বিমান ভাড়া ও বাড়ী ভাড়া কমানোর মাধ্যমে আগামী হজ্বের খরচ কমানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন ধর্ম বিষয়ক উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, হজ্বের খরচ কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের হাতে বিমান ভাড়া ও বাড়িভাড়া কমানো ব্যতীত অন্য কোন বিকল্প নেই। গত হজ্ব মৌসুমে বিমানভাড়া কমানোর বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। এর ফলে গতবার বিমান ভাড়া প্রায় ২৭ হাজার টাকা কমানো সম্ভব হয়েছিল। এবারও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বিমান উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে খুবই পজিটিভ। আমরা খুব সহসাই এবিষয়ে আনুষ্ঠানিক সভায় বসব। এছাড়া, বাড়িভাড়া কমানোর বিষয়েও আমাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। তিনি এজেন্সীদের সতর্ক করে বলেছেন, কোন এজেন্সী হজ্বযাত্রীদের সাথে প্রতারণা করলে আইন অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে। হজ্বযাত্রীগণও এজেন্সীর সাথে সেবার বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হওয়া ও ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া লেনদেন করা থেকে বিরত থাকার জন্য আহবান জানান।

দৈনিক সংগ্রামের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাতকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।

দৈনিক সংগ্রাম: গত বছর সরকারি ব্যবস্থায় হাজীগণ ভালো সেবা পেয়েছেন, শেষে টাকাও ফেরত পেয়েছেন। সরকারিভাবে হজ্বযাত্রীর সংখ্যা বাড়ানোর কোন উদ্যোগ নেবেন কিনা?

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সুষ্ঠু ও সাবলীল হজ্ব ব্যবস্থাপনার জন্যই মূলত সরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। বিশ্বের সর্বাধিক হজযাত্রী প্রেরণকারী তিনটি দেশ যথাক্রমে ইন্দোনেশিয়া, ভারত ও পাকিস্তানের সিংহভাগ হজযাত্রী সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্ব পালন করে থাকেন। ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ৯৫%, ভারতের ৭০% ও পাকিস্তানের ৫০% হজযাত্রী সরকারি মাধ্যমে হজে যান। কিন্তু এক্ষেত্রে আমাদের দেশের চিত্রটি বিপরীত। এদেশের মোট হজযাত্রীর মাত্র ৭-৮ শতাংশ হজযাত্রী সরকারি মাধ্যমে হজ্বে যান। আমরা এই সংখ্যা বৃদ্ধি করতে চাই। ইতোমধ্যে আমরা বেশ কিছু উদ্যোগও নিয়েছি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ্ব পালনের বিষয়টিকে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও উপজেলা মাসিক সভার নিয়মিত এজেন্ডা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথাক্রমে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদেরকে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদের ইমামদেরকে প্রাক-খুতবায় সরকারি হজ্ব ব্যবস্থাপনার সুবিধাদি সম্পর্কে আলোচনার করে মুসল্লীদেরকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মোবাইলে খুদে বার্তা প্রেরণের মাধ্যমেও জনগণকে সরকারি মাধ্যমে হজ্বে যাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

দৈনিক সংগ্রাম: হজ্বের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। ওমরা করতেও বিমানের টিকিটের দাম বেশি। হজ্বের খরচ কমানো ও বিমানের টিকিটের দাম কমানোর কোন সুযোগ আছে কিনা?

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: হজ্বের খরচ বৃদ্ধির পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এরমধ্যে একটি অন্যতম কারণ হলো হজ্ব ব্যবস্থাপনা ক্রমান্বয়ে উন্নত হচ্ছে, হজযাত্রীদের সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হচ্ছে। আরেকটি কারণ হলো ডলারের দামও বিগত কয়েক বছরে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে ডলারের দাম ছিলো ৮৬ টাকা, এখন সেটা প্রায় ১২২ টাকা। মূলত এদুটো কারণেই হজ্বের খরচ অনেকটা বেড়ে গেছে।

সত্যি কথা বলতে কী, হজ্বের খরচ কমানোর ক্ষেত্রে আমাদের হাতে বিমান ভাড়া ও বাড়িভাড়া কমানো ব্যতীত অন্য কোন বিকল্প নেই। গত হজ্ব মৌসুমে বিমানভাড়া কমানোর বিষয়ে আমরা সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলাম। এর ফলে গতবার বিমান ভাড়া প্রায় ২৭ হাজার টাকা কমানো সম্ভব হয়েছিল। এবারও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে বিমান উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে কথা হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে খুবই পজিটিভ। আমরা খুব সহসাই এবিষয়ে আনুষ্ঠানিক সভায় বসব। এছাড়া, বাড়িভাড়া কমানোর বিষয়েও আমাদের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে।

দৈনিক সংগ্রাম: চলতি বছর এজেন্সি প্রতি হজ্ব যাত্রীর কোটা কত এবং এ কোটা কমানোর কোন সুযোগ আছে কিনা?

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: গতবছরের ০৯ ডিসেম্বর আমাদেরকে জানানো হয়েছে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের হজ্ব এজেন্সি প্রতি হজ্বযাত্রীর ন্যূনতম কোটা দুই হাজার জন। এ বিষয়ে আমি সৌদি হজ্ব ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি মিনিস্টারের সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁকে অনুরোধ করে এসেছি যাতে এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রীর কোটা এবছরও গতবারের ন্যায় এক হাজার জনই রাখা হয়। তিনি তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। আমরা এখনও আনুষ্ঠানিক কোন পত্র পাইনি। তবে এজেন্সি প্রতি ন্যূনতম হজযাত্রী কোটা এবছরও এক হাজার জনই থাকার ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।

দৈনিক সংগ্রাম: কোন হাজী এজেন্সি কর্তৃক প্রতারিত হলে সরকার কি ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে? আর প্রতারিত হওয়ার আগে হজযাত্রীর কি ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: কোন হজ্ব এজেন্সি যদি হজযাত্রীর সাথে প্রতারণা করে এবং সেটা যদি প্রমাণিত হয় তাহলে হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা বিধিমালা ২০২২ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা পেতে হজ গমনেচ্ছুক ব্যক্তিদেরকে কতিপয় বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। হজ্ব এজেন্সি মালিক কিংবা তার বৈধ প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করে হজ্ব প্যাকেজ, প্রতিশ্রুত সেবা ও প্যাকেজ মূল্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা নিতে হবে। এজেন্সির সাথে লিখিত চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। ব্যাংক একাউন্ট ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে টাকা লেনদেন করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

দৈনিক সংগ্রাম: সৌদি আরব কর্তৃক মর্ডান হজ নামক হজ্ব ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত বলবেন কি?

ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন: সৌদি সরকার প্রতিবছরই হজ্ব ব্যবস্থাপনায় নতুন নতুন পলিসি বা কৌশল অবলম্বন করে থাকেন। গত হজ মৌসুমে তারা "নো হজ্ব উইদাউট পারমিট" এই পলিসি অবলম্বন করেছিল। আধুনিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে হজ্ব ব্যবস্থাপনাকেই মডার্ন হজ্ব হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। হজ্ব ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেশ কয়েক বছর আগ থেকেই শুরু হয়েছে এবং এটি ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে। বর্তমানে 'নুসুক মাসার' এই অনলাইন প্লাটফর্মের মাধ্যমে মিনা-আরাফায় তাঁবু গ্রহণ, সার্ভিস কোম্পানির সাথে চুক্তি, বাড়িভাড়া, পরিবহন চুক্তি, ক্যাটারিং চুক্তি, ভিসা প্রসেসিং প্রভৃতি সম্পন্ন করা হয়ে থাকে। এর পাশাপাশি এআই ও রোবটিক্স প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ভীড় ব্যবস্থাপনা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, হজযাত্রীদের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহায়তা প্রদান, জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, আবহাওয়া পরিস্থিতি বিবেচনায় কুলিং সিস্টেম সমন্বয় করা, স্নার্ট স্ক্রীনের মাধ্যমে হজযাত্রীদেরকে বিভিন্ন ভাষায় সময়োচিত তথ্য ও সহায়তা দান, সেল্ফ ড্রাইভিং বাস সার্ভিসের মাধ্যমে হজযাত্রী পরিবহন প্রভৃতি মডার্ন হজ ব্যবস্থাপনার অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।