আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথক পৃথক বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে’ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সেখান থেকে ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ নামে একটি প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এই প্ল্যাটফর্ম আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে।
এর আগে দুপুরে একই দাবিতে রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ করে ইনকিলাব মঞ্চ। তাদের মিছিল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেওয়া হয়। একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ ঘুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে গিয়ে শেষ হয়। বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের হলপাড়া থেকে শুরু হয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে সমাবেশ করে। সেখান থেকে ‘গড়িমসি বন্ধ কর, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ কর’, ‘লড়াই লড়াই লড়াই চাই, লড়াই করে বাঁচতে চাই’, ‘২৪-এর বাংলায়, খুনি লীগের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, আওয়ামী লীগের কবর দে’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়।
সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী এ বি যুবায়ের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের দায়িত্ব ছিল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। কিন্তু আমরা দেখছি, অনেকে বলতে চাচ্ছে, গুড আওয়ামী লীগ, ব্যাড আওয়ামী লীগ। কিন্তু যারা এমন একটি গণহত্যার পরও ক্ষমা চায়নি, এখন তাদের আবার গুড আওয়ামী লীগ কী? ইসলামিক স্টাডিজের এই শিক্ষার্থী বলেন, প্রধান উপদেষ্টা, আমরা আপনাকে আশ্বস্ত করছি, আমরা আপনার পাশে আছি, প্রয়োজনে আপনি গণভোটের আয়োজন করুন, জনগণ আপনার পাশে আছে। সমাবেশে মঞ্চের পক্ষ থেকে ঘোষণাপত্র পাঠ করেন এ বি যুবায়ের। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের অপচেষ্টা রুখে দিতে ছাত্র-জনতা আবারও প্রস্তুত। রক্তের দাগ শুকায় নাই। এই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে আমার ভাইয়ের খুনিদের ফেরানোর কোনো চেষ্টা আমরা সফল হতে দেব না। এ বি যুবায়ের বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে এক হবো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে আমরা একত্র হয়েছি। ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণ মঞ্চ’ আমরা তৈরি করেছি। আপনি যে দল, যে মত বা যে পথেরই হোন না কেন, যদি আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে একমত হন, তাহলেই আপনি এখানে আমন্ত্রিত। সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দেক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, ইতিমধ্যে অনেক রাজনৈতিক দল পচে গিয়েছে, তারা ক্ষমতার কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। তারা আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে চায় না। নতুন এই প্ল্যাটফর্ম নিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই মঞ্চ বিলুপ্ত হবে। মঞ্চের পক্ষ থেকে আগামীকাল শনিবার বিকেল পাঁচটায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধকরণের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও গণ-ইফতারের আয়োজন করা হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়।
ইনকিলাব মঞ্চ: আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) বিক্ষোভ মিছিল করেছে ইনকিলাব মঞ্চ। মিছিল থেকে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। গতকাল শুক্রবার দুপুর ২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ করে ইনকিলাব মঞ্চ। শুক্রবার জুমার নামাযের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। ইনকিলাব মঞ্চের মিছিলটি কেন্দ্রীয় মসজিদ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন দিয়ে শ্যাডো হয়ে সূর্য সেন হল ও ভিসি চত্বর হয়ে রাজু ভাস্কর্যে আসে। সমাবেশে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদী বলেন, আজ যেখানে ইসরাইল দাঁড়িয়েছে তেমনি আমার সীমান্তের পাশে একটি এশিয়ান ইসরাইল দাঁড়িয়ে গেছে। আর সেই এশিয়ান ইসরাইল হলো ভারত। দিল্লী ইস্যু, ইসরাইল ইস্যু আর আওয়ামী লীগ আলাদা নয়। তিনি বলেন, খুনি হাসিনা তার শোষণ পাকাপোক্ত করার জন্য ইসরাইল থেকে যে স্পাই ওয়ার কিনেছিল, অতি দ্রুত সেই স্পাই ওয়ারের হিসাব দিতে হবে। বাংলাদেশের পাসপোর্ট থেকে আওয়ামী লীগ ভারতীয় প্রেসক্রিপশনে এক্সেপ্ট ইসরাইল শব্দ উঠিয়ে দিয়েছে। অতি দ্রুত এক্সেপ্ট ইসরাইল লিখতে হবে। হাদী বলেন, আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাইলে বাংলাদেশে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। দুই হাজারের অধিক শহীদ এবং হাজার হাজার আহতের রক্তের শপথ, আমাদের দেহে এক বিন্দু রক্ত থাকতে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতে দেবো না। আওয়ামী লীগ মানেই খুনি।’
গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ : আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ। শুক্রবার সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবি জানিয়েছে ছাত্র সংগঠনটি। সংগঠনের সহ-মুখপাত্র ফারদিন হাসান আন্তন প্রেরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ কোনোরকম টালবাহানা ছাড়া ফ্যাসিস্ট, গণহত্যাকারী দল ‘আওয়ামী লীগ’ নিষিদ্ধ চায় এবং অনতিবিলম্বে তাদের সকল অপরাধের বিচার চায়। জুলাইয়ে যুদ্ধ করে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা যেই দলকে প্রত্যাখ্যান করেছে তাদের পুনর্বাসন কখনোই মেনে নেয়া হবে না।
কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল: আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে কুমিল্লায় বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার দুপুরে জুমার নামায শেষে নগরীর ঝাউতলা ছাতি মসজিদ এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুমিল্লা জেলার নেতাকর্মীদের আয়োজনে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে সিন্দিরপাড় পূবালী চত্বরে এসে শেষ হয়। পরে পূবালী চত্বরে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে অন্যান্যের মাঝে বক্তব্য রাখেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুমিল্লা জেলার সদস্য সচিব ইয়াসিন আরাফাত হিমু, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম ভূঁইয়া, মুখ্য সংগঠক আরাফ ভূঁইয়া, মোস্তফা জিহান ও জাভেদ আহমেদ ভুঁইয়া। এ সময় বক্তারা বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঐক্য যতদিন থাকবে ততদিন আওয়ামী লীগের স্থান এই বাংলাদেশে হবে না। কুমিল্লা থেকেই আওয়ামী লীগের বিচার শুরু হবে। গত ১৭ বছর যারা মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে তাদের বৈধতার প্রশ্ন আবার কীভাবে আসতে পারে। তাদের বৈধতার প্রশ্ন তো গত ৫ ই আগস্টেই শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতেই হবে।’