রাজধানীর শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক ও বেইলি রোড—এই ব্যস্ত এলাকাগুলোর ফুটপাত এখন পথচারীর নয়, হকারদের দখলে। প্রতিদিন অফিসযাত্রী, শিক্ষার্থী, অভিভাবক আর সাধারণ মানুষের চলাচলের অন্যতম রুট হলেও হাঁটার জায়গা নেই বললেই চলে।
ফুটপাত দখল করে সারি সারি দোকান বসেছে। চলছে কাপড়, ফল, খাবার, মোবাইল এক্সেসরিজসহ হরেক রকম পণ্য বিক্রি। আর এসব দোকানের নেই কোনো বৈধ অনুমোদন, তবু চলছে বুক ফুলিয়ে ব্যবসা।
সিদ্ধেশ্বরী ও বেইলি রোড এলাকার অবস্থাও একই। এখানে রয়েছে একাধিক নামিদামি স্কুল-কলেজ, বিশেষ করে গার্লস স্কুল। প্রতিদিন শত শত অভিভাবক সন্তানদের আনা-নেওয়ায় অংশ নেন। কিন্তু ফুটপাত ও সড়কের এমন অবস্থা যে, স্বাভাবিকভাবে চলাচল করাই যেন এক যুদ্ধ। স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের জন্য এটি রীতিমতো আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পথচারীরা বলছেন, শান্তিনগর মোড় থেকে মালিবাগ সিআইডি অফিস হয়ে মৌচাক পর্যন্ত হাঁটার সময় প্রায়শই পড়তে হয় ভয়াবহ ভিড়ে। ঠাসাঠাসি এই ভিড়ের মধ্যে মানিব্যাগ বা মোবাইল ফোন হারানোর ঘটনা ঘটে প্রায় নিয়মিত। আবার নারীরা হচ্ছেন শারীরিক হয়রানির শিকার। ভিড়ের সুযোগে কেউ কেউ স্পর্শকাতরভাবে আচরণ করে, কিন্তু প্রতিবাদ করার উপায় থাকে না।
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক ছাত্রীর মা বলেন, “প্রতিদিন মেয়েকে স্কুলে আনা-নেওয়া করি। রাস্তা পার হতে গেলে হকারদের দোকান ঠেলে ঠেলে যেতে হয়। এত ভিড় যে, মেয়ের হাত শক্ত করে না ধরলে চোখের সামনে হারিয়ে যেতে পারে। নিজেও অনেকবার ভিড়ের মধ্যে অস্বস্তিকর পরিস্থিতির শিকার হয়েছি।”
এদিকে হকারদের দখলের কারণে পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমে হাঁটছেন। এতে করে বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। সেই সঙ্গে যত্রতত্র পার্কিং, হকারদের ভ্যানগাড়ি, ঠেলাগাড়ি, খাবারের দোকান—সব মিলে যান চলাচল হয়ে পড়েছে চরমভাবে বিঘ্নিত। যানজটের কারণে সময় অপচয়ের পাশাপাশি জরুরি প্রয়োজনে চলাফেরাও হয়ে পড়ছে কঠিন।
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রাজধানীর অনেক এলাকায় হকার উচ্ছেদ অভিযান দেখা গেলেও শান্তিনগর-মৌচাকে সেই উদ্যোগের ছায়াও নেই। বরং হকারদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, এসব দখলদার হকারদের পেছনে রয়েছে ‘অদৃশ্য শক্তি’—যারা প্রশাসনিক নজর এড়িয়ে ব্যবসা চালাতে সহায়তা করছে। ফলে তারা নির্ভয়ে দিনের পর দিন বসে ব্যবসা করছে।
পথচারী মো. ইকবাল হোসেন বলেন, “ফুটপাতে হাঁটার সুযোগ নেই। মানুষের ভিড় আর দোকানের ভিড়ে মাঝেমধ্যে হাঁটাও বন্ধ হয়ে যায়। একবার মৌচাকে এমন ভিড়ের মধ্যে পড়েছিলাম যে, মানিব্যাগ খোয়া গেল। কেউ কিছু দেখল না, বলতেও পারলাম না।”
এ অবস্থায় ক্ষুব্ধ নগরবাসীর একটাই দাবি—ফুটপাত হোক পথচারীর, হকারের নয়। নিয়মিত ও স্থায়ী উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে দখলমুক্ত করতে হবে এ এলাকা। না হলে এই দখলদারির নৈরাজ্য আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।