আগামী বছর সরকারি ব্যবস্থার মতো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়ও হজ্ব পালনে তিনটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। সর্বনিম্ন খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে একটি হোটেলে হজ্ব এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব)-এর মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার এসব হজ্ব প্যাকেজ ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্বযাত্রীদের জন্য তিনটি হজ্ব প্যাকেজ করা হয়েছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্বযাত্রীদের জন্য খাওয়া ও কোরবানিসহ বিশেষ হজ্ব প্যাকেজে খরচ ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সাধারণ প্যাকেজের মাধ্যমে হজ্ব পালনে ব্যয় হবে সর্বমোট ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সাশ্রয়ী হজ্ব প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা।

সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্বযাত্রীদের খাবার খরচ প্যাকেজের বাইরে থাকলেও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উন্নত সার্ভিসের জন্য খাবারের মূল্য প্রতিটি প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত বলেও জানান হাব মহাসচিব। প্রতি সৌদি রিয়াল ৩২ টাকা ৮৫ পয়সা ধরে প্যাকেজের খরচ হিসাব করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পরবর্তী সময়ে এ রেটে কোন পরিবর্তন আসলে তা প্যাকেজ মূল্যের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে।

মহাসচিব বলেন, ভুল তথ্যের কারণে ধর্মীয়ভাবে আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান অনেক লোক হজ্ববিমুখ হচ্ছেন। হজ্বযাত্রী কম-বেশি হওয়ার বিষয়টি হাবের ওপর নির্ভর করে না। এখানে হজ্বযাত্রীদের আর্থিক সক্ষমতার বিষয়টি জড়িত। একটি ভুল মেসেজ আমাদের দেশবাসীর কাছে আছে। অনেক হজ্বযাত্রী আমাদের কাছে প্রাক-নিবন্ধন করেন হজে যাবেন। পরবর্তীসময়ে এসে বলছেন আপনি আমার প্রাক-নিবন্ধন বাতিল করেন, আমি ওমরা করে এসেছি, আল্লাহর ঘর দেখে এসেছি। মানুষের কাছে একটা ভুল মেসেজ হলো-ওমরায় গেলে, আল্লাহর ঘর দেখা হলে, আমার আর হজ্ব করা লাগবে না। ধর্মীয়ভাবে আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান অনেক লোক হজ্ববিমুখ হচ্ছেন।’

ফরিদ আহমেদ বলেন, আমি দেশবাসী ও আলেম-ওলামাদের কাছে অনুরোধ করব, সঠিক তথ্য এবং সঠিক মেসেজ যাতে এ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে যায়। যারা আর্থিক ও শারীরিকভাবে সামর্থ্যবান হজ¦ করা তাদের জন্য ফরজ। এক কোটি বার ওমরা পালন করলেও হজের

গত বছর হাবের কমিটি না থাকায় এজেন্সি মালিকরা দুই ভাগে ভাগ হয়ে প্যাকেজ ঘোষণা করেন। সাধারণ হজ্ব এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে একটি পক্ষ দুটি প্যাকেজ এবং বৈষম্যবিরোধী হজ্ব এজেন্সির মালিকদের ব্যানারে আরেকটি পক্ষ তিনটি হজ্ব প্যাকেজ ঘোষণা করেন। খাবার খরচ যুক্ত করে সাধারণ হজ্ব প্যাকেজের খরচ ৫ লাখ ২৩ হাজার টাকা এবং বিশেষ হজ্ব প্যাকেজের মূল্য ৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ধরেছে সাধারণ হজ্ব এজেন্সির মালিকরা। অন্যদিকে, বৈষম্যবিরোধী মালিকদের ঘোষণা অনুযায়ী, প্রথম প্যাকেজ মূল্য ধরা হয় ৫ লাখ ১৮ হাজার, দ্বিতীয় প্যাকেজের মূল্য ধরা হয় ৫ লাখ ৮৫ হাজার টাকা এবং বিশেষ হজ্বপ্যাকেজ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকা।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘোষণা করেন। তিনি জানান, আগামী বছর প্যাকেজ– ১ এর মাধ্যমে হজ্ব পালনে খরচ ধরা হয়েছে ৬ লাখ ৯০ হাজার ৫৯৭ টাকা। এছাড়া হজ্ব প্যাকেজ-২ এ ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮৮১ টাকা ও হজ্ব প্যাকেজ-৩ এ ৪ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৭ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।

বিশেষ হজ্ব প্যাকেজের সুবিধা : হাব মহাসচিব জানান, বিশেষ প্যাকেজে হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব ৭০০ মিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকায় আবাসন। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় 'ডি' ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেমের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ। এছাড়া মক্কার হোটেল বা বাড়ি হতে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ ট্রেনযোগে যাতায়াত; এটাচড্ বাথ সহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৫ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে এ প্যাকেজে।

সাধারণ হজ¦ প্যাকেজের সুবিধা : হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব ৩ কিলোমিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকার বাইরে আবাসন। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেমের মাধ্যমে খাবার সরবরাহ করা হবে।

মক্কার হোটেল বা বাড়ি হতে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ ট্রেনযোগে যাতায়াত। অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে এ প্যাকেজে।

সাশ্রয়ী হজ্ব প্যাকেজের বৈশিষ্ট্য-সুবিধা : এ প্যাকেজে হারাম শরীফের বহিঃচত্ত্বর থেকে হোটেলের দূরত্ব হবে ৬/৭ কিলোমিটারের মধ্যে। মদিনায় মারকাজিয়া (সেন্ট্রাল এরিয়া) এলাকার বাইরে আবাসন হবে। মিনার জোন-৫ এ তাঁবুর অবস্থান ও মিনা-আরাফায় ‘ডি’ ক্যাটিগরি সার্ভিসসহ মোয়াল্লেম কর্তৃক খাবার সরবরাহ করা হবে এ প্যাকেজে। এছাড়া মক্কার হোটেল বা বাড়ি হতে বাসযোগে মিনার তাঁবুতে এবং মিনা-আরাফাহ-মুজদালিফা-মিনা বাস/ ট্রেনযোগে যাতায়াত; অ্যাটাচ বাথসহ মক্কা ও মদিনায় হোটেলের প্রতি রুমে সর্বোচ্চ ৬ জনের আবাসনের ব্যবস্থা থাকবে সাশ্রয়ী প্যাকেজে।

৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে হবে প্যাকেজের সব টাকা : ফরিদ আহমেদ মজুমদার বলেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় প্রত্যেক হজ্বযাত্রী কমপক্ষে সাড়ে ৩ লাখ টাকা জমা দিয়ে নিবন্ধিত হতে পারবেন। আগামী ১২ অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত নিবন্ধন চলবে। হজ্ব প্যাকেজের বাকি অর্থ আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবশ্যই নিজ নিজ এজেন্সির ব্যাংক হিসাবে জমা করে বা এজেন্সির অফিসে জমা দিয়ে মানি রিসিট গ্রহণ ও সংরক্ষণ করবেন। কোনোক্রমেই মধ্যস্বত্বভোগীদের কছে কোনো প্রকার লেনদেন করবেন না। কোনো এয়ারলাইন্স এ বছর ডেডিকেটেড ফ্লাইট ছাড়া শিডিউল ফ্লাইটে কোনো হজ্বযাত্রী বহন করতে পারবে না জানিয়ে মহাসচিব বলেন, প্যাকেজ ঘোষণার পর রাজকীয় সৌদি সরকার কোনো খাতে খরচ বাড়ালে তা প্যাকেজ মূল্য হিসেবে গণ্য হবে এবং হজ্বযাত্রীকে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে।

হাব মহাসচিব বলেন, গত বছর হজ্বযাত্রীদের বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৮২০ টাকা। এবার ১২ হাজার ৯৯০ টাকা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা। বিমান ভাড়া আরও কমানো হলো প্যাকেজের মূল্য কমানো হবে।

তিনি বলেন, এর আগে গত দুই বছর অন্যায়ভাবে ২ লাখ টাকা করে হজ্বযাত্রীদের কাছ থেকে বিমান ভাড়া আদায় করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, যেটি হজ¦যাত্রীদের প্রতি জুলুম ছিল, অন্যায় ছিল। হজ্বযাত্রীদের কাছ থেকে এ টাকা লুট করা হয়েছিল বলে আমরা মনে করি। কারণ তখন এক ডলারের দাম ছিল ১০০ টাকা। এখন এক ডলারের বিপরীতে টাকা ১২২ টাকা ৫০ পয়সা, কিন্তু এবার বিমান ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৩০ টাকা। হজ্বযাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত প্রায় এক লাখ টাকা আদায় করা হয়েছিল।