পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। গতকাল শনিবার দুপুর ২টার পরে পাকিস্তানের বিশেষ একটি ফ্লাইটে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্রসচিব আসাদ আলম সিয়াম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ এক কর্মকর্তা দৈনিক সংগ্রামকে এ তথ্য জানান। ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের নতুন হাইকমিশনার ইমরান হায়দারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এ বছরের ২৭ এপ্রিল ইসহাক দারের ঢাকায় আসার কথা ছিল। তবে ভারতের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে পাক-ভারত উত্তেজনা দেখা দিলে দারের সফর স্থগিত করে ইসলামাবাদ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রায় ১৩ বছর পর কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে এলেন, যা পাকিস্তান-বাংলাদেশ সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি বাংলাদেশের নেতাদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করবেন বলেও উল্লেখ করা হয় এতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দারের দ্বিপক্ষীয় এই সফরে সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্তরে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতে গুরুত্ব দেবে ইসলামাবাদ। অন্যদিকে, ঢাকার চাওয়া সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। এই সফরে দুই দেশের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের কথা রয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা দৈনিক সংগ্রামকে জানিয়েছেন, সফরের দ্বিতীয় দিন আজ রোববার পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মূল বৈঠকটি হবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে। ওইদিন দুই মন্ত্রী শুরুতে একান্তে এবং পরে প্রতিনিধি পর্যায়ে বৈঠক করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানা গেছে, তৌহিদ-দার বৈঠকে ব্যবসা, বিনিয়োগ, সংযুক্তি, কৃষিসহ নানা পর্যায়ে দুই দেশের লোকজনের চলাচল সুগম করাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় আলোচনায় থাকবে। পররাষ্ট্রসচিবদের বৈঠকের ধারাবাহিকতায় এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনায় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দেবে বাংলাদেশ। সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের সম্পর্ক যেখানে এসেছে, তা এগিয়ে নিতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সুরাহা জরুরি।

দুই দেশের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও অভিন্ন স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক অমীমাংসিত তিন ঐতিহাসিক ইস্যুকে বাদ দিয়ে হবে না। অমীমাংসিত বিষয়গুলো হলো একাত্তরের গণহত্যার জন্য পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন ও অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা দেওয়া।

বৈঠক শেষে দুই দেশের মধ্যে সরকারি ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা বিলোপ চুক্তি হতে পারে। তাছাড়া যেসব চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, সেগুলো হলো-দুদেশের অফিসিয়াল ও কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি চুক্তি। দুদেশের বাণিজ্যবিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন, সংস্কৃতি বিনিময়, দুদেশের মধ্যে ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সহযোগিতা, দুই রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সঙ্গে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (আইপিআরআই) মধ্যে সহযোগিতা বিষয়ে সমঝোতা সই। আজ রোববার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন ইসহাক দার।

প্রসঙ্গত, ২০১২ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত ডি-৮ সম্মেলনে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন। ১০ বছরের ব্যবধানে ২০২২ সালের জুলাইয়ে হিনা রাব্বানির আবার ডি-৮ মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দিতে ঢাকায় আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তিনি তখন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি হিনা ঢাকায় আসেননি। ২০১২ সালের পর পাকিস্তানের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের সফর সামনে রেখে গত ১৬-১৭ এপ্রিল ঢাকা সফর করেন দেশটির পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ। সে সময় দুদেশের মধ্যে পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এদিকে পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান ২০ আগস্ট থেকে চার দিনের সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।