নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আজও অজানা

আজ ভয়াল ৫ মে কালো রাত। ঢাকার মতিঝিল শাপলা চত্বরে আলেম, ওলামা, মাদরাসা শিক্ষক ও ছাত্রদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক তান্ডব চালানোর ইতিহাসের ন্যক্কারজনক ও ভয়ঙ্করতম দিন। ২০১৩ সালের এই দিনে হেফাজতে ইসলামের ডাকে সারাদেশ থেকে আগত নিরীহ লাখো আলেম-ওলামার উপর রাতের আঁধারে দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবির যৌথ অভিযানে চালানো হয় কাপুরুষোচিত এক পৈশাচিকতা। সেদিনের অভিযানে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানা যায়নি আজও।

কয়েক হাজার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সাথে সেদিন পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির তৎকালীন উচ্চপদস্থ এক ডজনের বেশি কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত ছিলেন। গণহত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মতিঝিল এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে গভীর অন্ধকারের মধ্যে সমাবেশের তিনদিক ঘিরে ফেলে রাষ্ট্রীয় বাহিনী যৌথ অভিযান চালায়। পুলিশের ‘অপারেশন সিকিউর শাপলা’, র‌্যাবের ‘অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট শাপলা’ এবং বিজিবির ‘অপারেশন ক্যাপচার শাপলা’ নাম দিয়ে চলে অভিযান। ওই অভিযানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার সদস্য নিয়োজিত ছিল। দেড় লক্ষাধিক গোলাবারুদ ব্যবহৃত হয়।

পূর্ব ঘোষিত ১৩ দফা দাবী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ঢাকা অবরোধের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। মতিঝিলের শাপলা চত্বরকে ঘিরে ৫ মে হেফাজতে ইসলাম এর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে মধ্যরাতে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অন্ধকার রাতে ঝটিকা অভিযান চালানো হয়। দৈনিক বাংলা ও ফকিরাপুল মোড়সহ তিন দিক থেকে অপারেশন শুরু করা হয়। পরে একযোগে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে অসংখ্য গুলী, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে নৃশংস, বর্বর ও ইতিহাসের জঘন্যতম হামলা চালানো হয়। হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে জড়ো হওয়া ইসলামপ্রিয় লাখো মানুষ, মাদরাসার ছাত্র-শিক্ষক ও সাধারণ নাগরিকদের উপর চলে নির্মমতা। সে রাত্রে কী ঘটেছিল তা প্রচার করেছে দেশী-বিদেশী প্রায় সব গণমাধ্যম। মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় সশস্ত্র অপারেশনের আওয়াজে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে মতিঝিল ও এর আশপাশের এলাকা। যৌথ অভিযানে ১০ মিনিটের মধ্যেই হেফাজত ইসলামের কয়েক লাখ নেতা-কর্মীকে মতিঝিল থেকে হটিয়ে দেয়া হয়। এ সময় তারা যাত্রাবাড়ি ও ডেমরার দিকে চলে যান। ঝটিকা অভিযানে হাজারো তৌহিদী জনতা নিহত ও অসংখ্য আহত হয়েছেন বলে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা দাবি করেছেন।

অভিযানের পর পরই আন্তর্জাতিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন ওয়েবসাইটে অভিযানের বিভিন্ন ধরনের ছবি তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে শত শত লাশের ছবি দেখা গেছে। তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এ অভিযান চালানো হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। আর পুলিশ কন্ট্রোল রুমে বসে পুরো অভিযান পর্যবেক্ষণ করেন তখনকার আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা। নৃশংস এ অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন র‌্যাবের তৎকালীন গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান লেঃ কর্নেল জিয়া, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার বেনজীর আহমেদ, বিজিবি প্রধান আব্দুল আজিজ, র‌্যাবের ডিজি মোখলেসুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মারুফ হাসান ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অর্থ) আব্দুল জলিল মন্ডল। শাপলা চত্বরের অভিযান থেকেই দেশে সাউন্ড গ্রেনেডের ব্যবহার শুরু হয়। এপিসি (আর্মার্ড পার্সোন্যাল কেরিয়ার) থেকেও শত শত রাউন্ড গুলী ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়।

আওয়ামী লীগের প্রথম গণহত্যা : ঘটনা শুরু হয় ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগ থেকে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের নামে বিচারের কাজ শুরু করে। গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। চলতে থাকে বিচার কাজ। জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। শাহবাগে গঠিত হয় গণজাগরণ মঞ্চ। সেখান থেকেই মূলত যাত্রা শুরু হয় ফ্যাসিবাদের। যেখান থেকে যাবজ্জীবন নয় আব্দুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে আন্দালন শুরু করে তারা। অন্যান্য নেতাদেরও ফাঁসির দাবি করা হতে থাকে। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে সরাসরি উচ্চ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে স্লোগান চলতে থাকে। দিন দিন এই আন্দোলন জোরদার হতে থাকে। নাস্তিকতায় বিশ্বাসী ও ফ্যাসিবাদ সমর্থিতরা জমায়েত হতে থাকে শাহবাগে। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম বিরোধী বিভিন্ন বক্তব্য আসতে থাকে। এছাড়াও ইসলাম বিদ্বেষী বেশ কিছু ব্লগার জমায়েত হয় শাহবাগে। গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম বিদ্বেষী বক্তব্য এবং ব্লগারদের সম্পৃক্ততার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ইসলাম ও রাসূল (সা.কে নিয়ে কটূক্তিকারীদের ফাঁসিসহ ১৩ দফা দাবি জানায় দলটি। আর এ দাবি আদায়ের উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালের ৫ ও ৬ মে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম। ৫ মে ফজরের নামাযের পরপরই ৬টি প্রবেশ পথ দখলে নেয় হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে সারাদেশ থেকে আসা কওমী মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক ও ইসলামপ্রিয় মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা শাপলা চত্বরের দিকে আসতে শুরু করেন। এর আগে হেফাজতের নেতারা শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার জন্য দফায় দফায় পুলিশের কাছে অনুমতি চায়। কিন্তু পুলিশ শুধু মোনাজাত করে সমাবেশ শেষ করার অনুমতি দেয়। নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে আসতে থাকলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ (বর্তমান শহীদ আবরার ফাহাদ অ্যাভিনিউ) ও বায়তুল মোকাররম গেটে আওয়ামী লীগ-যুবলীগ কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ হয় হেফাজত নেতা-কর্মীদের। দফায় দফায় আওয়ামী যুবলীগ ও ছাত্রলীগ হামলা চালায় হেফাজত কর্মীদের ওপর। সাথে যুক্ত হয় পুলিশও। ক্রমাগত গুলী ছুড়তে থাকে পুলিশ। এদিকে বায়তুল মোকাররমের আশপাশের বইয়ের দোকানগুলোতে ধরিয়ে দেয়া হয় আগুন। তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে হেফাজত নেতা-কর্মীদের সন্ধ্যা পর্যন্ত আলটিমেটাম দেন। তিনি বলেন, সন্ধ্যার মধ্যে মতিঝিল এলাকা ত্যাগ না করা হলে তাদের শায়েস্তা করা হবে। জবাবে হেফাজতের নেতারা এই আলটিমেটাম বয়কট করেন এবং শাপলা চত্বরে অবস্থানের সিদ্ধান্ত নেন।

এরপর সরকারের পক্ষ থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় রাতের মধ্যেই হেফাজত নেতা-কর্মীদের শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। তাই পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাবের কয়েক হাজার সদস্যকে নিয়ে আসা হয় সমাবেশ স্থলের আশপাশে। রাত আড়াইটার দিকে দৈনিক বাংলা মোড়, দিলকুশা ও নটরডেম কলেজের সামনে থেকে শুরু হয় একযোগে অভিযান। সে সময়ে অধিকাংশ নেতা-কর্মী ঘুমিয়েছিলেন। আবার অনেকে জিকির ও নামাযরত অবস্থায় ছিলেন। আগেই মতিঝিল ও শাপলা চত্বর এলাকার সড়কবাতি বন্ধ করে দেয়া হয়। শুরু হয় ত্রিমুখি অভিযান। বৃষ্টির মতো গুলী ছুঁড়তে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। গুলীর সাথে ছিল টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড। প্রচন্ড গোলাগুলীতে দিকবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে ছুটতে থাকেন হেফাজত কর্মীরা। অভিযান শুরুর ১০ মিনিটের মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পৌঁছে যায় শাপলা চত্বরে। হেফাজত কর্মীরা আশপাশের বিভিন্ন ভবনে আশ্রয় নেন কিন্তু সেখান থেকেও তাদের বের করে নিয়ে আসে পুলিশ-র‌্যাব ও বিজিরি সদস্যরা। সারারাত চলে এই অভিযান। ভোর বেলায়ও থেমে থেমে আসতে থাকে গুলীর আওয়াজ। পরদিন সকালে মতিঝিল শাপলা চত্বর রূপ নেয় এক যুদ্ধবিধস্ত এলাকায়।

সেই রাতের এই অভিযান নিয়ে সংবাদ প্রকাশের কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার। এ ছাড়া এমনও অভিযোগও ওঠে পরদিন আশেপাশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ভবনের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজও নিয়ে যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেই বলেন, সেই রাতে হেফাজতের বহু কর্মী নিহত হন যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন মাদ্রাসা ও বিভিন্ন এতিমখানার শিক্ষার্থী। যার ফলে তাদের নিয়ে তেমন একটা আলোচনাও হয়নি।

অধিকারের বিরুদ্ধে মামলা: ওই রাতের নিহতদের একটি তালিকা তৈরী করে মানবাধিকার সংগঠন অধিকার। অধিকার তাদের তালিকাটি প্রকাশ করে যাতে ৬১ জন নিহত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এই সংখ্যাটি ১৩ বলে জানানো হয়। অধিকারের তথ্যে ক্ষুব্ধ হয় সরকার। অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান শুভ্র এবং পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। পরে সেটি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। দুই বছর কারাভোগ করতে হয় আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এএসএম নাসির উদ্দিন এলানকে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন চাপের কারণে অধিকারের তালিকাটি তখন প্রকাশ্যে আসেনি। এদিকে শাপলা চত্বরে মৃত্যু নিয়ে উপহাস করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী (বর্তমানে পলাতক) শেখ হাসিনা। সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন-হেফাজত কর্মীরা গায়ে লাল রং মেখে মৃত্যুর অভিনয় করেছে।

কত গুলী কত অস্ত্র: পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ৫-৬ মে হেফাজত ফ্লাশআউট অপারেশনের ২৪ ঘণ্টায় আলেমদের লক্ষ্য করে ১ লাখ ৫৫ হাজার বুলেট গ্রেনেড টিয়ারশেল ছোড়ে র‌্যাব-পুলিশ। আর হেফাজত দমনে সরাসরি অংশ নেয় ৭ হাজার ৫৮৮ সদস্য। এ সংখ্যা কেউ কেউ ১৫ থেকে ২০ হাজারও বলেছে। পুলিশ সদর দফতর ও বিভিন্ন সূত্রের বরাতে জানা যায়, ৬ মে ঢাকার প্রবেশদ্বার কাঁচপুর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও সানারপাড় এলাকা থেকে হেফাজত কর্মীদের হটিয়ে দিতে মাত্র দু’ঘণ্টায় আরও প্রায় ১০ হাজার গোলাবারুদ ব্যবহার করা হয়েছিল, তার হিসাব আসেনি গণমাধ্যমের খবরে। একইদিনে হাটহাজারী ও বাগেরহাটে হেফাজতকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ব্যবহৃত গোলাবারুদসহ সারাদেশে হেফাজত কর্মীদের শায়েস্তা করতে ব্যবহৃত গোলাবারুদের সংখ্যা যোগ করলে সেটা ২ লাখ ছাড়িয়ে যাবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে জানা যায়, ৫ মে দুপুর থেকে পরদিন ৬ মে ভোর পর্যন্ত ৮০ হাজার টিয়ারশেল, ৬০ হাজার রাবার বুলেট, ১৫ হাজার শর্ট গানের গুলী এবং ১৫ হাজার সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে পিস্তল রিভলবারের গুলী ব্যবহৃত হয়েছে সাড়ে ৩শ’ রাউন্ড।

হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা: ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে নির্বিচারে গুলী চালিয়ে গণহত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয়েছে। গত বছর ১৮ আগস্ট ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী-আল ফারাবীর আদালতে এ মামলার আবেদন করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী। আদালত বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করেন এবং মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এদিকে শাপলা চত্বরের ঘটনায় হেফাজতের করা মামলায় শেখ হাসিনা ও বেনজীর আহমেদসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ১২ মার্চ দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ পরোয়ানা জারি করেন।

মামলার আবেদনে যাদের আসামী করা হয়েছে তারা হলেন-সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ হাসিনার সাবেক প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ফজলে নূর তাপস, সাবেক সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, হাসান মাহাবুব খন্দকার, র‌্যাবের সাবেক প্রধান এ কে এম শহিদুল হক, এনএসআইয়ের সাবেক প্রধান জিয়াউল হাসান, মতিঝিল বিভাগের সাবেক ডিসি বিপ্লব কুমার সরকার, মতিঝিল থানার সাবেক ওসি ওমর ফারুক, ১০ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মুনসুর আহমেদ, তৎকালীন মতিঝিল থানার ছাত্রলীগ সভাপতি মাহাবুবুল হক হিরন, ইমরান, আওয়ামী লীগ নেত্রী মমতাজ পারভীন, মতিঝিল থানার সাবেক ওসি ফরমান আলী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন সালু, মতিঝিলের সাবেক ডিসি নাজমুল আলম, হামদাদ গ্রুপের অবসরপ্রাপ্ত ডাইরেক্টর মেজর ইকবাল, ডিসি মতিঝিল বিভাগ আশরাফুজ্জামান, মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, এমদাদুল হক ও শেখ শাহে আলম তালুকদার।

যা বলেছেন নাসির উদ্দিন এলান: মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান গতকাল রোববার দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, অধিকার সেদিন সত্য উন্মোচিত করে প্রকাশ করেছিল এটা ছিল অপরাধ। এ কারণে ফ্যাসিস্ট সরকারের মিথ্যা মামলায় আমাদেরকে দীর্ঘ সময় জেল খাটতে হয়েছে। তিনি বলেন, সেদিনও পুরো সত্য প্রকাশ করতে পারিনি। কারণ সরকারের পক্ষ থেকে প্রচন্ড বাধা ছিল। তিনি বলেন, ৬১ জনের তালিকা আমরা দিয়েছিলাম, তবে প্রকৃতপক্ষে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি। তিনি বলেন, এটা আমাদের ব্যর্থতা নয়, আমাদের টিমকে কাজ করতে দেয়া হয়নি। যদি আমরা কাজ করতে পারতাম তাহলে তখনই প্রকৃত তথ্য উদঘাটন করতে পারতাম। যে কারণে আমরা পুরো তথ্য নয়, আংশিক তথ্য উদঘাটন করতে পেরেছি। তিনি বলেন, শাপলা চত্বরের মৃত্যুর ঘটনাটি ছিল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড।

অধিকারের পরিচালক বলেন, রাতের অন্ধকারে কোনো অপারেশন পৃথিবীতে কোথাও সাপোর্ট করে না। ৫ মে রাতে লাইট বন্ধ করে এতগুলো নিরস্ত্র মানুষের ওপর শসস্ত্র বাহিনী আক্রমণ চালায়। সেই আক্রমণের পর সরকার বয়ান তৈরী করে যে, একটি লোকও মারা যায়নি। সেই বয়ানের বিপরীতে আমরা ৬১ জনের তালিকা প্রকাশ করি। নাসির উদ্দিন এলান বলেন, দেশে বহু মানবাধিকার সংগঠন আছে, সুশীল সমাজ নামধারী বহু ব্যক্তি আছেন কিন্তু যখন তারা দেখেছে এরা মাদরাসার ছাত্র, এরা ইসলামপন্থী তখনই তাদের কাছে মনে হয়েছে এদের মানবাধিকার নেই! এরা মরে সাফ হয়ে গেলেও প্রতিবাদ করার কেউ নেই। শুধু তাই নয়, প্রতিবাদ না করে অনেকে সমর্থনও করেছে। নাসির উদ্দন এলান দুঃখ করে বলেন, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী দাবি করা খুশি কবির বিভিন্ন টকশোতে অধিকারের এই প্রতিবেদনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করেছে। এরা হিউম্যান রাইটসের কথা বলে কিন্তু যখন দাড়ি টুপিওয়ালা দেখে তখন বলেন ওরা মৌলবাদী। এদেরকে চিহ্নিত করে রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন এই মানবাধিকার কর্মী।