ইবরাহীম খলিল (ঢাকা), নুরুল আমিন মিন্টু (চট্টগ্রাম) : দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে চলছে চারদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। এতে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের সাড়ে ৫ শতাধিক বিনিয়োগকারী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের প্রথম দিন অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। সেইসাথে প্রথম দিনে চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও মীরেরসরাইয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগস্থল সরেজমিনে ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। বিনিয়োগস্থল দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিদেশীরা। এছাড়া ঢাকাতে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে স্টাটআপ কানেক্ট বাংলাদেশ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে সভা সেমিনারসহ মতবিনিময় সভার আয়োজন ছিল। ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’ শীর্ষক এ বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এ সম্মেলন আগামিকাল বুধবার পর্যন্ত চলবে।

দিন শেষে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন জানিয়েছেন সারপ্রাইজিংলি পজেটিভ (অভূতপূর্ব ইতিবাচক) সাড়া পেয়েছি। আগে থেকেই আমরা কিছুটা আঁচ করতে পারছিলাম কিন্তু এই ধরণের সাড়া পাবো বুঝতে পারিনি। তিনি বলেন আজ দুইটা মেইন ইভেন্ট ছিল। ৬০/৭০ জনের একটা গ্রুপ বিমানযোগে চট্টগ্রাম গিয়েছেন। সেখানে কোরিয়ান ইপিজেড এবং মীরের সরাইতে ভিজিট করেছেন। তারা ছিলেন চায়না, নেদারল্যান্ড, ইন্ডিয়া। বেশ কয়েকটি দেশের প্রমিনেন্ট গেস্ট ছিলেন তারা সেখানে গিয়েছেন। আমরা সেখানে লংটাইম যে পদক্ষেপগুলো নেবো তা সবার কাছে শেয়ার করেছি। আমরা বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছি যে আর কিভাবে আমরা তাদের বেটার হেল্প করতে পারি। অন্যদিকে ঢাকাতে সমগ্র দেশ থেকে স্টার্টআপ প্রোগ্রামে এসেছেন।

এদিকে গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে সরাসরি বিনিয়োগ করবেন এমন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামীদামি বেশকিছু কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধিরাও অংশগ্রহণ করছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম দুজন হলেন কাপড়ের ব্র্যান্ড জারার মূল সংস্থা ইন্ডিটেক্সের গ্রুপ সিইও বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অস্কার গার্সিয়া মাসেইরাস ও দুবাইয়ের ডিপি ওয়ার্ল্ড গ্রুপের চেয়ারম্যান সুলতান আহমেদ বিন সুলাইমান।

বিডার তথ্য অনুযায়ী, বিনিয়োগ সম্মেলনে অতিথি হিসেবে থাকছেন যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের সদস্য ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, বহুজাতিক কোম্পানি স্যামসাংয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাং-জু লি, কাপড়ের ব্র্যান্ড জিওর্ডানো ইন্টারন্যাশনালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) কলিন মেলভিল কেনেডি কারি। এছাড়া এক্সিলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট ও পাকিস্তানের দাউদ গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্টের সম্মেলনে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। এসব ব্যক্তির পাশাপাশি আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে। বিডা জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা, উবার, টেলিনর ও টয়োটার মতো অনেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া বিশ্বের বেশকিছু বড় ভেঞ্চার ক্যাপিটাল কোম্পানিও আসছে সম্মেলনে। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বি-ক্যাপিটাল, মালয়েশিয়া ও হংকংভিত্তিক গোবি পার্টনার্স, কনজাংশন ক্যাপিটাল ও মার্কোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো রয়েছে।

সম্মেলনে যোগ দেওয়া বড় ব্যবসা খাতের বিনিয়োগকারীদের নিয়ে ঢাকার বাইরে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করবেন। ইতোমধ্যে সোমবার সকালে একদল বিদেশি বিনিয়োগকারী বিশেষ ফ্লাইটে চট্টগ্রামে যান এবং বিনিয়োগ অঞ্চল সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। এছাড়াও আজ মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের জাপানি অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে। কারখানার জন্য যাদের জমি প্রয়োজন, মূলত তাদেরই অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে নেওয়া হবে। সম্মেলনে দেশি-বিদেশি সেরা বিনিয়োগকারীদের মোট পাঁচটি শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে ব্যবসা করে আসছেন, এমন একজন বিদেশি ব্যবসায়ীকে সম্মাননা প্রদানের পাশাপাশি নাগরিকত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হবে।

সম্মেলনের অনানুষ্ঠানিক যাত্রার প্রথম দিনে আজ দেশি-বিদেশি আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের চট্টগ্রামের দুটি বিশেষ শিল্প এলাকা পরিদর্শন করানো হয়। এদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত এসব বিনিয়োগকারীরা কেইপিজেডে অবস্থিত ইয়াংওয়ান করপোরেশনের বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখেন। চট্টগ্রামে কোরিয়া, চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ৭০ জন ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা চট্টগ্রামের আনোয়ারায় অবস্থিত কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা কেইপিজেড এবং মিরসরাইয়ে অবস্থিত জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে দেখেন। আনুষ্ঠানিকভাবে এই সম্মেলনের উদ্বোধন করা হবে আগামিকাল বুধবার। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ওই দিন সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। কারখানা পরিদর্শন শেষে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে কেইপিজেডে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়। ইয়াংওয়ান কর্তৃপক্ষ ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৭০ লাখ বর্গফুটের বেশি আয়তনের কেইপিজেডে ৪৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সব কটি প্রতিষ্ঠানই সবুজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। ৪৮টি প্রতিষ্ঠানের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক খাতসংশ্লিষ্ট। এর বাইরে জুতা ও ব্যাগের একাধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

শুধু কারখানা গড়ে তোলার মধ্যে নিজেদের কর্মকাণ্ড সীমিত রাখেনি ইয়াংওয়ান গ্রুপ। কেইপিজেড এলাকায় শ্রমিকদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে ১০০ শয্যার হাসপাতাল। রয়েছে কর্মকর্তাদের আবাসন, বিনোদন সুবিধা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। নতুন করে গড়ে তোলা হচ্ছে ৬০০ শয্যার হাসপাতাল ও টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট। বিদেশি বিনিয়োগে গড়ে ওঠা এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীরাও কর্মক্ষেত্র নিয়ে তাদের ব্যাপক সন্তুষ্টির কথা তুলে ধরেন পরিদর্শনকারী দেশি-বিদেশি আগ্রহী বিনিয়োগকারীদের কাছে। কেইপিজেড এলাকা পরিদর্শনকালে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলেন ইয়াংওয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান কিহাক সাং।

এ সময় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আগে অনেকবার বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, তবে সেসময় কার্যকর উদ্যোগ ছিল না। বর্তমান সরকার বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন সহজীকরণ ও একত্রীকরণের উদ্যোগ নিয়েছে। এখন বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে সত্যিকার অর্থে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।’ তিনি উপস্থিত ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন বিদেশি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানান।

চীনের একজন বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি কিহাক সাংয়ের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম প্রধান বাধা কী মনে করেন? জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসনিক জটিলতা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা। তবে এই বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ লাভজনক বিনিয়োগের জন্য উত্তম গন্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কারণে তিনি এ দেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন বলে জানান।

এদিকে, বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিডা জানিয়েছে, দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এ জন্য সরাসরি বিনিয়োগ করবেন এমন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামিদামি বেশ কিছু কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধিরাও নিবন্ধন করেছেন।

এদিন সকালে ইন্টার কন্টিনেন্টালে সেমিনারের আয়োজন করা হয়। সেমিনারে যোগ দিয়ে কতা বলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর সুলতান এইচ মনসুর। তিনি জানান নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তা দিতে ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তিনি বলেন, ‘বিশেষ এই তহবিলের অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা হবে এবং শুধু স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে মূলধন জোগান দেওয়া হবে। এই বিষয়ে শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। গভর্নর মানসুর বাংলাদেশে স্টার্টআপ খাতের সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে বিকাশের উদাহরণ দেন। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশে ভবিষ্যতে বিকাশের মতো অন্তত ১০টি ইউনিকর্ন দেখতে চাই।

সেমিনারে অংশ নিয়ে বিডার চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বলেন, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে, বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পাওয়াসহ সরকারি লাল ফিতার দৌরাত্ম্য অনেক বেশি। প্রতি বছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। ৪০টি দেশের ৫শর বেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসব বিনিয়োগকারীকে চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জে অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরিয়ে দেখানো হবে। বাংলাদেশে উদ্ভাবনী উদ্যোক্তার অভাব নেই মন্তব্য করে তিনি বলেন, স্টার্টআপ তহবিলের সংকটে নতুন উদ্যোক্তারা ব্যবসা শুরু করতে পারেন না। এ কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় ৯০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে।

একই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর সম্ভাবনা তুলে ধরেন স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বাধীন পরিচালক তানভীর আলী। প্রবন্ধে বলা হয়, দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশে উদ্ভাবনী স্টার্টআপ উদ্যোগের চাহিদা বাড়ছে। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দেশে এখনো এই খাতে বিনিয়োগ কম।

প্যানেল আলোচনায় আরো অংশগ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। তিনি বলেন মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতাদের নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা উন্নত সেবা প্রদান করতে পারে। শীষ হায়দার বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার একটি ‘ফান্ড অফ ফান্ডস’ গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন উৎস থেকে বিনিয়োগ একত্রিত করা হবে। এই তহবিলটি প্রারম্ভিক ও প্রবৃদ্ধি পর্যায়ের স্টার্টআপগুলোকে সহায়তা প্রদান করবে। যাতে তারা সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিকীকরণ এবং টেকসই হতে পারে।

তিনি বলেন, ‘স্টার্টআপ কানেক্ট ২০২৫’ বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তাবান্ধব হাবে রূপান্তরের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে। এসময় চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স পাওয়াসহ সরকারি লাল-ফিতার দৌরাত্ম্য বেশি। প্রতিবছর ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ দেখে খুশি বিদেশিরা

চট্টগ্রাম ব্যুরো : বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাং। গতকাল সোমবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে যোগ দিতে আসা প্রায় ৭০ জন ব্যবসায়ী কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) পরিদর্শনে গেলে তিনি এ আহ্বান জানান।

বাংলাদেশে কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আনোয়ারা ইপিজেড হলো প্রাইভেট সেক্টরে একমাত্র অপারেশনাল ইপিজেড। আড়াই হাজার একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত এই ইপিজেডে বর্তমানে ৮ শো একর জায়গায় ৪৮টি ভবনে ১৫টি কারখানা উৎপাদনে রয়েছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা করে আরো কয়েকশো একর জমিতে কারখানা তৈরীর সুযোগ রয়েছে।

‘কিন্তু ভূমী রেজিষ্ট্রেশনসহ ছোট-খাট কিছু জটিলতার কারনে বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্বেও এই ইপিজেডের সক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা যায় নি। তবে বর্তমানে সব সংকট কেটে গেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরোয়ারা কেইপিজেডের সব সক্ষমতা ব্যবহার করা যাবে। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এই পরিদর্শন সেই সম্ভবনা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলো।’Ñ বলেন তিনি।

চীনের একজন বিনিয়োগকারী প্রতিনিধি কিহাক সাংয়ের কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম প্রধান বাধা কী মনে করেন? জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনিক জটিলতা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা।’ তবে এই বাধা সত্ত্বেও বাংলাদেশ লাভজনক বিনিয়োগের জন্য উত্তম গন্তব্য বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ কারণে তিনি এ দেশে ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ ও ব্যবসা সম্প্রসারণ করছেন বলে জানান।

চীন থেকে পরিদর্শনে আসা বিনিয়োগকারী কেভিন উল জানান, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে এরচেয়ে ভালো বিনিয়োগের স্থান বিরল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশিল থাকলে চায়না থেকে বিপুল পরিমান বিনিয়োগ আসবে বলেও জানান তিনি। নেদারল্যান্ডের বিনিয়োগকারী রিকি রও জানান, ব্যবসার জন্য যে যে সুযোগ সুবিধা ইকোনোমিক জোনগুলোতে থাকা প্রয়োজন তার সবই বাংলাদেশের ইকোনোমিক জোনগুলোতে রয়েছে। এখনো চুরান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও ভালো একটি বিনিয়োগের আশার কথা জানান তিনি। বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ অনেক উৎকৃষ্ট একটি স্থান। এখানে বিনিয়োগের পরিবেশ দেখে আমরা সন্তুষ্ট এমনটি জানিয়েছেন ভারতীয় বিনিয়োগকারী ডা. সুরেশ কাপাতি।