বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমাদের ৫-দফা গণদাবি ইতোমধ্যে জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই দেশের জনগণ এ দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন দিয়ে রাজপথের আন্দোলনে শামিল হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত অবিলম্বে জনগণের ৫-দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। সরকার যদি জনগণের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে এবং বিদ্যমান সমস্যার দ্রুত সমাধান না করে তাহলে দেশের জনগণ তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য কঠোর হতে বাধ্য হবে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টায় মগবাজার আল-ফালাহ মিলনায়তনে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনসহ ৫-দফা দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এর সঞ্চালনায় সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. এএইচএম হামিদুর রহমান আজাদ (সাবেক এমপি), মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোমাইন, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের নায়েবে আমীর আবদুর রহমান মূসা প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সফল গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর রাষ্ট্রের প্রয়োজনকে সামনে রেখে জনগণের প্রত্যাশা পূরণের লক্ষ্যে গণহত্যার বিচার, রাষ্ট্র সংস্কার ও স্বৈরাচার ফিরে আসার সকল পথ রুদ্ধ করার প্রত্যয় নিয়ে কাজ শুরু করেন। গঠিত হয় বিভিন্ন সংস্কার কমিশন। কমিশনগুলোর সুপারিশের ভিত্তিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাবের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনায় মিলিত হন। দীর্ঘ আলোচনার পর ৮৪টি প্রস্তাব সিদ্ধান্ত আকারে গৃহীত হয়। অনেকগুলো প্রস্তাবের সাথে দু’একটি রাজনৈতিক দল ভিন্নমত পোষণ করায় অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদ প্রস্তুত করেছেন। দেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জুলাই জাতীয় ঘোষণাপত্র ও জুলাই জাতীয় সনদের প্রয়োজনীয় সংশোধনীসহ তাদের পরামর্শ সরকারের নিকট উপস্থাপন করে। জামায়াতে ইসলামী বরাবরই জুলাই জাতীয় সনদকে আইনগত ভিত্তি দেওয়ার বিষয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করে আসছে। জাতির ক্রান্তিলগ্নে ‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ হিসেবে অতীতের বিভিন্ন নজির ও উদাহরণ তুলে ধরে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তির বিষয়ে জামায়াতে ইসলামী’র অবস্থান বারবার ব্যক্ত করে আসছে। এ লক্ষ্যে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি দেওয়ার জন্য আইন ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াতে ইসলামী ইতোমধ্যে সরকারের কাছে দুইটি প্রস্তাব করেছে। প্রথমত: জুলাই জাতীয় সনদের জন্য ‘সংবিধান আদেশ’ জারি করা দ্বিতীয়ত: এই সনদের অধিকতর আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য নির্বাচনের পূর্বে গণভোট প্রদান করে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন করা। সেটা না হলে জুলাই জাতীয় সনদের আইনগত ভিত্তি প্রদান ব্যতীত ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত অভ্যুত্থান ও তার অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে পারে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালো টাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, মানসম্মত পার্লামেন্ট এবং দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ প্রতিটি ভোট মূল্যায়নের লক্ষ্যে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। বাংলাদেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, কলামিস্ট, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ ও নানা শ্রেণিপেশার মানুষ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবির সাথে একমত পোষণ করেছেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার আরো বলেন, আমরা লক্ষ্য করছি জনগণের দাবিসমূহ কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। এমতাবস্থায় জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়-ভিত্তিক ও জবাবদিহি-মূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর আন্দোলনের ৫-দফা গণদাবি জাতির সামনে তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে গণ-আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ঘোষিত কর্মসূচিতে সারাদেশে বিপুল সংখ্যক জনগণ অংশগ্রহণ করেছে। এজন্য আমরা দেশবাসীকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আন্দোলনের কর্মসূচি জাতির সামনে তুলে ধরার জন্য সকল গণমাধ্যমের প্রতি আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, আজ আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, আমাদের ৫-দফা গণদাবি ইতোমধ্যে জনগণের কাছে যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য হয়েছে। তাই দেশের জনগণ এ দাবির প্রতি ব্যাপক সমর্থন দিয়ে রাজপথের আন্দোলনে শামিল হয়েছে। বর্তমান সরকারের উচিত অবিলম্বে জনগণের ৫-দফা দাবি মেনে নিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। সরকার যদি জনগণের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে এবং বিদ্যমান সমস্যার দ্রুত সমাধান না করে তাহলে দেশের জনগণ তাদের ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য কঠোর হতে বাধ্য হবে। এ লক্ষ্যে চলমান আন্দোলনকে আরও জোরদার করার জন্য কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর মধ্যে রয়েছে, ৫-দফা গণদাবির পক্ষে জনমত গঠনের জন্য ১ অক্টোবর থেকে ৯ অক্টোবর পর্যন্ত সারাদেশে গণসংযোগ। এ উপলক্ষে মতবিনিময় সভা, গোলটেবিল বৈঠক, সেমিনার ইত্যাদি আয়োজন করা হবে, ১০ অক্টোবর রাজধানীসহ সকল বিভাগীয় শহরে গণমিছিল, ১২ অক্টোবর সারাদেশে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি পেশ।

এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য তিনি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।