্যন্ত নম্র, ভদ্র এবং সহানুভূতিশীল। গরিব-অসহায়দের পাশে দাঁড়াতেন। কারও কষ্ট দেখলে চুপ থাকতেন না। কর্জে হাসানা দিয়ে অনেককে সাহায্য করেছেন। এমন একজন পরোপকারী মানুষকে হারিয়ে আমরা শোকাহত।

শহীদ জোবায়ের বেপারীর এ আত্মত্যাগ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ইতিহাসে এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।