ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস স্থাপনে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সংস্থাটির চুক্তি সই হয়েছে। বাংলাদেশে মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস স্থাপনে সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনের কার্যালয় চালু করার বিষয়টি নিশ্চিত হলো। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তর এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার এই সমঝোতা স্মারক সই হয়।

জেনেভা থেকে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম ও জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ঢাকায় তিন বছর জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস স্থাপন করা হবে। এদিকে গত বছরের আগস্ট থেকে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরের জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থান চলাকালে সহিংস দমন-পীড়ন নিয়ে বিস্তৃত অনুসন্ধান চালিয়ে ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে জাতিসংঘ।

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, এই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের মাধ্যমে দেশের মানবাধিকারের প্রতি অঙ্গীকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পাঠানো হয়েছে, যা উত্তরণের ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে। এটি আমার অফিসকে আমাদের তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদনে প্রদত্ত সুপারিশ বাস্তবায়নে আরও ভালোভাবে সহায়তা করতে সক্ষম করবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ যে মৌলিক সংস্কারগুলোতে এগিয়ে নিচ্ছে তাতে আমাদের দক্ষতা এবং সহায়তার মাধ্যমে সরকার, নাগরিক সমাজ এবং অন্যান্যদের সঙ্গে সরাসরি মাঠে জড়িত হতে সক্ষম করবে।

এক বিবৃতিতে ভলকার তুর্ক আরও বলেন, এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষার প্রতিশ্রুতির একটি জোরালো বার্তা দেওয়া হলো। এটি আমাদের মিশনকে বাংলাদেশ সরকার, নাগরিক সমাজ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে যৌথভাবে সরাসরি মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে সাহায্য করবে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের অফিস জানায়, ঢাকার নতুন মিশনটি দেশের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার প্রতিশ্রুতি পূরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে প্রশিক্ষণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেবে। পাশাপাশি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের কর্মীদের সক্ষমতা বাড়ানোর কাজ করবে। এদিকে বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশন খোলার বিষয়ে রাজনৈতিক মহলে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। অনেক রাজনৈতিক দল আপত্তিও জানিয়েছিল। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখানে অফিস খোলা হলে বাংলাদেশের মানবাধিকার আরও সুরক্ষিত হবে।

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ঢাকায় তিন বছরের জন্য জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের একটি অফিস স্থাপনের বিষয়ে চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে গত ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদ জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনের একটি অফিস ঢাকায় স্থাপনের প্রস্তাবের বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দেয়। এ কার্যালয় চালু হলে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করতে পারবে জাতিসংঘ। একইসঙ্গে, মানবাধিকার বিষয়ক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি পূরণে সরকার ও নাগরিক সমাজের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করবে জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন।