সকালে ছিল ঝলমলে আকাশ। গরমও কম ছিল না। তবে দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। আবহাওয়ার পুর্বাভাস ছিল, বৃষ্টি হতে পারে। হয়েছেও। কয়েক দিনের প্রচ- গরমের পর গতকাল বুধবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে স্বস্তির বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে বৃষ্টি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। রাজধানীতে দুপুর ২.৩০ মিনিট নাগাদ শুরু হয় বজ্রসহ বৃষ্টি। এ সময় দমকা বাতাসও বয়ে যায়।

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছিল, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে। এর প্রভাবেই হচ্ছে বৃষ্টি। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও এর কাছাকাছি এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এছাড়া মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।

আবহাওয়া অফিস আরও বলছে, আগামী শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দেশের সব বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বিদ্যুৎ চমকানো বা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। দেশের কয়েক জায়গায় শীলা বৃষ্টির সম্ভাবনাও আছে। আর বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, এ সময়ের শেষের দিকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে এবং তাপমাত্রা বাড়তে পারে।

টানা কয়েকদিন ধরে দেশজুড়ে যে গরমের তীব্রতা চলছে, তার মধ্যে মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় ঢাকার জনজীবনে স্বস্তি ফেরার কথা বলছেন নগরবাসী। গতকাল অনেককে ভিজে ঘরে ফিরতে দেখা গেছে ৷ তারা বলছিলেন, টানা গরমের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে এসেছে এ বৃষ্টি।

মিরপুরের কালশীর বাসিন্দা আরিফুর রহমান বলেন, বৃষ্টির কারণে একটু হলেও আরাম পাইতাছি। নাহলে অনেক কষ্ট হয়ে যাইত। মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা আবিদুল ইসলাম বলেন, এই ধরেন বাসে যাচ্ছি যে গরমটা লাগত, এইটা হচ্ছে না বৃষ্টির কারণে। ধানমন্ডির বাসিন্দা ফারহানা ইসলাম বলেন, গত কয়েক দিনের গরমে খুবই কষ্ট হচ্ছিল। আজকের এই বৃষ্টি যেন আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। বাংলামোটর এলাকার চা দোকানি গণি মিয়া বলেন, দুপুর থেকেই আকাশ কালো হয়ে আসে। পরে বৃষ্টি শুরু হলে দোকানে একটু আরাম করে বসতে পারলাম। শিক্ষার্থী মাহিনুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে রাস্তায় বের হওয়াই মুশকিল হয়ে পড়েছিল। গরমের দম বন্ধ পরিবেশ থেকে অবশেষে একটু স্বস্তি অনুভব হচ্ছে। কলাবাগানে অফিস থেকে বের হওয়া সালমা আক্তার বলেন, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতেই বাসায় ফিরলাম। তবুও মনটাই ভালো হয়ে গেল বৃষ্টির কারণে। গরমে এতটা বিরক্ত লাগছিল, এখন মনে হচ্ছে আবার শহরে প্রাণ ফিরেছে। এক রিকশাচালক বলেন, ঝড়ের সময় রাস্তায় ছিলাম, হাওয়ার তোড়ে রিকশা চালানো কঠিন হয়ে যায়। তবে গরম থেকে তো রেহাই মিলল।

আগামী তিন দিন দেশজুড়েই এমন বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক। তিনি বলেন, সারাদেশেই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি হবে, থেমে যাবে, আবার হবে- এমনই চলবে। কখনও বেশি, কখনো কম। এসময় তাপমাত্রাও সহনশীল থাকবে। গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশের সর্বোচ্চ ৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে। ঢাকায় বুধবার বিকেল ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এতে নগর জীবনে স্বস্তি ফিরলেও হঠাৎ টানা ৩ ঘণ্টার বৃষ্টি ভুগিয়েছে নগরবাসীকে। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকায় এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। যখন এ প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে, বৃষ্টি তখনো ঝরছে। এ বৃষ্টিতে রাজধানীর নানা স্থানে জমে গেছে পানি। তাতে বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষেরা পড়েছেন বিপাকে।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রাজধানীতে এই বৃষ্টির ফলে রাতের তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসবে। এতে গরমের প্রভাব থেকে স্বস্তি পাবে নগরবাসী।