অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে যোগ দিতে গতকাল রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সফরসূচি অনুযায়ী, তিনি ২২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা একাধিক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেবেন এবং গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
প্রধান উপদেষ্টা তাঁর ভাষণে বিগত এক বছরে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারমূলক উদ্যোগ, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রত্যাশা এবং ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের দৃঢ় অঙ্গীকার বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরবেন। এবার উচ্চপর্যায়ের সভার মধ্য দিয়ে ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ৮০তম বার্ষিকী উদযাপনের অনুষ্ঠান শুরু হবে।
এ সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে চারজন রাজনৈতিক নেতা থাকছেন। তারা হলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে ‘হাই লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনোরিটিস ইন মিয়ানমার’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা হবে। রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এমন একটি উচ্চ পর্যায়ের সভার আয়োজন এবারই প্রথম।
এই উচ্চ পর্যায়ের সভা থেকে যেন রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের একটি কার্যকর পরিকল্পনা উঠে আসে, সে জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে গত মাসে কক্সবাজারে একটি অংশীদার সভা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক ইউনূস গতবছর জাতিসংঘে যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন-তার প্রেক্ষিতে এবার এই সম্মেলন হতে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে সম্মেলন আয়োজনের জন্য প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া প্রস্তাব সদস্য রাষ্ট্রগুলো সর্বসম্মতিক্রমে সমর্থন দেয়।
এছাড়া প্রধান উপদেষ্টা ২৫ সেপ্টেম্বর যুবকদের জন্য কর্মপরিকল্পনার ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও অংশ নেবেন। বাংলাদেশ শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার আলোচনায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং শান্তিরক্ষী রাষ্ট্র হিসেবে দেশের অবদান তুলে ধরবে।
অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ভাষণে বিশ্বের নানা জরুরি ইস্যুও তুলে ধরবেন । এর মধ্যে রয়েছে-শান্তিরক্ষা, জলবায়ু পরিবর্তন ও জলবায়ু ন্যায়বিচার, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা, অবৈধ অর্থপাচার, নিরাপদ অভিবাসন ও অভিবাসী অধিকার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগে টেকসই প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিনে যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা। সফরকালে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেবেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনও একাধিক বহুপাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এর মধ্যে রয়েছে-কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সভা, পিসবিল্ডিং কমিশন মন্ত্রীপর্যায়ের বৈঠক, ‘জি-৭৭ ও চীন’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক, নারী-শান্তি ও নিরাপত্তা ফোকাল পয়েন্ট নেটওয়ার্ক, ওআইসি বার্ষিক সমন্বয় সভা, বিমসটেক, সিকা এবং এলডিসি মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক। প্রধান উপদেষ্টা ২ অক্টোবর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
ড. ইউনূসের সফরে জামায়াত ও এনসিপির আরও ২ জন
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী হচ্ছেন জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপির আরও দুই নেতা। তারা হলেন- জামায়াতের সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামীর ছেলে ড. নকিবুর রহমান তারেক এবং এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনিম জারা।
গতকাল রোববার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তার সঙ্গে যান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের এবং এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।