সার উৎপাদনে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর আজ সোমবার সকাল ১০টায় শুরু হবে গণশুনানি। রাজধানীর বিয়াম অডিটরিয়ামে গণশুনানি গ্রহণ করবে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

পেট্রোবাংলা ১৬ টাকা থেকে দাম বাড়িয়ে ৪০টাকা করার প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবে সারে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। একইভাবে ২০২২ সালে গ্যাসের দাম ৪.৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা করা হয়, কিন্তু নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।

ট্রেড গ্যাপ (ভর্তুকি) সুরাহা না করে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে সার কারখানাগুলো তীব্র আর্থিক সংকটে পড়বে। গ্যাস বিল পরিশোধে বিলম্বসহ সারের উৎপাদন হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছে বিসিআইসি।

পেট্রোবাংলা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দাম বাড়ানো হলে বাড়তি ৭ কার্গো এলএনজি আমদানি করে সারে সরবরাহ করা হবে। ৬ মাস (অক্টোবর-মার্চ) পুরোমাত্রায় (২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট ৬ মাসের মধ্যে এপ্রিল-মে ১৬৫ মিলিয়ন হারে, জুনে ১৭৫ মিলিয়ন এবং জুলাই-সেপ্টেম্বর ১৩০ মিলিয়ন হারে গ্যাস সরবরাহ দেবে। শনিবার (৩ অক্টোবর) সার উৎপাদনে ৯২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হয়েছে।

বিসিআইসি জানিয়েছে, বর্তমানে প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের উৎপাদন খরচ পড়ছে ৩৮ টাকার মতো। বিসিআইসি ডিলারের কাছে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করে, আর ডিলার বিক্রি করেন ২৭ টাকা দরে। ট্রেড গ্যাপ (উৎপাদন ও বিক্রয়মূল্যে ঘাটতি) ১৩ টাকা ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করছে সরকার। গ্যাসের দাম বেড়ে গেলে সারের উৎপাদন খরচ আরও বেড়ে যাবে। সেই ট্রেড গ্যাপের (ভর্তুকি) আগে সুরাহা হওয়ার দরকার।

বিসিআইসি তার রিপোর্ট বলেছে, আগের সরবরাহ বাড়নোর কথা বলে গ্যাস দাম বাড়িয়ে নিয়েছে পেট্রোবাংলা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শুধুমাত্র ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসি প্রায় পুরোমাত্রায় উৎপাদন করেছে। যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি গ্যাস অভাবে ৩৬১ দিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল। চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি বন্ধ ছিল ২৭৩দিন, ঘোড়াশাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি ১৯৮ দিন বন্ধ ছিল। আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি মাত্র ৩.৭৫ শতাংশ সময় উৎপাদনে ছিল। প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আগের বছরের তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কমেছে।

ঘোড়াশাল পলাশ ফার্টিলাইজার পিএলসির দৈনিক চাহিদা ৭২ মিলিয়ন ঘনফুট, শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের চাহিদা ৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের চাহিদা ৪৮ মিলিয়ন ঘনফুট। এরমধ্যে ১৯৮১ সালে প্রতিষ্ঠিত আশুগঞ্জ সার কারখানা অনেক পুরনো হওয়ায় গ্যাস খরচ অনেক বেশি, যে কারণে কারখানাটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া বিদেশি কোম্পানির মালিকানাধীন কাফকো সারকারখানায় দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট। কাফকোকে চুক্তির আওতায় নিরবিচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ করা হয়। আর তাদের কাছ থেকে আন্তর্জাতিক দরে ডলারে সার কিনে নেয় বাংলাদেশ। সম্প্রতি কোম্পানিটির সঙ্গে ৩০ টাকা দরে চুক্তির নবায়ন করা হয়েছে।

বিসিআইসি দাবি করেছে, বছরে ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন ইউরিয়া সার যোগান দিতে হয়। গ্যাসের অভাবে আমদানি করে ১৬ থেকে ২১ লাখ টন যোগান দিতে হয়। গ্যাসের যোগান পেলে ১৮ থেকে ২২ লাখ টন ইউরিয়া উৎপাদন করা সম্ভব রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সার কারখানায়। গ্যাস অভাবে বন্ধ থাকায় কারখানাগুলো কুলিং টাওয়ার, ইলেকট্রিক্যাল বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। যার কারণে অপরেশনাল খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

বিসিআইসি ৫ ধরনের উৎপাদনের চিত্র তুলে ধরেছে রিপোর্টে। এতে ১৫ লাখ, ১৬ লাখ, ১৭ লাখ, ১৮ লাখ এবং ২০ লাখ টন উৎপাদনের চিত্র দেখিয়েছে। বলা হয়েছে প্রস্তাবিত দর ৪০ টাকা হলে তখন ১৫ লাখ টনে খরচ পড়বে ৬৫ টাকা, ১৬ লাখ টনে ৬৩ টাকা, ১৭ লাখ টনে ৬১ টাকা, ১৮ লাখ টনে ৫৯ টাকা এবং ২০ লাখ টনে পড়বে ৫৪ টাকা।