তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম ৭ শতাংশ করা এবং সব ট্যাংক লরীর জন্য আন্তঃজেলা রুট পারমিট ইস্যু করাসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরী মালিক ঐক্য পরিষদ। একই সঙ্গে আগামী ১২ দিনের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে ২৫ মে থেকে প্রতীকী কর্মসূচি হিসেবে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত আট ঘণ্টা সারাদেশের সব পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরী কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের উত্তোলন, পরিবহন এবং বিপণন বন্ধ রাখার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।
গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরী মালিক ঐক্য পরিষদের সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এসব দাবি তুলে ধরেন সংগঠনটির যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল। এ সময় বাংলাদেশ পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরী মালিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মোহাম্মদ নাজমুল হক, যুগ্ম-আহ্বায়ক মিজানুর রহমান রতন, জুবায়ের আহাম্মেদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন, দেশের জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী এবং ট্যাংক লরী মালিকদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক বছর যাবত আমরা সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে দেন দরবার ও আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানে ব্যর্থ হয়ে দাবি আদায়ে আমাদের কয়েকবার ধর্মঘট কর্মসূচিও ঘোষণা করতে হয়েছিল। কিন্তু বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হলেও সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি। পেট্রোল পাম্প মালিকদের সমস্যা সমাধানে কারো কোনো আগ্রহ নেই বলেও অভিযোগ করেন সংগঠনটির নেতারা।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পেট্রোল পাম্প মালিকদের ওপরে কিছুদিন পরপরই অযৌক্তিকভাবে নতুন নতুন নিয়ম প্রণয়নপূর্বক গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি দফতর/অধিদফতর হতে বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স গ্রহণ এবং নির্ধারিত ফিস এবং বর্ধিত ফিস প্রদান বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। অথচ আমাদের সরকার নির্ধারিত মূল্যে এবং সরকার নির্ধারিত কমিশনে তেল বিক্রি করতে হয়। বেশি মূল্যে তেল বিক্রি করে মুনাফা বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই।
ট্রাফিক সার্জেন্টরা অহরহ ট্যাংক লরীকে রাস্তায় থামিয়ে চালকদের হয়রানি করছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে যেকোনো সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কারণেই সরকারের সিদ্ধান্ত ছিল যে ট্যাংক লরীকে শুধু কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য রাস্তার যত্রতত্র থামানো যাবে না। প্রতিটি তেলের ডিপো গেটে গাড়ির কাগজ পরীক্ষা করা হবে। আমরা এর বাস্তবায়ন চাই। তাছাড়া দেশের সব জেলায় ডিপো নেই। তাই অনেক ক্ষেত্রে এক জেলার ট্যাংক লরী তেল উত্তোলনের জন্য অন্য জেলায় যেতে হয় এবং এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যেতে মাঝপথে অন্যান্য জেলা অতিক্রম করতে হয়। কাজেই সকল ট্যাংক লরীকে আন্তঃজেলা রুট পারমিট দিতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিটি পেট্রোল পাম্পের শুধু ডিসপেপিং ইউনিটের জন্য প্রতি বছর একবার পরিমাপ যাচাই করে নজেল প্রতি এক হাজার টাকা ফিস নেওয়ার নিয়ম ছিল। সম্প্রতি তারা ওই এক হাজার টাকা ফি বাড়িয়ে তিন হাজার টাকা করেছেন। শুধু তাই নয়, তারা এখন আন্ডারগ্রাউন্ড, ডিপ রড ইত্যাদির ওপর নতুনভাবে ফিস ধার্য করেছেন এবং বিএসটিআইতে নিবন্ধন বা লাইসেন্স নেওয়ার বাধ্যবাধকতা জারি করেছেন।
যুগ্ম-আহ্বায়ক সৈয়দ সাজ্জাদুল করিম কাবুল বলেন,শেষ চেষ্টা হিসেবে ২৪ মে এর মধ্যে আমাদের দাবি পূরণের জন্য সরকারকে বিনীত অনুরোধ করছি। অন্যথায় ২৫ মে থেকে প্রতীকী কর্মসূচি হিসেবে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সমগ্র দেশের সকল পেট্রোল পাম্প ও ট্যাংক লরী কর্মবিরতি পালনের মাধ্যমে জ্বালানি তেলের উত্তোলন, পরিবহন এবং বিপণন বন্ধ থাকবে। তবে হজ ফ্লাইট এবং আন্তর্জাতিক ফ্ল্যাইট সচল রখার জন্য বিমানের তেল পরিবহন চালু থাকবে। সে সাথে জ্বালানি তেলের ভোক্তা সাধারণকে কর্মসূচি শুরুর আগেই চাহিদা মাফিক তেল সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
১০ দফা দাবিগুলো হলো: তেল বিক্রির কমিশন ন্যূনতম ৭ শতাংশ করতে হবে। সওজ অধিদফতরের ইজারা ভূমির ইজারা মাশুল পূর্বের ন্যায় বহাল রাখতে হবে। বিএসটিআই কর্তৃক পূর্বের ন্যায় শুধু ডিসপেন্সিং ইউনিট স্টেমপিং এবং পরিমাপ যাচাইয়ের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন এবং ফিসসমূহ পূর্বের ন্যায় করতে হবে। আন্ডার গ্রাউন্ট ট্যাংক কেলিবারেশন, ডিপ রড পরীক্ষণ ফিস এবং নিবন্ধন প্রথা বাতিল করতে হবে। পেট্রোল পাম্পের ক্ষেত্রে পরিবেশ, বিআরসি কলকারখানা এবং ফায়ার সার্ভিস অধিদফতর থেকে লাইসেন্স/নিবন্ধন বিধান বাতিল করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অননুমোদিত এবং অবৈধভাবে ঘরের মধ্যে এবং খোলা স্থানে যত্রতত্র মেশিন বসিয়ে তেল বিক্রয় বন্ধ করতে হবে। বিপণন কোম্পানি থেকে ডিলারশিপ ছাড়া সরাসরি তেল বিক্রি বন্ধ করতে হবে। ট্যাংক লরী চালক সংকট থেকে উত্তরণে চালকদের লাইসেন্স নবায়ন এবং নতুন লাইসেন্স ইস্যু সহজতর করতে হবে। গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার নামে রাস্তায় যত্রতত্র ট্যাংক লরী থামানো যাবে না। তেলের ডিপু গেটে ট্যাংক লরীর কাগজপত্র পরীক্ষার সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। সকল ট্যাংক লরীর জন্য আন্তজেলা রুট পারমিট ইস্যু করতে হবে।