৭ জুন দেশবাসী উদযাপন করবে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে রাজধানী ছাড়ছে অসংখ্য মানুষ। ঈদের আগে গতকাল বুধবার ছিল শেষ কর্মদিবস। আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে র্দীর্ঘ ছুটি। বাস, ট্রেন ষ্টেশনের চাইতে ভিড় কম দেখা গেছে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। বিশেষ করে ভোর থেকেই স্টেশনজুড়ে যাত্রীদের সরব উপস্থিতি ঈদযাত্রার সেই চিরচেনা দৃশ্যকে ফিরিয়ে আনে।

কমলাপুর স্টেশনে প্রবেশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে আলাদা গেট। সেখানে রেলওয়ের নির্ধারিত কর্মকর্তারা টিকিট যাচাই করে যাত্রীদের প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছেন। টিকিট ছাড়া কাউকে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপর উপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে স্টেশনে। স্টেশনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে কেউ ট্রেনের অপেক্ষায়, কেউবা আগেভাগেই নির্ধারিত সিটে বসে রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকার কারণে বেশিরভাগই মানুষ ছাড়ছে ঢাকা। নি¤œআয়ের মানুষ থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীসব শ্রেণি-পেশার মানুষ গ্রামের বাড়ি ফিরছেন। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে সকাল ১০টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত মোট ১৮টি ট্রেন গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে পাঁচটি কমিউটার ট্রেন ও ১৩টি আন্তঃনগর ট্রেন।

যাত্রীরা জানান , ঈদে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দই আলাদা। অনেকেই দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরছেন। অনেককেই স্ত্রী, সন্তান ও মা-বাবাকে নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।

মন্ত্রণালয়ে চাকরি করেন আনোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, এবারের ঈদে লম্বা ছুটি থাকার কারণে পরিবার নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। স্টেশনে আসতে রাস্তা অন্য সময়ের চেয়ে অনেকটা ফাঁকা মনে হয়েছে। আরেক গ্রামমুখো যাত্রী মনির হোসেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। তিনি বলেন, অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছি। অন্য সময়ের চেয়ে এবারের ঈদ আনন্দটা বেশি হবে, কারণ এবার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে নিয়েই বাড়ি যাচ্ছি। টিকিট অনলাইনে বিক্রির কারণে স্টেশনের কাউন্টারগুলো অনেকটাই ফাঁকা দেখা গেছে। এতে ভোগান্তিও কমেছে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে ,ভিড় বাড়ছে কমলাপুর রেলস্টেশনে। গত কয়েক দিনের তুলনায় বুধবার সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে। তবে ভিড় বাড়লেও ভোগান্তি ছাড়াই যাত্রীরা ঈদযাত্রা শুরু করতে পারছেন। এজন্য স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা। অন্যদিকে ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে তৎপর রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ।

দেখা যায়, স্টেশনে প্রবেশের জন্য বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে লাইন তৈরি করা হয়েছে। বিনা টিকিটের যাত্রীরা টিকিট প্রদর্শন না করে প্রথম ধাপ পার হতে পারছেন না। এরপর দ্বিতীয় ধাপে আবারও টিকিট যাচাই করা হচ্ছে। সবশেষ প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের আগে পুনরায় টিকিট প্রদর্শন করে যাত্রীদের প্রবেশ করতে হচ্ছে। এছাড়া চুরি-ছিনতাইসহ যে কোনো অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে তৎপর থাকতে দেখা গেছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্বিঘœ ও নিরাপদ ঈদযাত্রায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

এবার সময়মতো স্টেশন থেকে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। তারা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা, বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধসহ নানান উদ্যোগের ফলে এবার ঈদযাত্রা স্বস্তির হচ্ছে।

দেওয়ানগঞ্জের যাত্রী উম্মে জাহান বলেন, তিস্তা ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট কেটেছি। অনেকদিন পরে বাড়ি যাচ্ছি। পরিবারের সঙ্গে ঈদ কাটাবো, এটাই অনেক আনন্দের।

জামালপুরের যাত্রী মোবারক হোসেন বলেন, এবার স্টেশনের ব্যবস্থাপনা ভালো। টিকিট ছাড়া যাত্রীরা স্টেশনে ঢুকতে পারছে না, এটা ভালো উদ্যোগ। ট্রেনও সময়মতো ছাড়ছে।

ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. সাজেদুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। তিন স্তরের টিকিট চেকিং ব্যবস্থা করা হয়েছে। মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে যেন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে। ঈদযাত্রা এখন পর্যন্ত স্বস্তির।

এদিকে রাজধানীর গাবতলীতে বাস কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে। যাত্রীদেও অনেকের অভিযোগ, লোকাল বাসগুলোয় বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

রাজধানীতে রিকশা চালান রকি। তিনি রংপুর যাবেন লোকাল পরিবহনে। তার কাছে বাসভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৯০০ টাকা। অথচ বছরের অন্যান্য সময়ে ৫৫০ টাকায় যাওয়া যেত। রকি বলেন, ‘আমরা যারা নি¤œআয়ের মানুষ তারা ভালো পরিবহনে যেতে পারি না। এ কারণে লোকাল পরিবহনকে বেছে নেই আমরা। এখন ভালো পরিবহনের মতোই টাকা চাচ্ছেন চালক। তাহলে কীভাবে পরিবার নিয়ে গ্রামে ঈদ করতে যাবো।

ফেরদৌস আহমেদ নামে এক যাত্রী নাটোর যাবেন। অন্যান্য দিনের লোকাল পরিবহনের ভাড়া ২৫০ টাকা হলেও এখন চাওয়া হচ্ছে ৫০০ টাকা। ফেরদৌস বলেন, ‘আগের মতোই যদি সব কিছুতে সিন্ডিকেট চলে তাহলে গরিবের ঈদ থাকে না, কোন আনন্দও থাকে না। আমরা সরকারের কাছে আবেদন জানাই এই সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া হোক, ন্যায্যা ভাড়ায় সবাই গ্রামে যেন ঈদ করতে পারে সে ব্যবস্থা করা হোক।’

লোকাল পরিবহন সেলফির হেলপার জয়নাল বলেন, ‘এখন গাবতলী থেকে সব বাস যাত্রী নিয়ে যায়, তবে আসার সময় খালি আসে। এ কারণে কিছুটা বেশি রাখা হয়। তবে সেটা আহামরি না। আমরা কোন সিন্ডিকেটের অধীনে না। যাত্রীর কাছ থেকে দাবি নয় চেয়ে ভাড়া নিচ্ছি। তারাও (যাত্রী) খুশি হয়ে বেশি দেন।

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে উত্তরাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা বুধবার শুরু থেকেই ছিল স্বস্তিদায়ক। যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে চোখে পড়ার মতো, তবে গাজীপুর অংশে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহএই দুই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক ও স্বস্তিদায়ক।

প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে গাজীপুরের শিল্প-কারখানাগুলোতে কর্মরত মানুষ কর্মস্থল ছাড়তে শুরু করেছেন। ১০ দিনের ছুটি উপলক্ষ্যে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে গাজীপুর মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। পুলিশ তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের লক্ষ্যমানুষ যাতে যানজট ও অন্যান্য ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পারে।

শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, গাজীপুরে ২১৭৬টি নিবন্ধিত কারখানার মধ্যে ১১৫৪টি তৈরি পোশাক কারখানা। লক্ষাধিক শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করেন। ঈদের যাত্রা স্বস্তিদায়ক রাখতে তিন দিনে এসব কারখানায় ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ১০ শতাংশ, আজ ৪০ শতাংশ এবং বৃহস্পতিবার বাকি ৫০ শতাংশ কারখানায় ছুটি দেওয়া হবে। ফলে প্রথম দিনের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে তেমন চাপ পড়েনি।

সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের আগে বুধবার শেষ কর্মদিবস। ফলে বিকাল থেকে দুই মহাসড়কে যাত্রীদের চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে ।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাত জেলার মানুষ রাজধানীতে যাতায়াত করেন। ঈদযাত্রায় লক্ষাধিক মানুষ এ দুটো সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরবেন।