জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও নবেম্বর মাসের মধ্যে গণভোট আয়োজনসহ পাঁচ দাবিতে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত ও সমমনা সাতটি রাজনৈতিক দল। গতকাল রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল গোলাম পরওয়ার এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০শে অক্টোবর রাজধানীতে, ২৫শে অক্টোবর বিভাগীয় শহরে এবং ২৭শে অক্টোবর জেলা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের কর্মসূচি পালন করা হবে।
সমমনা রাজনৈতিক দলের দাবিসমূহ হলো- ১। জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও উক্ত আদেশের উপর আগামী নবেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা ২। আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা ৩। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা ৪। ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা ৫। স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
এসব দাবিতে যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে চলমান আন্দোলনের চতুর্থ পর্বের নিম্নরূপ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ২০ অক্টোবর রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল। ২৫ অক্টোবর সকল বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল। ২৭ অক্টোবর সকল জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল। সংবাদ সম্মেলনে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়, আগামী ২৭ অক্টোবরের মধ্যে দাবী মানা না হলে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমাদ, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ডক্টর আমহদ আব্দুল কাদের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশে খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমীর, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার রাশেদ প্রধান, সহসভাপতি ও মুখপাত্র, জাগপা, নিজামুল হক নাইম, মহাসচিব বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি প্রমুখ।
এসময় প্রায় অভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামী ও সমমনা দলগুলো কেন জুলাই জাতীয় সনদে সই করার পরও রাজপথে কর্মসূচি দিয়েছে, সে ব্যাখ্যা দেন গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে। জুলাই সনদে যেসব সংস্কার প্রস্তাবে দলগুলো একমত হয়েছে, সনদে স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সেসব সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে একমত পোষণ করা হয়েছে। তবে এখনো জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং এ সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে গণভোট আয়োজনের কাজ বাকি রয়ে গেছে। জুলাই সনদেও বাস্তবায়ন আদেশ ও গণভোট কখন হবে, সে তথ্য উল্লেখ নেই। এ জন্য জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পরও মাঠের কর্মসূচি দিয়েছে সমমনা দলগুলো।
গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, কেউ কেউ একইদিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোটের প্রস্তাব দিয়েছে। এতে অনেক জটিলতা থাকায় জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো দ্বি-মত জানিয়েছে। একইদিনে দুটি ভোট হলে অল্প সময়ের মধ্যে একজন ভোটারকে জাতীয় নির্বাচনের প্রতীকের মধ্যে ভোট দিতে হবে আবার গণভোটের হ্যাঁ-না ভোটও দিতে হবে। ফলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সবার ভোট গ্রহণ করা যাবে না। অনেক ভোটার ভোট দেয়ার বাইরেও থেকে যেতে পারেন। বিএনপি আগামী ফেব্রুয়ারিতে একই দিনে গণভোট ও সংসদ নির্বাচনের দাবি জানালেও জামায়াত তার বিরোধিতা করে নভেম্বরে গণভোটের দাবি তুলেছে।
গোলাম পরওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে হলে ভোটকেন্দ্রে কোনো ছোটখাটো দুর্ঘটনা বা অস্থিরতার ফলে এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যা গণভোটের স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতায় হস্তক্ষেপ করবে। সে জন্য একই দিনে গণভোট করা যাবে না।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সোমবার রাজধানীতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল; ২৫ অক্টোবর সব বিভাগীয় শহরে এবং ২৭ অক্টোবর সব জেলা শহরে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল। পাঁচ দাবির মধ্যে আরো রয়েছে,আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে/উচ্চ কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সকলের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সকল জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। এসব দাবিতে চলমান আন্দোলনের চতুর্থ পর্বের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। ২৭ অক্টোবরের মধ্যে দাবি মানা না হলে দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান নেতারা।
গোলাম পরওয়ার বলেন, সরকার সিদ্ধান্ত নিলে নবেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করতে পারবে নির্বাচন কমিশন। তবে জাতীয় নির্বাচনের দিন কোনভাবেই গণভোট দেয়া যাবে না। তিনি আরো বলেন, আমরা অভিন্ন কর্মসূচি পালনের পর সময়ের দাবি অনুযায়ী যৌথভাবে কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছি। তবে এটা নির্বাচনি কোন জোট নয়, জোট গঠনের বিষয়ে কোন আলোচনা হয়নি। সময় বলে দেবে আমরা কোন দিকে যাব। এ সময় ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুছ আহমাদ বলেন, দেশ ও জাতির স্বার্থে আমরা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, নেজামে ইসলাম পার্টির মহাসচিব মুফতি মুসা বিন ইজহার, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র প্রকৌশলী রাশেদ প্রধান এবং বাংলাদেশ ডেভলেপমেন্ট পার্টির জয়েন্ট সেক্রেটারি লস্কর মোহাম্মদ তাজরির সহ সব দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।