ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধাবস্থার প্রেক্ষিতে দেশের সীমান্ত এলাকায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশের সকল ইউনিটকে তিন দফা নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। একই সাথে সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যও বলা হয়েছে। গত বুধবার পুলিশ সদর দফতরের অপারেশন শাখার এডিশনাল ডিআইজি শাহজাদা মো: আসাদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক পত্রে এই নির্দেশনার কথা বলা হয়।

পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, তিন দফা নির্দেশনায় রয়েছে, সীমান্ত এলাকায় কোন দুষ্কৃতকারী যাতে কোন প্রকার উস্কানিমূলক আচরণ বা অস্থিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সারাদেশে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জীবন ও সম্পদের উপর কোন দুষ্কৃতকারী যাতে কোন প্রকার হামলা/আক্রমণ/ভাঙচুর ইত্যাদি না করতে পারে এবং উস্কানিমূলক আচরণ বা অস্থিশীলতা সৃষ্টির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন ও প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। মোবাইল, ইন্টারনেটসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (যেমন: ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার ইত্যাদি) গুজব/প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যাতে অস্থিশীলতা সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সর্বোচ্চ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সূত্র মতে, নির্দেশনার এই পত্রটি বুধবারই পুলিশের সকল ইউনিটে পাঠানো হয়েছে। ইউনিটগুলো নির্দেশনার আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে সুত্রটির দাবি।

এর আগে বুধবার বিকেলে রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে পুলিশের আইজি বাহারুল আলম পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধাবস্থায় বাংলাদেশের আইনশৃংখলা নিয়ে উপস্থিত সংবাদকর্মীদের এক প্রশ্নের জবাবে জানান, ওই দুই দেশের সংঘাতকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যেন বিঘ্নিত না হয়, সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলার পুলিশ সুপারদের (এসপি) আগেই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করব যেন এর পরিপ্রেক্ষিতে (ভারত-পাকিস্তান সংঘাত) আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয়।

দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ভারত-পাকিস্থান সংঘাতের মধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাগুলোর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর এসপিদের সতর্ক থাকতে নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। তারা জানান, দুই দেশের চলমান উত্তেজনার মধ্যে সীমান্ত দিয়ে কোনো সন্ত্রাসী-চোরাকারবারিসহ অন্য কেউ যাতে অনুপ্রবেশ করে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা বিঘ্ন করতে না পারে, সে বিষয়েও পুলিশকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

সীমান্তবর্তী কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনার পর সীমান্তবর্তী থানা পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকায় কেউ যাতে উসকানিতে পা না দেয়, সে বিষয়ে সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে সার্বিক বিষয়ে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে নিজ নিজ দায়িত্বের বিষয়ে অবগত করা হয়েছে। যার যার অবস্থান থেকে সবাই সতর্ক রয়েছে।

জানা গেছে, দেশের ৮টি বিভাগের মধ্যে ঢাকা ও বরিশাল ছাড়া অন্য ৬টি বিভাগের ৩২টি জেলার সঙ্গে ভারত ও মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে ৩০টি জেলার সীমান্ত রয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি তিনটি জেলার সীমান্ত থাকলেও রাঙামাটি জেলার সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে দুটি দেশেরই।

যশোর জেলার পুলিশ সুপার রওনক জাহান বলেন, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্ত এলাকায় অবস্থিত থানাগুলোর পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে।

সীমান্ত জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জের এসপি রেজাউল করিম বলেন, তার জেলায় চারটি থানা রয়েছে সীমান্ত এলাকায়। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনার পর প্রতিটি থানাকে যে কোনো ধরনের উত্তেজনা ঠেকাতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিজিবির আওতাধীন এলাকার বাইরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় তারা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন।

চট্টগ্রাম বিভাগের সীমান্ত সংলগ্ন জেলাগুলো চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, ফেনী, কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি রয়েছে। এর মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবানের সীমান্ত থাকলেও রাঙামাটির একটি অংশের সঙ্গে ভারতের সীমান্তও রয়েছে।

খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, তারা জেলায় দায়িত্বরত সব সরকারি সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে এরই মধ্যে বিজিবি ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে পুলিশের সমন্বয় সভা হয়েছে। ফেসবুকে কোনো ধরনের গুজব নজরে এলেই এর বিপরীতে সত্যটা প্রকাশ করা হচ্ছে মানুষের মধ্যে।

সীমান্ত জেলার কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান বলেন, উত্তেজনার মধ্যে যাতে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ ঘটতে না পারে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যাতে অবনতি না হয়, সেজন্য জেলা পুলিশ বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছে।

লালমনিরহাট জেলার এসপি মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, সীমান্তকেন্দ্রিক নির্দিষ্ট এলাকায় বিজিবি দায়িত্ব পালন করে থাকে। এসব ক্ষেত্রে বিজিবির প্রয়োজনে পুলিশ সব ধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। সীমান্ত এলাকাগুলোর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, বিজিবি ও স্থানীয় থানা সমন্বয় করে কাজ করছে।

সীমান্ত জেলা সিলেটের এসপি মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানও জানিয়েছেন, তারা বিজিবির সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বলেন, সিলেট জেলার সীমান্তবর্তী সব থানার ওসিদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কোনো ধরনের কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা সতর্ক আছি।

ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ভারত-পাকিস্তানের সংঘাতের কারণে কেউ যেন কোনো উসকানিমূলক পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে, সেজন্য কড়া নজরদারি রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আমরা নজর রাখছি, যেন কেউ বিদ্বেষমূলক কিছু ছড়িয়ে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে না পারে।

জানতে চাইলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) শহিদুর রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনার আলোকে আমাদের আভ্যন্তরীন নিরাপত্তা জোরদারে অধিক্ষেত্রভ’ক্ত এলাকায় আমরা সতর্ক আছি। নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।