# বন্ধুত্বের চেয়ে প্রতিবেশীর ঘনিষ্ঠ ব্রাদারলি রিলেশনকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে চাইনিজ পিপলস ইনস্টিটিউট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত মি. ঝৌ পিংজিয়ান-এর নেতৃত্বে ৬ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের এক প্রতিনিধি দল সৌজন্য বৈঠকে মিলিত হন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মি. ঝৌ পিংজিয়ান-এর সঙ্গে ছিলেন এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা বিষয়ক বিভাগের পরিচালক (সিপিআইএফএ) মি. ঝাও ইয়োংগুও, সাউথ এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টার (পেকিং বিশ্ববিদ্যালয়)-এর নির্বাহী উপপরিচালক ড. ওয়াং শু, এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকা বিষয়ক বিভাগের কর্মকর্তা (সিপিআইএফএ) মিস. ঝাং লি, চীনা দূতাবাসের পলিটিক্যাল ডাইরেক্টর মি. ঝাং জিং এবং দূতাবাসের অ্যাটাচে মিস লিউ হোংরু।

আমীরে জামায়াতের সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এটিএম আজহারুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের প্রধান এডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন এবং আমীরে জামায়াতের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মাহমুদুল হাসান।

বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিং এ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, আমরা অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সম্মানিত অতিথিবৃন্দকে স্বাগত জানিয়েছি। আমীরে জামায়াতের সঙ্গে তাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ ও মতবিনিময় হয়েছে। সম্মানিত আমীরে জামায়াত অসুস্থ হওয়ার পর কিছুটা সুস্থ হয়ে এই প্রথম কেন্দ্রীয় অফিসে বিদেশী কোনো ডেলিগেশনের সামনে উপস্থিত হতে পেরে তিনি মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেছেন এবং সম্মানিত অতিথিবৃন্দকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন। ’৭৫-এর পর বাংলাদেশের সঙ্গে চায়নার কূটনৈতিক ও বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্কের কথা স্মরণ করা হয়েছে। আমীরে জামায়াত চায়নার নেতৃবৃন্দকে বলেছেন, ‘চীন ও বাংলাদেশ পরস্পর উন্নয়ন সহযোগী। আমরা একত্রে উভয় দেশের কী কী উন্নয়ন করতে পারি এবং বন্ধুত্বের চেয়ে প্রতিবেশীর ঘনিষ্ঠ ব্রাদারলি রিলেশনকে আমরা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। অর্থনীতিসহ সামগ্রিক বিষয়ে আমরা বাংলাদেশ নিজেদের পায়ে দাঁড়াবার চেষ্টা করছি।’

অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জামায়াতে ইসলামীর ওপর অকথ্য জুলুম-অত্যাচার চালানো হয়েছে। আমাদের নেতৃবৃন্দকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের নিবন্ধন কেড়ে নেয়া হয়েছে। আমাদের অফিসগুলো বন্ধ করে রাখা হয়েছিলো। আমাদের কষ্টের এই স্মৃতিগুলো আমীরে জামায়াত চায়না নেতৃবৃন্দের নিকট তুলে ধরেছেন।

তিনি আরও বলেন, ছাত্রজনতার উত্তল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার বিদায় নিয়েছেন। কিন্তু বিদায় নেয়ার পরও ষড়যন্ত্র থেকে তারা থেমে থাকেনি। একটি দেশের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। বর্তমান গ্লোবাল পরিস্থিতি ও পলিটিকস, গ্লোবাল সিকিউরিটিসহ নানা বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কীভাবে ভবিষ্যতে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়তে পারি এবং দু’দেশের মধ্যে সেই সৌহার্দ্যপূর্ণ, সম্প্রীতিপূর্ণ আলোচনা কীভাবে এগিয়ে নিতে পারি তা আমীরে জামায়াত চায়না প্রতিনিধিদলের সামনে তুলে ধরেছেন। বাংলাদেশের অর্থনীতি এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থা একেবারে লুট হয়ে গেছে। করাপশন, অর্থ পাচারে আমাদের অর্থনীতি একেবারে শেষ হয়ে গেছে সেটা আমীরে জামায়াত মেহমানদের সামনে তুলে ধরেছেন।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জামায়াতে ইসলামী সবসময় গণতন্ত্রে বিশ^াসী একটি ইসলামী রাজনৈতিক দল। একটি নির্বাচনমুখী দল। উনাদের প্রশ্নের জবাবে আমীরে জামায়াত বলেছেন, ‘সকল গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে ইতোপূর্বে জামায়াতে ইসলামী অংশগ্রহণ করেছে এবং আমরা প্রত্যেক পার্লামেন্টে নির্বাচিত হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছি। জামায়াতে ইসলামী ধর্ম-বর্ণ-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের সমান মর্যাদা এবং মানবিক, সাংবিধানিক ও রাজনৈতিকসহ সকল অধিকারকে আমরা মেইনটেইন করে পথ চলি।

দেশের জনগণ যদি জামায়াতে ইসলামীকে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেন, এব্যাপারে আমীরে জামায়াত বলেছেন, ‘আমরা শাসক হবো না, আমরা সেবক হবো। সকলেই সমতার ভিত্তিতে অধিকার ভোগ করবেন। আমাদের দেশটা বিপুল জনসংখ্যার দেশ। উন্নয়নের জন্য চায়নার এক্সপোর্ট প্রসেসিংসহ নানান অর্থনীতি উন্নয়নের বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করছি। আমাদের সামনে সেই সম্ভাবনা আছে।’

তিনি বলেন, সম্মানিত মেহমানগণ বলেছেন, ‘আমরা আজকে এখানে এসে অনেক সম্মানিত বোধ করছি।’ আমীরে জামায়াত সুস্থতার পর হাসিমুখে তাদের রিসিভ করায় উনারা খুবই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

সম্প্রতি চায়না অ্যাম্বাসির আয়োজনে চায়নার ৫০-তম বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করায় চায়নার প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে জামায়াতে ইসলামীকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। আমীরে জামায়াত বলেন, চায়নাসহ সকল প্রতিবেশীর সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রক্ষা করে চলতে চাই।

একবিংশ শতাব্দীতে নতুন উন্নত বিশ^ গড়ার জন্য চায়না কী ধরনের কাজ করছে এবং চায়না কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে চায়নার কী পরিমাণ অগ্রগতি হয়েছে তা উল্লেখ করে চায়নার প্রতিনিধিদল আমীরে জামায়াতকে বলেন যে, ‘আপনি ও আপনার প্রতিনিধিদল সম্প্রতি চীন সফরের সময় নিশ্চয়ই সেই দৃশ্য আপনারা দেখে এসেছেন। চীনে আধুনিকীকরণের জন্য চীনা বিপ্লবের ১৯৪৯ থেকে ২০৪৯ শতাব্দীজুড়ে এবং বাকি অংশ অতিবাহিত করার জন্য প্রতি ৫ বছরে তারা ডেভেলপমেন্ট এবং মডারাইজেশনের করার জন্য চীন যে উদ্যোগ নিয়েছে; তা তারা জামায়াত নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন। এর প্রেক্ষিতে আমীরে জামায়াত বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক পরিবেশে আমরা যৌথ পার্টনারশীপের ভিত্তিতে উন্নয়ন ও অগ্রগতি করতে চাই।

অধ্যাপক পরওয়ার বলেন, আঞ্চলিক ও বিশ^ পরিবেশের বিবেচনায় বাংলাদেশ-চায়না ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি যৌথভাবে রাখবে এবং বাংলাদেশের সাথে শুধু কৌশলগত প্রয়োজন অনুভব করেন (পার্টি টু পার্টি)। জামায়াতে ইসলামী ও কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সুসম্পর্ক, মতবিনিময় এবং স্ট্র্যাটিজিক্যাল ডায়ালগ উনারা অনুভব করেন। সম্মানিত আমীরে জামায়াত উনাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। সরকারের সাথে সরকার (জি টু জি), পার্টি টু পার্টি উভয় রিলেশন মেইনটেন হবে চায়নার।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, উনারা জানতে চেয়েছেন যে, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণে আমাদের প্রস্তুতি কেমন? আমীরে জামায়াত বলেছেন, ‘আমরা সবসময় নির্বাচন মুখী দল। আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।’

বিশ্ব মানবাধিকার প্রশ্নে আমীরে জামায়াত বলেন, সারা দুনিয়ায় মানবাধিকার যেখানে যেখানে লঙ্ঘিত হচ্ছে বিশেষ করে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি, গাজার মুসলমানদের প্রতি অবর্ণনীয় অত্যাচার ও জুলুম-নির্যাতন চলছে। সিরিয়া, ইরাক ও মায়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। ইউক্রেন-রাশিয়াতেও যুদ্ধ চলছে। এসব ক্ষেত্রে চায়নার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ও অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখা উচিত বলে আমীরে জামায়াত মন্তব্য করেন।