রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে। এ দুর্ঘটনায় রাজধানীর সাতটি হাসপাতালে এখনো চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৫০ জন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বরাতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ১৫ জন, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ১৫ জন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন, লুবনা জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারে একজন (অজ্ঞাতনামা), এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। কারও লাশ হাসপাতালে নেওয়া হয়, আবার কেউ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
সর্বশেষ শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাকিন নামে এক শিক্ষার্থী। মাকিনের বাড়ি গাজীপুর জেলা সদরের কোনাপাড়া এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মোহাম্মদ হোসাইনের ছেলে। এর আগে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে একই হাসপাতালের ফিমেল হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এফএইচডিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় মাইলস্টোনের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়মান (১০)। প্রেস উইং আরও জানায়, দুর্ঘটনায় প্রায় দেড় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। এর মধ্যে অনেকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫০ জন। এর মধ্যে ৪০ জনই আছেন জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। বাকিদের মধ্যে আটজন সিএমএইচে এবং একজন করে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন।গত ২১ জুলাই সকালে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনের ওপর বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার সময় প্রতিষ্ঠানটির ক্লাসে উপস্থিত ছিলেন বহু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক। এ ঘটনায় দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
৫ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন: মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখনও ৫ জনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাদেরকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ভর্তি রাখা হয়েছে। ঘটনাটিতে শারীরিক উন্নতি হওয়ায় শনিবার (আজ) বেশ কয়েকজনকে ছাড়পত্র দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে সাংবাদিক সম্মেলনে এসব কথা বলেন, ইন্সিটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, এই ঘটনায় পরপর দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। এখন ৪০ জন ভর্তি রয়েছে। এদের মধ্যে ৫ জনের ক্রিটিক্যাল অবস্থা। তাদেরকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। এদের চাইতে একটু কম গুরুতর অর্থাৎ সিপিআর ক্যাটাগরিতে রয়েছে ১০ জন। ইন্টারমিডিয়েট ক্যাটাগরিতে পোস্ট অপারেটিভ রয়েছে আরও ১০ জন এবং ক্যাবিনে রয়েছে ১৫ জন।
পরিচালক বলেন, যে কয়জনকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাদের ভিতর থেকে দুই জনের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। যারা নিজে নিজে শ্বাস নিতে পারছে। এই ৪০ জন রোগীর মধ্যে আগামীকাল শনিবার ৪-৫ জন রোগীকে আমরা ছুটি দিতে পারব। ডা. নাসির বলেন, আজ সিঙ্গাপুর, চীন ও ভারতের চিকিৎসক দল আমাদের সাথে এই সকল রোগীদের বিষয়ে মিটিং বসেছিলেন। উনারাও রোগীদের দেখেছেন।
এদিকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের রুহের মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনায় দেশের সব মসজিদে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বাদ জুমা বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় সুবিধাজনক সময়ে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। জুমার নামাজের পরে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ অন্যান্য মসজিদে নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও আহত ব্যক্তিদের সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হয়। শোকাহত পরিবারদের জন্যও দোয়া করা হয়। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সারা দেশের মসজিদ ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়। উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি ইস্যু করে ধর্ম মন্ত্রণালয়।