কারিগরি ত্রুটির কারণে বেশ কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় সারা দেশে একাধিক স্থানে লোডশেডিং হচ্ছে। ফলে দুর্ভোগ বেড়েছে মানুষের। বিশেষ করে প্রত্যন্ত এলাকায় ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংএর খবর পাওয়া গেছে। আগামী কয়েক দিন লোডশেডিং থাকার আভাস দিয়েছে পিডিবি।
এক বার্তায় পিডিবির পক্ষ থেকে বলা হয়, বেশ কয়েকটি বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র যান্ত্রিক ত্রুটিজনিত হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় দেশব্যাপী লোডশেডিং করতে হচ্ছে। আগামী ২ বা ৩ দিনের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। সাময়িক এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় পিডিবি দেশবাসীর সহযোগিতা কামনা করছে।
সূত্রে জানা যায়, কারিগরি ত্রুটির কবলে পড়া বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আদানি, রামপাল ও বিবিয়ানা বিদ্যুৎকেন্দ্র। তিন বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি করে ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের কিছু এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।
জানা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিডে বড় আকারে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে। এতে সারা দেশে আকস্মিকভাবে লোডশেডিং বেড়ে গেছে। ঘণ্টাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হয়েছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি হতে দুই-তিনদিন সময় লাগতে পারে বলে বিদ্যুৎ বিভাগের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে।
জানা গেছে, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে।
তবে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যে ইউনিটটি (৬৬০ মেগাওয়াট) বন্ধ হয়ে গেছে, সেটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা নেই। অন্যদিকে ভারতের আদানি পাওয়ারের একটি ইউনিট (৮০০ মেগাওয়াট) থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।
কেন্দ্রটির মোট সক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। রাত ৯টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ চাহিদা ও উৎপাদনের তথ্য অনুযায়ী, আদানির বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ৭৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়েছে। এছাড়া বিবিয়ানার একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উৎপাদন থেকে ছিটকে পড়ে। এ কেন্দ্রের সক্ষমতা ৪০০ মেগাওয়াটের বেশি। যদিও রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিবিয়ানার বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুনরায় উৎপাদনে ফেরে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।
যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে জাতীয় গ্রিড থেকে যে তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোর মোট সক্ষমতা প্রায় ১ হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের কাছাকাছি। এদিকে গ্রিড থেকে বড় সক্ষমতার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দেশের বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। বিপিডিবি বিকল্প উপায়ে কীভাবে সরবরাহ ব্যবস্থাপনা ঠিক রাখা যায় সেই চেষ্টা চালাচ্ছে।
বিপিডিবির তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দিনে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৮৯০ মেগাওয়াট। আর রাতে ১৬ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। সঞ্চালন সংস্থা পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসির তথ্য অনুযায়ী ৮-৯ সেপ্টেম্বর সর্বনি¤œ ৩০ মেগাওয়াট থেকে সর্বোচ্চ ৯৩৮ মেগাওয়াট পর্যন্ত লোডশেডিং করা হয়েছে। বিশেষ করে দুপুর ১২টার পর থেকে বিদ্যুতের লোডশেডিং বাড়তে থাকে। প্রতি ঘণ্টায় চাহিদা ও উৎপাদনে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত
হিসাব অনুযায়ী অন্তত ৮০০ মেগাওয়াট করে লোডশেডিং ছিল। মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে লোডশেডিং বাড়তে থাকে। তাতে দেখা যায় এরপর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াটের ওপর লোডশেডিং ছিল।
পিজিসিবির সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল বুধবার রাত ৯টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট। যেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৮৫৩ মেগাওয়াট। বাকি চাহিদার পুরোটাই লোডশেডিং ছিল।
পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত ৯টায় বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬,২৫০ মেগাওয়াট, এর বিপরীতে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৮,৮৫৩ মেগাওয়াট। সে হিসেবে লোডশেডিং ছিল ১,৩৩৪ মেগাওয়াট। তবে পিক আওয়ারের পরে লোডশেডিং ছিল না বলে জানিয়েছে পিডিবি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে বাগেরহাটের রামপালে অবস্থিত ১,৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। ভারতের আদানি পাওয়ারের ঝাড়খ-ের বিদ্যুৎকেন্দ্রর একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়া বিবিয়ানার একটি গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র যান্ত্রিক ক্রুটির কারণে উৎপাদন বন্ধ আছে। এ হিসেবে ১,৮০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে পিডিবি জানায়, বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সন্ধ্যার পিক আওয়ারের পরে আর লোডশেডিং ছিল না বলে তারা দাবি করছে।