সংসদ নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে যে দূরত্ব ছিল, তা লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বৈঠকে মিটে গেছে বলে মন্তব্য করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। এর মধ্যে অন্যতম একটা এজেন্ডা ছিল ইশরাক হোসেনের মেয়র পদ নিয়ে। লন্ডর বৈঠকের পর বিষয়টি মিমাংসা হয়ে গেছে বলা হলেও কার্যত সেটি হয়নি। বৈঠকের পর ইশরাক হোসেন নিজেকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেয় নগর ভবনে বৈঠক করেছেন। সম্প্রতি এ নিয়ে ফের শুরু হয়েছে বাক- বিতন্ডা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আর বসে থাকার সময় নেই। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। এভাবে নাগরিকদের ভোগান্তিতে রাখা যাবে না।

সূত্র মতে, লন্ডনে যখন ফলপ্রসু বৈঠকের কথা বলা হচ্ছিল, তখনও ইশরাক হোসেনের আন্দোলন চলমান ছিল। এ আন্দোলন নিয়ে পরবর্তীতে নেতারা পক্ষে ও বিপক্ষে মত দেন। তবে বেশির ভাগ নেতা মনে করেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ইস্যুতে ফলপ্রসূ বৈঠকের পর ইশরাক হোসেনের এই আন্দোলন থেকে সরে যাওয়া উচিত, আন্দোলন বন্ধ করা উচিত। জানা গেছে, সেই বৈঠকের পর ইশরাক হোসেনকে গুলশান কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। বিএনপি হাইকমান্ডের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। জানা গেছে, সেখানে বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টার সাথে একটি ফলপ্রসু বৈঠকের পর ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আন্দোলন চলতে থাকলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হতে পারে। তাছাড়া দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তাই সব দিক বিবেচনায় আন্দোলন থেকে এখন ইশরাকের সরে যাওয়া উচিত। তবে বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গেছে।

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের পদে বসানো হবে কি না, এ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। দিন দিন জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। ইশরাক সমর্থকদের লাগাতার অবরোধে নগর ভবনে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। আইন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, অ্যালোকেশন অব বিজনেস অনুযায়ী ইশরাকের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত দেওয়ার সুযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে একটি টিম কাজ করছে। এটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই হুট করে মতামত দেওয়া যাবে না। আমরা এ-সংক্রান্ত আইনগুলো পর্যালোচনা করছি। এদিকে আইন মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করাটা ভুল হয়েছে। এখন সরকার তাকে মেয়র হিসেবে শপথ নিয়ে পদে বসানোর মতো ভুল করতে চায় না। এ জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে কোনো মতামত দেওয়া হবে না।

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস। গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিস্থিতিতে গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল আগের ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন। ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করা হলেও শপথ না হওয়ায় মেয়রের পদে বসতে পারছেন না তিনি। সিটি করপোরেশনের মেয়রদের প্রধানমন্ত্রী (প্রধান উপদেষ্টা) শপথ পড়ান। ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট জারির আগে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চেয়েছিল নির্বাচন কমিশন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সেই মতামত না পেয়ে ইশরাকের নামে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।

মেয়র হিসেবে ইশরাকের শপথ নিয়ে রাখঢাক না রেখে বক্তব্য দিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। বিএনপি নেতা ইশরাকও পাল্টা জবাব দিয়েছেন। গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে মন্তব্য করে আসিফ মাহমুদ সম্প্রতি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ না হওয়ার পেছনে ১০টি জটিলতার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। এসব জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয় বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা। এছাড়া সম্প্রতি গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইস্যুতে স্থানীয় সরকার বিভাগ কোনো আইন ভঙ্গ করেনি। বিষয়টি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গেজেটের মেয়াদ এবং পরবর্তী সময়ে সিটি করপোরেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় সরকার বিভাগের শপথ দেওয়ার কোনো আইনি সুযোগ নেই।

আসিফের সুরে কথা বলেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। ইশরাকের উদ্দেশে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, যে নির্বাচন অবৈধ, সেই নির্বাচনের মেয়র আমি কীভাবে হতে চাই? সেটা কীভাবে বৈধ হয়? তাহলে তো সেই নির্বাচনকে আমি বৈধতা দিয়ে দিচ্ছি।

অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েক ব্যক্তি প্রসঙ্গে ইশরাক বলেছেন, সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কী ভূমিকা পালন করবে, তা ক্লিনকাট বুঝিয়ে দিল। যারা নিরপেক্ষতা বিসর্জন দিয়ে একটি দলের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন, অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ দাবি করেছেন তিনি। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে ইশরাক হোসেন লিখেছেন, মেয়র ফেওর কিছু না। অন্তর্বর্তী সরকারের কতিপয় ব্যক্তির অন্তরে ক্ষমতার লোভ ও এটি চিরস্থায়ী করার কুৎসিত সত্যটা বের করে আনাটাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। অনেক সমালোচনা মাথা পেতে নিয়েছি, পিতা-মাতা তুলে গালিগালাজও চুপ করে সহ্য করে গিয়েছি। কারণ একটাই, এদের চেহারা উন্মোচন করতে হবে গণতন্ত্রের স্বার্থে, জনগণের ভোটের অধিকারের স্বার্থে। কোনো কথা চলবে না, যারা নিরপেক্ষতা শুধু বিসর্জন দিয়েছে, তা নয় বরং একটি দলের প্রতিনিধির কাজ করেছে, তাদের অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। ইশরাক বলেন, শুধু নগর ভবনের এই অনুষ্ঠান নয়, যেকোনো অনুষ্ঠানে আমাকে আমন্ত্রণ জানালে আয়োজকেরা ব্যানারে আমাকে মেয়র হিসেবে লেখেন। বিষয়টি আমার নয় ‘জনগণের দাবি’।

গত ১৬ জুন ‘ মেয়র’ পরিচয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করার পর এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। এ বিষয়ে ইশরাক বলেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে এটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। যারা বিষয়টি নিয়ে কথা তোলার চেষ্টা করছেন তাদের বলব, তারা যেন নিজেদের জ্ঞান আরেকটু পরিমার্জিত করে সমৃদ্ধ করে কথা বলেন। কারণ নির্বাচন কমিশন যে গেজেট প্রকাশ করেছে, সেখানে স্পষ্টভাবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে আমার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। এ সংকট সমাধানে মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর অনুমতি দিতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইশরাক। নাহলে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ পড়ানোর দাবিতে চলমান আন্দোলনে এক মাসেরও অধিককাল অচল নগর ভবন। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও ইশরাক হোসেনের পাল্টাপাল্টি অবস্থানে জটিলতা কমছেই না। এমন অবস্থায় চলমান আন্দোলন থেকে ইশরাক হোসেনের সরে যাওয়া উচিত বলে মনে করে তার দল বিএনপি। বিএনপি মনে করে, এখন আর আন্দোলন চললে সরকারের কাছে ভুল বার্তা যাবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে লন্ডনে ফলপ্রসূ বৈঠকের পর আমরা এখন আর এই আন্দোলনের পক্ষে না। এতে ইশরাকের যেমন ইমেজ ক্ষুন্ন হচ্ছে, তেমনি বিএনপিরও ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। বিএনপির লক্ষ্য এখন জাতীয় নির্বাচন। জানা গেছে, বিএনপির সবশেষ স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইশরাকের শপথ ইস্যুতে নগর ভবন ঘিরে চলমান আন্দোলন নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা হয়েছে। দু-একজন ছাড়া অধিকাংশ নেতা অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, নির্বাচন ইস্যুতে লন্ডনে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের মধ্যে একটি ফলপ্রসূ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সংকট ও অনিশ্চয়তা কেটে যাওয়ার পাশাপাশি এক ধরনের স্বস্তিও ফিরে এসেছে। একই সঙ্গে নির্বাচন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে কিছুদিন ধরে চলা বিএনপির টানাপোড়েনমূলক সম্পর্কেরও অবসান ঘটেছে। এমন অবস্থায় ইশরাকের শপথ ইস্যুতে আন্দোলন চললে সরকারের কাছে ভুল মেসেজ যাবে। তা ছাড়া সিটি করপোরেশনের মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। তাই সবদিক বিবেচনায় আন্দোলন থেকে এখন ইশরাকের সরে যাওয়া উচিত। সভায় বাকি দু-একজন নেতা অভিমত প্রকাশ করে বলেন, লন্ডন বৈঠকের পর ইশরাক আন্দোলন থেকে পিছু হটলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে যে, সরকারের সঙ্গে বিএনপির সব বিষয়ে সমঝোতা হয়ে গেছে। এতে সমালোচকরাও সুযোগ পেয়ে যাবে। তাই রয়ে সয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া উচিত। তবে বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে শপথ না নিয়েই ডিএসসিসির মেয়র হিসেবে প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সভায় অংশ নিয়ে ইশরাক হোসেন সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার মতো ক্রিমিনাল অফেন্স করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। নাগরিক সেবাদানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ইশরাক হোসেন নগর ভবনের মিলনায়তন ও অফিস দখল করে নাগরিক সেবাদানে বাধা দিচ্ছেন। ইশরাক হোসেনের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। আসিফ মাহমুদ বলেন, ইশরাক হোসেন অফিসিয়ালি কোনো দায়িত্ব নেননি। কিন্তু নেতাকর্মীদের নিয়ে গিয়ে নগর ভবনের মিলনায়তন, অফিস দখল করেছেন।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান তোফায়েল আহমেদ বলেন, এখন কাউকে শপথ পড়ানোর কোনো অবকাশ নেই। করপোরেশনের মেয়াদ থাকতে শপথ পড়ানো হয়নি। এটা ভুল করেছে। সে সময় শপথ পড়ালেও মেয়াদ ছিল এক বা দেড় মাস। এখন শপথ পড়ানো হবে কীভাবে? নাগরিক সেবা বন্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের নেতারা যদি জনগণকে সেবা না দেন, বাধা দেন তাহলে কী করবেন? তার (ইশরাক হোসেন) যদি ওইরকম রাজনৈতিক দূরদর্শিতা থাকতো, তাহলে সিটি করপোরেশনের নির্বাচন চাইতো। নির্বাচন না চেয়ে উনি নগর ভবন দখল করে বসে থাকেন কীভাবে? আমি তো এখানে কোনো ন্যায্যতা দেখি না।

ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, সিটি করপোরেশনের দাপ্তরিক কাজগুলোর কোনোটাই করা যাচ্ছে না। ময়লা পরিষ্কার, মশার ওষুধ বিতরণ, সড়কবাতি লাগানোর মতো কাজও স্বাভাবিকভাবে করা সম্ভব হচ্ছে না। অসংখ্য প্রয়োজনে প্রতিদিন হাজারো মানুষ নগর ভবনে আসেন। কিন্তু তাদের কষ্টের কথার কোনো জবাব দিতে পারছি না। দু-চারটি জরুরি সেবা ছাড়া কোনো সেবাই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

শপথ ছাড়াই বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের দায়িত্ব পালন এবং এ বিষয়টিকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া অচলাবস্থা সম্পর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় চিন্তিত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি বলেছেন, আসলে আর চুপ থাকার মতো পরিস্থিতি নেই। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক অনুষ্ঠানে প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা আসিফ একথা বলেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মেয়রের দায়িত্ব পালনের দাবিতে নগর ভবন অবরুদ্ধ করে রাখা বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন স্বেচ্ছায় না সরলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে নতুন নির্বাচনের কথা ভাবছে সরকার। বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন ‘যমুনা’তে উপদেষ্টা পরিষদের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে উপস্থিত একাধিক উপদেষ্টা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৈঠকে ইশরাকের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। বিশেষ করে শপথ না নিয়েই মেয়রের ‘দায়িত্ব’ পালন এবং নগর ভবন অচল করে রাখায় উপদেষ্টারা ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করেন। অনেকে সরকারপ্রধানকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেন। বৈঠকে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও উঠে আসে।

সূত্র মতে, নির্বাচনের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত ১ জুন। এরপরও ইশরাক মেয়র দাবি করে নগর ভবনে সক্রিয় আছেন। এসব ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি দল সরকারের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এ পরিস্থিতিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ইশরাক যদি স্বেচ্ছায় সরে না দাঁড়ান এবং নগর ভবনের অচলাবস্থা না সরান, তাহলে সরকার নতুন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পথে এগোবে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল স্থানীয় সরকারের নতুন নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়েছে।

ইশরাক হোসেন না থামলে সিটি করপোরেশনে নির্বাচন হবে, বিএনপিকে সরকারের দেওয়া এই বার্তার বিষয়ে বিএনপি কী ভাবছে, জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম বলেন, এখন বিএনপি এ বিষয়ে চিন্তা করবে, অবস্থান পরিষ্কার করবে। ইশরাক ইস্যুতে সরকারের বার্তা নিয়ে বিএনপি অবশ্যই তার বক্তব্য স্পষ্ট করবে।