ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আঞ্চলিক কার্যালয়, জনসেবা বিভাগসহ সব বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নগর ভবনে চলমান অবস্থান কর্মসূচির আয়োজকেরা। নাগরিক সেবা যেন ব্যাহত না হয়, সে জন্যই এ আহ্বান জানানো হয়েছে। তবে জুলাই অভ্যুত্থানের বিরোধিতাকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নগর ভবনে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও সতর্ক করা হয়েছে। গতকাল রোববার ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি চলার সময় এসব কথা বলেন ওই আন্দোলনের সমন্বয়ক সাবেক সচিব মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ডিএসসিসির যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে এখানে থাকেন তাদের আহ্বান করছি তারা নিজনিজ কার্যালয়ে ফিরে যাবেন, কাজ করবেন। তবে ফ্যাসিবাদের দোসর, দালালদের জন্য নগর ভবন ব্লকেড অবস্থায় থাকবে। তারা নগর ভবনে আসলে নিজ দায়িত্বে আসবেন। নগর ভবন ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরমুক্ত হোক আমরা এটাই চাই।
গতকাল দুপুরে নগর ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ঢাকাবাসী’ নামের প্ল্যাটফর্মের প্রধান সমন্বয়কারী মশিউর রহমান বলেন, আমরা চাই না জনগণের সেবা কোনোভাবেই ব্যাহত হোক। তাই ডিএসসিসির সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কাজে ফেরার আহ্বান জানাচ্ছি।
এ সময় মশিউর রহমান স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়াকে অপসারণেরও দাবি জানান। তিনি অভিযোগ করেন, সংবিধান লঙ্ঘন করে এবং আদালতের আদেশ অমান্য করে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ গ্রহণে বাধা দিয়েছেন তিনি। এ জন্য তাঁকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।
মশিউর রহমান বলেছেন, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকরা গত এক মাসের বেশি সময় ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাচ্ছে।
গত ১৪ মে থেকে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা নগর ভবনে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর শপথ গ্রহণ নিশ্চিত করতেই এ কর্মসূচি। পরদিন ১৫ মে তারা নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেন। এতে টানা ৪০ দিন ধরে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম অচল হয়ে আছে। মাঝে ঈদ ঘিরে ছুটির কদিন নগর ভবনে ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলনে পাওয়া যায়নি। ঈদের ছুটির শেষে অফিস খোলার প্রথম দিন থেকেই ফের সেখানে আন্দোলন শুরু করেন ইশরাক সমর্থকরা। সে সময় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি সেবা কার্যক্রমে অচলাবস্থা কাটাতে নিজের তত্ত্বাবধানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন ইশরাক। জন্ম নিবন্ধন সনদসহ দৈনন্দিন জরুরি সব সেবা চালু থাকার ঘোষণা দিয়ে ইশরাক বলেছিলেন, অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনা করা কর্মকর্তারা অফিস করতে পারবে না। এর মধ্যে নগর ভবনে কর্মচারীদের নিয়ে সভা করেন ইশরাক। সভার ব্যানারে তার নামের আগে লেখা ছিল ‘মাননীয় মেয়র’।
এরপর গত ১৮ জুন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, মেয়াদ ‘শেষ হয়ে যাওয়ায়’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের আর শপথ নেওয়ার সুযোগ নেই।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, তার (আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া)ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নাগরিক সেবা পেতে জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলা হচ্ছে। এর দায়ভার আন্দোলনকারী ঢাকাবাসীর ওপর চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
মশিউর রহমান বলেন, আমরা এই আন্দোলনে ঢাকাবাসীর যাবতীয় নাগরিক সুবিধা সহজ করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা বর্জ্য, পরিবহন বিভাগকে টেলিফোনে গাড়ির তেল বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন। যেন বর্জ্য পরিবহন করতে না পারে, এর দায়ভার আন্দোলনকারীদের ওপর পড়বে। এছাড়া জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনসহ নাগরিক সেবা না দিতে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদেরও নির্দেশ দেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেনকে পৌনে ২ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র হন আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপস।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এমন পরিস্থিতিতে ইশরাক সমর্থকরা আন্দোলনে নামলে নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।