বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেছেন, সীমান্তবর্তী দুই হাজারের বেশি পূজাম-পের নিরাপত্তার পাশাপাশি রাজধানীসহ সারাদেশের বড় পূজাম-পগুলোর নিরাপত্তায়ও বিজিবি কাজ করছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির ও রমনা কালী মন্দিরে দুর্গাপূজার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন। পরিদর্শনকালে ঢাকেশ্বরী ও রমনা কালী মন্দিরের সর্বজনীন পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিজিবি মহাপরিচালক।

পরে সাংবাদিকদের বিজিবি মহাপরিচালক বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমান সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী বিজিবি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে। সীমান্তবর্তী দুই হাজারের বেশি পূজাম-পের নিরাপত্তার পাশাপাশি রাজধানীসহ সারাদেশের বড় পূজাম-পগুলোর নিরাপত্তায়ও বিজিবি কাজ করছে। আগামী দিনগুলোতেও সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। এ সময় বিজিবি সদর দপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন অ্যান্ড ট্রেনিং), ঢাকা সেক্টর কমান্ডারসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বিজিবি জানায়, গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ৪৩০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তারা ২৪টি বেইজ ক্যাম্প স্থাপন করে ২ হাজার ৮৭০টি পূজাম-পের সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছেন। এরমধ্যে সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে ১ হাজার ৪১৭টি পূজাম-প, আর সীমান্তের বাইরে রয়েছে ১ হাজার ৪৫৩টি পূজাম-প। পূজা উপলক্ষে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধে সীমান্ত এলাকায় বিশেষ টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করেছে বিজিবি। পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ের মাধ্যমে সারাদেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।

এদিকে বৃহস্পতিবার শারদীয় দুর্গাপূজার বিসর্জনকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে বাড়তি পুলিশ ফোর্স ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর বনানী পূজাম-পের নিরাপত্তা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। বিসর্জন উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যেখানে বিসর্জন হবে সেখানে এরই মধ্যে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অধিকসংখ্যক পুলিশ ফোর্স ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিয়োজিত থাকবে। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার মতো আশঙ্কা নেই।

নগরবাসীকে তিনি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, যারা সাঁতার জানে না তাদের নৌকায় না ওঠা ভালো। এছাড়া যারা সাঁতার জানে তারাও লাইফ জ্যাকেট পরে নৌকায় উঠবেন। যাতে কোনো বিপদ-আপদ না ঘটে। ঢাকায় ২৫৪ ম-পে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে উল্লেখ করে ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, আজ নবমী, আগামীকাল বিসর্জন। এখন পর্যন্ত কোনো জায়গায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা প্রায় এক মাস আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছি, যাতে সুন্দরভাবে, উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ সদরদপ্তর ও ডিএমপি সদরদপ্তরে নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বৈঠক হয়। ম-পে ম-পে অনেক ভক্তরা উপস্থিত হয়েছেন তারা অনেক খুশি। আগামী দিনেও একই পরিবেশে উৎসবমুখর পরিবেশে বিসর্জন অনুষ্ঠিত হবে, যোগ করেন তিনি। ডিএমপি কমিশনার বলেন, এ দেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ভাই-বোনের মতো একত্রে বসবাস করে আসছি। সম্প্রীতি যেন নষ্ট না হয় এবং পরবর্তী প্রজন্ম যেন নষ্ট না করে সেদিকে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে। পরিদর্শনকালে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলামসহ ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সতর্ক অবস্থানে থাকবে কোস্টগার্ড : বিজয়া দশমীর দিন নদীপথে প্রতিমা বিসর্জনের স্থানগুলোতে দুর্ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে থাকবে কোস্টগার্ডসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। গতকাল বুধবার সকালে নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম পূজাম-প পরিদর্শন শেষে ব্রিফিংকালে কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. জিয়াউল হক একথা বলেন। এ সময় কোস্টগার্ডের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক বলেন, ঢাকা, চট্রগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোর মন্দির ও পূজামন্ডপের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে কোস্টগার্ড। প্রতিমা বিসর্জনের স্থানগুলোতে সম্ভাব্য দুর্ঘটনা মোকাবিলায় আমাদের বিশেষ ডুবুরি দল সর্বদা প্রস্তুত আছে। তিনি বলেন, বিসর্জনের সময় নৌকায় যাতে অতিরিক্ত লোক না উঠানো হয়। যারা সাঁতার জানে না, তাদেরকে নদীতে না নামার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, দুর্ঘটনা এড়াতে আমাদের জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম ও সার্বক্ষণিক টহল অব্যাহত রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। বিজয়া দশমী পর্যন্ত ধর্মীয় উৎসবটি শান্তিপূর্ণ, প্রাণবন্ত, নিরাপদে ও উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।