হজ্বের নিবন্ধনের সময় বাড়বে কিনা, সে বিষয়ে মঙ্গলবার জানা যাবে বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। সৌদি সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানা যাবে বলে জানান তিনি।
গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
হজে¦¦র নিবন্ধনের সময় বাড়বে কিনা- জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, হজ¦যাত্রী নিবন্ধনের সময় ১২ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত ছিল। এ সময় পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৮৫৯ জন নিবন্ধিত হয়েছেন। এরপর নিবন্ধন বন্ধ রয়েছে।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) সৌদি সরকারের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হবে। এই বৈঠকে হয়তো তারা আমাদের কাছে জানতে চাইবেন, কতজন নিবন্ধিত হয়েছেন কতজনের ভাউচার হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আশাবাদী, সময় একটু বাড়তে পারে ওনারা যদি অ্যালাউ করেন। আমরা তাদের সময় বাড়ানোর জন্য অনুরোধ করব।
খালিদ হোসেন বলেন, সময় বাড়বে কিনা সেটি সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা বুঝতে পারবো। আমরা হজ¦ এজেন্সিগুলোকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি, আজকে (সোমবার) বিকেল ৫টার মধ্যে জানাতে হবে- অপেক্ষমান হজ¦যাত্রী আর কতজন আছেন, যারা নিবন্ধনের জন্য সিস্টেমে ইনপুট দিতে পারেনি। এ তথ্য আমরা আজকে বিকেলের মধ্যে পেলে আগামীকালকের মিটিংয়ে বলবো যে এতজন হজ¦যাত্রী নিবন্ধনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছেন।
এবার হজে¦ যেতে সরকারি ও বেসরকারি কোটা উন্মুক্ত রাখা হয়েছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, যতজন হবে ততজনই সরকারি ব্যবস্থাপনায় যেতে পারবেন। এটা নিবন্ধনের উপর নির্ভর করবে।
৩৮ কোটি টাকা ফেরত আনা হয়েছে
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরবে আটকে থাকা ৯৯০টি হজ¦ এজেন্সির অব্যয়িত অর্থ, ৩৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ফেরত আনা হয়েছে। ফেরত দেওয়া টাকার পরিমাণ একটি এজেন্সির অনুকূলে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ এবং একটি এজেন্সির অনুকূলে সর্বনিম্ন ২ টাকা। বিভিন্ন সময়ে হজে¦র জন্য এসব অর্থ পাঠিয়েছিল এজেন্সিগুলো কিন্তু সেগুলো অব্যয়িত থেকে যায়।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, সৌদি হজ¦ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ‘মাসার নুসুক’ প্ল্যাটফর্মের আইবিএএন (ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার)-এ সর্বমোট ৯৯০টি এজেন্সির অব্যয়িত অর্থ জমা ছিল এবং সবগুলো এজেন্সির টাকাই ফেরত পাওয়া গেছে। এ অর্থের পরিমাণ ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৬৮ সৌদি রিয়াল ও ৫৭ হালালা, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৭ কোটি ৯৪ লাখ টাকার সমান। ইতোমধ্যে ফেরত পাওয়া এই অর্থ বাংলাদেশ হজ¦ অফিসের মাসার নুসুক প্ল্যাটফর্মের আইবিএএন থেকে বাংলাদেশ হজ¦ অফিসের হজ¦সংক্রান্ত সৌদি ফ্রান্সি ব্যাংকে পরিচালিত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ৯৯০টি হজ¦ এজেন্সির মধ্যে তিনটি এজেন্সির হিসাবে কোনো অব্যয়িত অর্থ জমা নেই। ৮৩১টি এজেন্সির ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তাদের টাকা ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হবে। আর বাকি ১৫৬টি এজেন্সির ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য পেলে তাদের টাকাও ফেরত দেওয়া হবে। এ টাকা ফেরতের জন্য সব দাপ্তরিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ফেরত দেওয়া টাকার পরিমাণ একটি এজেন্সির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ এবং সর্বনিম্ন ২ টাকা বলেও জানান খালিদ হোসেন।
বিগত কয়েক বছরের জমে থাকা অব্যয়িত অর্থ ফেরত আনা এবং সেটি সংশ্লিষ্ট হজ¦ এজেন্সিকে ফেরত দেওয়ার ক্ষেত্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ ও সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে জানিয়ে ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের হজ¦ ব্যবস্থাপনাকে একটি কাক্সিক্ষত পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই। ২০২৫ সালের যে অনবদ্য হজ¦ ব্যবস্থাপনা আপনারা দেখেছেন, সেটার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার বিষয়ে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সিংহভাগ হজ¦যাত্রী বেসরকারি হজ¦ এজেন্সির মাধ্যমে হজ¦ পালন করে থাকেন- শতকরা হিসেবে এই সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি। সরকারি–বেসরকারি উভয় মাধ্যমে হজ¦যাত্রীদের হজ¦ পালনের জন্য সৌদি প্রান্তের খরচের টাকা সৌদি হজ¦ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক তাদের মন্ত্রণালয়ের মাসার নুসুক প্ল্যাটফর্মের আইবিএএন হিসাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন সাপেক্ষে জমা দেওয়া হয়ে থাকে।
মাসার নুসুক প্ল্যাটফর্মে নিবন্ধিত বাংলাদেশি হজ¦ এজেন্সির সংখ্যা ১ হাজার ৩৩৯টি জানিয়ে তিনি বলেন, এসব এজেন্সি গত ৭–৮ বছরে হজে¦র সৌদি পর্বের খরচ নির্বাহের জন্য সে দেশের নুসুক প্ল্যাটফর্মের আইবিএএন-এ যে টাকা পাঠিয়েছে, সেখানে কিছু অর্থ অব্যয়িত বা উদ্বৃত্ত ছিল। এই অর্থ ফেরত পাওয়ার জন্য হজ¦ এজেন্সিগুলোর পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অনুরোধ জানানো হয়।
ধর্ম উপদেষ্টা আরও বলেন, এ পরিপ্রেক্ষিতে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সৌদি সরকারের কাছে জমে থাকা হজ¦ এজেন্সিগুলোর অবশিষ্ট টাকা ফেরতের জন্য একাধিকবার পত্র মারফত যোগাযোগ করা হয়। বিভিন্ন সময়ে সৌদি হজ¦ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ বছর হজ¦ শেষে আমি নিজে সৌদি হজ¦ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টার মহোদয়কে এ বিষয়ে একটি বিস্তারিত পত্র প্রেরণের অনুরোধ করি। এমনকি বিভিন্ন সময়ে খুদে বার্তার মাধ্যমেও আমি সৌদি হজ¦ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য অনুরোধ জানাই। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা অর্থ ফেরত দিয়েছে।
এ অর্থ এজেন্সিগুলো হজ¦যাত্রীদের ফেরত দেবে কি না- জানতে চাইলে খালিদ হোসেন বলেন, এজেন্সিগুলোকে কিছু টাকা বেশিও পাঠাতে হয়। হজ¦যাত্রীদের কাছ থেকে নিয়ে পাঠিয়েছে এমন নয়। এটা তাদের ব্যবসা। টাকার যাতে ঘাটতি না পড়ে, সেজন্য তারা কিছু বেশি পাঠিয়ে থাকে।