বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তর করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুরমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটি বলছে, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে (পবিস ) পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও অস্থিরতা এখন চরমে। সমস্যার সমাধান না করে পল্লী বিদ্যুৎ নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির এজেন্ডা বাস্তবায়নে এগোচ্ছে সরকার।

গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) মিলনায়তনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেছে ক্যাব। বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পরামর্শে আরইবিকে সেবা খাত থেকে বাণিজ্যিক খাতে রূপান্তরের প্রতিবাদে ও আরইবি-পিবিএসের মধ্যে বিদ্যমান বিবাদ অবসানে ক্যাবের সুপারিশ বাস্তবায়নের দাবিতে এটির আয়োজন করা হয়। এতে বলা হয়, অসমতা ও বৈষম্য নিরসনে পল্লী বিদ্যুৎকে বাণিজ্যিক বানানোর ধারণা অবাস্তব।

এক প্রশ্নের জবাবে ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিকে কোম্পানি বানিয়ে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পরামর্শ মানায় সরকারের দায় রয়ে গেছে। সংস্কারের নামে কোম্পানি বানানোর যে প্রক্রিয়া ৮০–এর দশকে শুর” হয়েছে, এটি যেন তারই বাস্তবায়ন। এ কারণে আরইবি ও পিবিএস একীভূত করার দাবি সরকারের কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। অথচ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও দাবির প্রতি সংহতি জানিয়েছে।

আরইবি ও পিবিএস একীভূত করাসহ ৭ দফা দাবি আদায়ে টানা ১৫ দিন ধরে শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা।

গত বছরের জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন তাঁরা। তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতারা এসে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কেউ তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। এর আগে গত ডিসেম্বরে সরকারের কাছে আরইবি ও পিবিএস একীভূত করার সুপারিশ করেছে ক্যাব।

আন্দোলনকারীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটি কয়েক দফা বৈঠক করলেও বিষয়টির কোনো সুরাহা হয়নি। এরপর গত বছরের ২৩ অক্টোবর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি করে দেয় বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যমান পল্লী বিদ্যুৎ কাঠামো পর্যালোচনা করে সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেওয়ার কথা। ১ জুন আরইবিতে তাদের প্রতিবেদনের একটি চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করা হয় বিদ্যুৎ বিভাগের উপদেষ্টার কাছে।

ক্যাবের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কমিটির প্রতিবেদনে আরইবি পুনর্গঠনের নামে মূলত কোম্পানিতে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়। কমিটি অংশীজনদের মতামত নিয়ে প্রতিবেদন তৈরির কথা বললেও তারা ক্যাবের সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি। এমনকি প্রতিবেদনের খসড়া উপস্থাপনের সভায় বিশ্বব্যাংক ও এডিবির প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও ক্যাবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।

পরে বিদ্যুৎ বিভাগের উপদেষ্টার নির্দেশে ক্যাবের জ্বালানি বিশেষজ্ঞকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। কমিটির প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ওই সভায় ক্যাবের প্রতিনিধি বলেন, ভোক্তারা এখন উত্তপ্ত কড়াইয়ে আছে, কমিটির সুপারিশ গৃহীত হলে তাদের জ্বলন্ত চুলায় ফেলা হবে। কমিটির সুপারিশ ত্র”টিপূর্ণ ও স্বার্থ সংঘাতযুক্ত।