হিসেব না দিয়ে পালিয়ে গেছেন সাবেক প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম
ভয়াবহ লুটপাটের নাম মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র। দেশের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম কক্সবাজারের মাতারবাড়ী ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল বিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে। অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মাতারবাড়ী আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রজেক্টের সাবেক পরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের নামে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁর বিরুদ্ধে ২৯ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হিসেবে না দিয়েই তিনি পালিয়ে গেছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সরকারি কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)-এর এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১ হাজার ৭৭০ কোটি টাকার ভয়াবহ দুর্নীতি ও অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।
মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শনে গিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ‘প্রকল্প বিলাস’ বলে অভিহিত করেন। এ প্রকল্প থেকে সাধারণ মানুষ খুব বেশি উপকৃত হচ্ছে না বলে সে সময় মন্তব্য করেন তিনি। উপদেষ্টার বক্তব্যে উঠে আসে, মূল প্রকল্পের ধারণা অনুসারে গভীর সমুদ্রবন্দর, শিল্প-কারখানা, রেল ও সড়ক সংযোগ নিশ্চিত না করেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়েছে।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা এম শামসুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর মধ্যে মাতারবাড়ী সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প। এতে খরচের মাত্রাও অনেক বেশি। এখানে জমি অধিগ্রহণে দুর্নীতি হয়েছে, অস্বাভাবিক দামে কেনা হয়েছে নাটবল্টু। এখন দেখা যাচ্ছে, এই প্রকল্পের পুরনো লোহালক্কড়ও বেচে দিচ্ছেন প্রকল্পের কর্মকর্তারা। দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে এদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। না হলে বিদ্যুৎ খাতে শৃঙ্খলা ফেরানো যাবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অবৈধভাবে ১৬টি কাজে ১০৬ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার ভেরিয়েশন প্রদান, প্রকল্পের টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাটের নামে ৬৮ কোটি টাকা, বিটুমিন বা পিচের সড়ক না করে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণ করে ২৫৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা, সিপিজিসিবিএলের নিজস্ব স্ক্র্যাপ বিনা নিলামে বিক্রির মাধ্যমে ৫৩ কোটি টাকা, ইনস্টিউশনাল ডেভেলপমেন্টের নামে ১২ কোটি টাকা, প্রকল্পের ঠিকাদারের লেফটওভার ম্যাটেরিয়াল বিক্রির মাধ্যমে ২৬ কোটি টাকা ছাড়াও বিভিন্ন মূল্যবান মালামালের কান্ট্রি অব অরিজিন পরিবর্তন করে এবং প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে প্রকল্পে নিম্নমানের মালামাল সরবরাহ করা হয়।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল করিম খানকে গত ২৯ আগস্ট একটি আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়াম মাতারবাড়ী প্রকল্পে সিজিপিসিবিএল কর্তৃপক্ষকে অনিয়ম ও দুর্নীতিগ্রস্ত উল্লেখ করে চিঠি প্রদান করা হয়। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়-সিজিপিসিবিএল মাতারবাড়ী পাওয়ার প্ল্যান্টে ৩ বছরে ৯.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা সরবরাহের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে।
কয়লা আমদানির ও সরবরাহের অভিজ্ঞতা উল্লেখ থাকলেও কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে একটি প্রতিষ্ঠানকে বেআইনি সুবিধা দেয়ার উদ্দেশ্যে দরপত্র প্রক্রিয়া ১০ মাস ধরে দেরি করা হয়।
জানা যায়, পরপর চারবার সংশোধনীর মাধ্যমে “কয়লা আমদানির এবং সরবরাহের অভিজ্ঞতার” শর্তটি পরিবর্তন/পরিবর্ধন করে কয়লার পরিবর্তে লোহা, সার, কেমিক্যাল, সিমেন্ট, খাদ্য শস্য আমদানির অভিজ্ঞতা’ কে যোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
জানা গেছে, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানির দরপত্রপ্রক্রিয়ায় অভিযোগ ওঠার পর বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা থেকে উৎপাদিত ড্রাই অ্যাশ (পোড়ানো ছাই) বিক্রির দরপত্রেও বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠে। এই অভিযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সিপিজিসিবিএল-এর বিরুদ্ধে। কয়লার ড্রাই অ্যাশ বিক্রিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও সর্বনিম্ন দরদাতাকে দরপত্র পাইয়ে দিতে কিছু অসাধু কর্মকর্তা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে প্রকল্পসূত্রে জানা গিয়েছে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে সিন্ডিকেট করে টেন্ডার ও কমিশন বাণিজ্যে ও বিভিন্ন কোম্পানির মালামাল পাস দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের তথ্যসহ সম্প্রতি সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী দুদকে চিঠি দিয়েছেন।
বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পে অনুমোদন ছাড়া অবৈধভাবে ১৪০ মিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৬৩ কোটি ৩৪ লাখ ৭০ হাজার টাকার ভেরিয়েশন অর্ডার দেওয়া হয়। এ প্রকল্পে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সির সব অর্থ বিনা অনুমতিতে ভেরিয়েশনের মাধ্যমে অন্য কাজে ব্যবহার হয়। অথচ এ কাজ বাবদ অর্থ বরাদ্দ রাখা হয় শুধু বিপর্যয় বা মহামারির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে সে ক্ষেত্রে এ বরাদ্দ অন্য খাতে খরচ করতে হলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়েয় অনুমতি নিতে হয়। মাতারবাড়ী প্রকল্পে এ পর্যন্ত ১৬টি কস্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট বা ভেরিয়েশন দেওয়া হয়। যার মোট মূল্যমান ১৪০ মিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ৫টি বোর্ডে অনুমোদন নেওয়া হয় বাকি ১১টির কোনো অনুমোদন নেই।
সূত্র জানায়, নিয়ম অনুযায়ী চুক্তিকারী নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত ভেরিয়েশন দিতে পারে। মাতারবাড়ী প্রকল্পের চুক্তি করেছে সিপিজিসিবিএল বোর্ড। কিন্তু বোর্ড অনুমোদন ছাড়াই বিপুল পরিমাণ ভেরিয়েশন দেওয়া হয়েছে। বোর্ড চুক্তিকারী হওয়ায় কোনোভাবেই প্রকল্প পরিচালক ভেরিয়েশন অর্ডার দিতে পারেন না। কিন্তু এর পরও দিয়েছে। এ ছাড়া ১৫টি কস্ট অ্যাডজাস্টমেন্ট বা ভেরিয়েশন-এ ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সি এর সব অর্থ ব্যয় করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এ ছাড়া ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রপোসাল (ডিপিপি)-এর অন্য খাতের অর্থ বিনা অনুমতিতে ফিজিক্যাল কন্টিনজেন্সিতে স্থানান্তর করা হয়েছে এবং এসব অর্থের ভেরিয়েশন অর্ডার নেওয়া হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, এ প্রকল্পের টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাটের কাজ ১৪ কোটি টাকায় করা যেত কিন্তু তা প্রায় ৬ গুণ বেশি অর্থ ব্যয়ে ৬৮ কোটি টাকা ব্যয় করার নামে অর্থ আত্মসাৎ করা হয়। মাতারবাড়ী টাউনশিপ এলাকায় বালু ভরাটে দেশি ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়েছিল। ঠিকাদার প্রকল্প থেকে ১৩ কিমি. দূর থেকে নিজ দায়িত্বে বালু সংগ্রহ করে ৩১৫ টাকা/ঘনমিটার রেটে ভরাট করত। সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারায় চুক্তি বাতিল করা হয়। এখন দেশি ঠিকাদারের পরিবর্তে মাতারবাড়ী প্রকল্পের বিদেশি ঠিকাদারকে দিয়ে বালু ভরাটের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আর এখন বিদেশি ঠিকাদার প্রকল্পের বালু ব্যবহার করছে। সে ক্ষেত্রে বিদেশি ঠিকাদারের শুধু ১ কিমি. দূর থেকে বালু পরিবহন খরচ হবে। কিন্তু এখানে এস্টিমেট করা হয়েছে ৯২৫ টাকা/ ঘনমিটার।
সূত্র জানায়, এভাবে ৮ দশমিক ৫ লাখ ঘনমিটার বালুর এস্টিমেট করা হয়েছে ৮২ কোটি টাকা। অথচ লেটেস্ট রেট সিডিউল অনুযায়ী পুনঃ টেন্ডার করে সহজেই ১৪ কোটি টাকায় কাজটি করা যায়। আর পুনঃ টেন্ডার করলে ঠিকাদারকে শুধু বালু পরিবহন করতে হবে, তাই কাজ শেষ করতে পারবে সহজেই। এ ছাড়া দেশি ঠিকাদারের মাধ্যমে বালু ভরাট করলে ডিপিপিতে বরাদ্দকৃত দেশি মুদ্রায় (টাকা) বিল দেওয়া যেত। অবৈধভাবে বিদেশিদের মাধ্যমে কাজ করানোয় ডলারে বিল দিতে হয়েছে। এতে ডিপিপির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা (জাইকা) কাজটির ভেরিয়েশন অর্ডার করতে বললেও কোনো ভেরিয়েশন অর্ডার অনুমোদন নেওয়া হয়নি। ভেরিয়েশন অর্ডার অনুমোদন করতে পারে বোর্ড। বোর্ডে না নিয়ে ভেরিয়েশন না করে অবৈধভাবে কাজটি করা হচ্ছে। এতে ৬৮ কোটি টাকার দুর্নীতি, লুটপাট ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয় হয়েছে। তাও আবার বৈদেশিক মুদ্রায়।
প্রকল্পের চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্প এলাকায় বিটুমিন বা পিচের সড়ক নির্মাণ করার কথা। শুধু দুর্নীতির জন্য বিটুমিন বা পিচের সড়কের পরিবর্তে কংক্রিটের সড়ক নির্মাণে অতিরিক্ত ১৭০ কোটি টাকা ভেরিয়েশন দেওয়া হয়। এতে ডিপিপি বা পিপিআর নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। প্রকল্পের কনসালল্ট্যান্ট (এমজেভিসি) পরামর্শ দিয়েছিল যে, সব রোড কংক্রিট করতে ১৪ থেকে ১৬ মিলিয়ন ডলার লাগবে। যা ব্যয়বহুল। এজন্য শুধু কিছু সড়ক (পাওয়ার প্ল্যান্ট, কোল ইয়ার্ড) কংক্রিট করতে আর অবশিষ্ট সব সড়ক (এসপন্ড, সার্ভিস রোড ও অন্যান্য সব) বিটুমিন বা পিচ দিয়ে করতে। এতে ৩ থেকে ৪ মিলিয়ন ডলার অতিরিক্ত লাগত। কিন্তু অসাধু উদ্দেশ্যে সব সড়ক কংক্রিট করা হচ্ছে আর অতিরিক্ত ২১ .৬ মিলিয়ন ডলার বা ২৫৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা অবৈধ ভেরিয়েশন দেয়। এই কাজেও বোর্ড বা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া হয়নি।
চুক্তি অনুযায়ী প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বিদেশ থেকে আনা (যার ট্যাক্স সিপিজিসিবিএল পরিশোধ করেছে) সব মালামালের স্ক্র্যাপ/অব্যবহৃত অংশের মালিক সিপিজিসিবিএল। সে মোতাবেক নিলামের মাধ্যমে সিপিজিসিবিএল প্রায় ৯ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ বিক্রি করে। পরে একই স্থান থেকে একই স্ক্র্যাপকে ঠিকাদারের স্ক্রাপ বলা হচ্ছে এবং ঠিকাদার স্ক্র্যাপ বিক্রি করছে বলে বলা হচ্ছে। তাই সিপিজিসিবিএল তখন স্ক্রাপের নিলাম করেনি। কিন্তু প্রতিদিনই অনেক ট্রাক ও বোটবোঝাই স্ক্র্যাপ প্রকল্পের বাইরে যায়। মালামাল বাইরে নেওয়ার গেটপাস সিপিজিসিবিএল করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে আগে যে কোম্পানি নিলামের মাধ্যমে স্ক্র্যাপ নিত এখনো সেই কোম্পানি স্ক্র্যাপ নিয়েছে। কিন্তু স্ক্র্যাপের মূল্য সিপিজিসিবিএল-এর পরিবর্তে জড়িত কর্মকর্তারা নিচ্ছে। এভাবে গত কয়েক মাসে ৫৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এখন আবার এই একই স্থানের একই স্ক্র্যাপ নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। আর মাঝের প্রায় ১ বছর নিলাম ছাড়া ৫৩ কোটি টাকার স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয়েছে।
বিএফআইইউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ সালে প্রকল্প পরিচালক হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলমের নামে বেতন-ভাতা বাবদ জমা হয়েছে ৯৮ লাখ টাকা। অথচ তাঁর ৭৭টি এফডিআরসহ মোট ৮২ ব্যাংক হিসাবে লেনদেন হয়েছে ১৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। ব্যাংক হিসাবে দেখা যায়, ২০১২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত হিসাবগুলোয় ৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা জমা এবং ৫৩ কোটি ৮২ লাখ টাকা তোলা হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংকের ৭ অ্যাকাউন্টে সর্বশেষ জমা আছে ৩০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। অথচ জাহাঙ্গীর আলমের আয়কর বিবরণীতে গত অর্থবছরের নিট সম্পদ ৪ কোটি ১০ লাখ এবং আয় মাত্র ৩২ লাখ ১৭ হাজার ৭২৪ টাকা দেখানো হয়েছে।
গত ৭ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, কক্সবাজারের মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে খরচ হওয়া ৬ হাজার ৫৭১ কোটি টাকার হিসাব না দিয়েই বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া সাবেক প্রকল্প পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম ‘পালিয়ে গেছেন’।
সর্বশেষ গত মাসে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল) কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন মাতারবাড়ী ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ট্যারিফ অনুমোদন করেছে সরকার। প্রতি কিলোওয়াট ৮ টাকা ৪৫ পয়সা হিসেবে ৩০ বছর মেয়াদে এ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কিনতে সরকারের ব্যয় হবে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকা।
বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিপিজিসিবিএলের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) চূড়ান্ত করতে ট্যারিফ কাঠামো ও লেভেলাইজড ট্যারিফ অনুমোদন করা হয়েছে। ৮৫ শতাংশ প্ল্যান্ট ফ্যাক্টর বিবেচনায় প্রতি বছরে ৭ হাজার ২৩৩ কোটি লাখ টাকা এবং ৩০ বছরে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪ কোটি ৪০ লাখ টাকার বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। এক্ষেত্রে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। এর মধ্যে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার দাম ধরা হয়েছে ৫ টাকা ৮৪ পয়সা এবং ক্যাপাসিটি চার্জ নির্ধারণ করা হয়েছে ২ টাকা ৬০ পয়সা।