দেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন মূল্য যৌক্তিক নয় এবং বিপণনব্যবস্থা ত্রুটিযুক্ত বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) নতুন সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।
তিনি বলেন, দেশে খাদ্যপণ্যের উৎপাদন মূল্য যৌক্তিক নয়। শাকসবজির উৎপাদন খরচ পাশের দেশের চেয়ে বেশি। বিপণনব্যবস্থাও ত্রুটিযুক্ত। ফরিয়া থেকে আড়তদার, আড়তদার থেকে পাইকারি, পাইকারি থেকে খুচরা এভাবেই পণ্যের দাম বাড়ে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এ সাংবাদিক সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক, হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, প্রচার সম্পাদক মুসা মিয়া, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহা. শওকত আলী খান।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, কারওয়ান বাজারের উত্তর গেট দিয়ে ৩০ টাকার পটোল প্রবেশ করে সেটি অন্য গেট দিয়ে পাইকারি বা খুচরা বাজারে যখন আসে, তখন দাম বেড়ে হয় ৭০ টাকা। আমি যে সবজি ১০০ টাকায় কিনছি, সেটির ৮০ টাকা যদি কৃষক পেতেন, তাহলেও আমার-আপনার কষ্ট হতো না। কিন্তু কৃষক তো পাচ্ছেন ৩০ টাকা। মাঝখানে আমি ভোক্তা সেই জিনিস ১০০ টাকায় কিনছি। ওই ৭০ টাকা তো পথে পথে চলে যাচ্ছে।’ উৎপাদন খরচ হ্রাস ও বিপণনব্যবস্থা আধুনিক না করতে পারার কারণে এমন সমস্যা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। পূর্বাচল ৩০০ ফুট সড়কের পাশে শাকসবজি বিক্রির একটি হাব চালু হতে যাচ্ছে বলে জানান
তিনি বলেন, ‘আগামী ১ অক্টোবর ৩০০ ফুট সড়কের পাশে একটি হাব চালু হতে যাচ্ছে। কারওয়ান বাজারের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে চাই আমরা। সেখানে কৃষকেরা সরাসরি তাঁদের সবজি বিক্রি করবেন। তাঁদের কাছে থেকে পণ্য কিনে নিয়ে সরাসরি বাজারে চলে যাবেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। ২০ টাকা বা তারও কমে আপনি সেখান থেকে সবজি কিনতে পারবেন।’
ক্যাব সভাপতি বলেন, ‘নিত্যপণ্যের বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙাটা আসলেই চ্যালেঞ্জ। চার-পাঁচটি করপোরেট গ্রুপের পাশাপাশি প্রচুর অদৃশ্য হাত রয়েছে। এখানে শত শত, এমনকি হাজার হাজার লোক জড়িত হয়ে যাচ্ছেন। আমরা যদি যথাযথ ব্যবস্থা না নিতে পারি, তাহলে এই ফরিয়া, দালাল ও আড়তদার থেকে বের হতে পারব না। বাজারে শৃঙ্খলা আসবে না।
তিনি বলেন, ‘কৃষিঋণ প্রান্তিক কৃষকের কাছে কতটুকু পৌঁছায়, তা নিয়ে অনুসন্ধান হওয়া দরকার। রংপুরে আমরা দেখেছি, একটি সিন্ডিকেট করে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়। ফলে প্রকৃত কৃষকেরা এই ঋণ পান না; বরং তারা উচ্চ সুদে দাদন নিচ্ছেন।’ কৃষকেরা ন্যায্যমূল্যে সারও পাচ্ছেন না বলে মন্তব্য করেন ক্যাব সভাপতি।
ক্যাব বলেন, ‘ট্রাফিক বিভাগ থাকার পরও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আবার সিটি করপোরেশনকে আমরা কর দিচ্ছি। তারপরও মশার উৎপাত কমছে না। এই যে ডেঙ্গুর হচ্ছে, তার জন্য সিটি করপোরেশন দায়ী। জনমত তৈরি করে আমরা দেখিয়ে দেব, এ অনিয়মগুলো দূর করা সরকারের দায়িত্ব। আমরা সরকারের মুখপাত্র হব না, সহযোগী হিসেবে কাজ করব।
তিনি বলেন, আমরা কিন্তু আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থা নই। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের কিছু প্রশাসনিক ক্ষমতা আছে। তারা লড়াই করতে পারে, বিচার করতে পারে, প্রশাসনিক কিছু ব্যবস্থা নিতে পারে। একইভাবে বিএসটিআই ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকেও তাদের নিজ নিজ আইনে নির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আবার মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বা ইউএনও সাহেবরাও আইন প্রয়োগ করতে পারেন। কিন্তু আমরা সরাসরি আইন প্রয়োগ করতে পারি না। তবে আইন প্রয়োগ কীভাবে করতে হয়, সেই নির্দেশনা আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দিয়ে থাকি। যেমন, কোথায় অনিয়ম হচ্ছে তা চিহ্নিত করে জানাই, যাতে তারা আইন প্রয়োগ করতে পারে। এজন্য আমি সচেতনতামূলক আওয়াজ তুলি।
ক্যাব সভাপতি বলেন, যখন দেখি যে আমাদের এই আইনের ভেতরে থেকে কোনো সমাধান হচ্ছে না, তখন আমরা আদালতের আশ্রয় গ্রহণ করি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ডায়াবেটিক স্ট্রিপ ইস্যুতে যখন আমরা অভিযান চালাই, তখন দেখা গেল যে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ডিএনসিএফ-এর পক্ষে ছিল না, বরং বিপক্ষে কাজ করেছিল। অথচ তারা মূল দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা ছিল। তখন হাইকোর্টে রিট করে সরকারকে বাধ্য করা হয়েছিল এগুলো বন্ধ করতে। একইভাবে হার্টের বাল্ব ও রিং-এর দাম কমানোর ক্ষেত্রেও আদালতের নির্দেশের প্রভাব রয়েছে।
ক্যাব সভাপতি বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে আমরা যে প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব বিষয় দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাদের মাধ্যমে বিষয়গুলো সমাধান করার চেষ্টা করি। কেবল গুরুতর ক্ষেত্রে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হই।