গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে সংবিধানে যেকোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থি হবে না বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। গতকাল বৃহস্পতিবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে করা আপিলের নবম দিনের শুনানিতে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের পেছনে যে যুক্তি দেয়া হয়েছিল তা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও ভ্রান্তপ্রসূত। ‘গুডের’ বিপরীতে ‘ব্যাড’ শব্দের চেয়ে যদি কোনো শব্দ থেকে থাকে, এই সরকার ব্যবস্থা বাতিল করায় তার চেয়েও ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে দেশে। এর আগে বুধবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে শুনানি শেষ করে বিএনপি। এদিন বিএনপির আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের রায় ছিল জাতির সঙ্গে প্রতারণার শামিল। আসন্ন নির্বাচনের আগে রায় হলেও অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই ত্রয়োদশ সংবাদ নির্বাচন হবে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে করা আপিলের ওপর গত মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিএনপির পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন। গত ২৭ আগস্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে করা আবেদনের শুনানি শেষে আপিলের অনুমতি দেয়া হয়। এরপর ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ ৫ জন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার আপিল করেন। পরবর্তীতে গত ২১ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে প্রথম দিনের মতো আপিল শুনানি শুরু হয়। পরদিন গত ২২ অক্টোবর রিটকারী বদিউল আলম মজুমদারের পক্ষে শুনানি শেষ করেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। এরপর গত ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরাতে করা আপিলের ওপর চতুর্থ দিনের মতো শুনানি চলে। আইনজীবী শিশির মনির, বদরুদ্দোজা বাদলসহ ৩ জন এদিন শুনানিতে অংশ নেন। এদিকে গত ২৯ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন থেকে সৃষ্ট আপিলের ওপর পঞ্চম দিনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে গত রোববার (২ নভেম্বর) ষষ্ঠ দিনের মতো এবং সবশেষ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সপ্তম দিনের মতো প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ৭ বিচারপতির বেঞ্চে এ বিষয়ে করা আপিলের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে অ্যাডভোকেট এম সলিমউল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। এই সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এম সলিমউল্লাহসহ অন্যরা ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টে রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল দেন। হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন।

পরবর্তীতে এ রায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি আপিলের অনুমতি দেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৫ সালে আপিল করে রিট আবেদনকারীপক্ষ। এই আপিল মঞ্জুর করে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। ঘোষিত রায়ের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিলোপসহ বেশকিছু বিষয়ে আনা পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ ৫ বিশিষ্ট ব্যক্তি। অন্য চারজন হলেন- তোফায়েল আহমেদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, জোবাইরুল হক ভূঁইয়া ও জাহরা রহমান। এছাড়াও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছর একটি আবেদন করেন। এদিকে আপিল বিভাগের ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত ১৬ অক্টোবর একটি আবেদন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে গত বছরের ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।