হত্যা মামলায় হাজিরা দিতে যাওয়ার সময় রাজধানীতে তারিক সাঈদ মামুন ওরফে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুনকে (৫০) প্রকাশ্যে গুলী করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল সোমবার বেলা ১১টার দিকে সূত্রাপুরে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

গুলীর ঘটনার সিসিটিভির একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মামুন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছেন। তখন দুই ব্যক্তি খুব কাছে থেকে তাকে গুলী করছেন। ঘটনাটি ঘটে তিন থেকে চার সেকেন্ডের মধ্যে। গুলী করার পর দুই ব্যক্তি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ঘটনার বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, দুজন ব্যক্তি ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট হাসপাতালের প্রবেশমুখে এসে ওই ব্যক্তিকে পেছন থেকে গুলী করে। বেশ কয়েকটি গুলী করার পর ওই ব্যক্তি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এরপর তারা মোটরসাইকেলযোগে পালিয়ে যায়। গুলী ছোড়া তাদের দুজনেরই মাথায় কালো টুপি ও মুখে মাস্ক ছিল। নিহত মামুনের খালাতো ভাই হাফিজ বলেন, আমার ভাই তারিক সাঈদ মামুন একটি মামলায় হাজিরা দিতে সিএমএম কোর্টে আসছিল। মুখে মাস্ক ও মাথায় টুপি পরে আসা দুজন লোক মামুনকে গুলী করে পালিয়ে যায়। তবে তারা কারা, কী কারণে তাকে হত্যা করেছে তা আমার জানা নেই।

ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলের ওয়ার্ড মাস্টার মহিবুল্লাহ বলেন, আনুমানিক বেলা ১১টার দিকে তাদের হাসপাতালের সামনের গোলাগুলীর ঘটনা ঘটে। শব্দ শুনে দৌড়ে এসে দেখি হাসপাতালের মেইন গেটের সামনে ওই ব্যক্তি রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে উদ্ধার করে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি দেখে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে নিয়ে আসি। পরে সেখানে চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। কারা গুলী করেছে সেটা তিনি দেখেননি বলেও জানান। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহত মামুনের লাশ মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট থানা কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে ডিএমপির কোতোয়ালি থানার এসআই মো. ইয়াসিন বলেন, গুলীর শব্দ শুনতে পেয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালের সামনে এসে দেখি অজ্ঞাত এক ব্যক্তি গুলীবিদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন। খুব কাছ থেকে তাকে গুলী করা হয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।

এদিকে ফাইজুল হক অপু নামে মামুনের পরিচিত দাবি করা এক ব্যক্তি বলেন, সকালে গুলী করে যাকে হত্যা করা হয়েছে, তিনি শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন। অপু বলেন, সকালে মামুনের ফোন থেকে তাকে কল করে ঘটনাটি জানানো হয়। এরপর তিনি কাকরাইল থেকে ঢাকা মেডিকেলে এসে মামুনের পরিচয় শনাক্ত করেন।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ জোনের উপ- কমিশনার (ডিসি) মল্লিক আহসান উদ্দিন সামি বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি নিহত মামুন একজন তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তার নামে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। সেসব মামলায় হাজিরা দিতেই হয়তো কোর্টে গিয়েছিল মামুন। সকাল ১১টার দিকে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে মামুনের বুকে গুলী করে অজ্ঞাত কিছু ব্যক্তি। খুব কাছ থেকে তাকে গুলী করা হয়েছে। যারা গুলী চালিয়েছে আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছি। পুলিশ জানায়, শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমন ও মামুন একসময় হাজারীবাগ, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও এলাকার আতঙ্ক ছিলেন। তাদের গড়ে তোলা বাহিনীর নাম ছিল ‘ইমন-মামুন’ বাহিনী। তারা দুজনই চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার আসামী। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য অনুযায়ী, মামুনের বাড়ি লক্ষ্মীপুরে। তার জন্ম ১৯৭০ সালে।

মামুনের পরিবার বলছে, তিনি দুই দিন ধরে রাজধানীর বাড্ডার ভাড়া বাসায় ছিলেন। সকালে একটি মামলায় আদালতে তার হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। এ জন্য তিনি সকালে বাসা থেকে বের হন। নিহত মামুনের স্ত্রী বিলকিস আক্তার বলেন, আমাদের ধারণা, শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের লোকজন এই হত্যার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও ইমনের লোকজন মামুনকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাত ১০টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল এলাকায় মামুনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলী চালায় একদল সন্ত্রাসী। সেই গুলী লেগেছিল মোটরসাইকেল আরোহী ভুবন চন্দ্র শীলের মাথায়। ২৫ সেপ্টেম্বর ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে ভুবন চন্দ্র শীল মারা যান। পরে জানা যায় মামুনকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলী ছুড়েছিলেন কারাবন্দী শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ওরফে ইমনের লোকজন। সেই গুলী লেগেছিল ভুবনের মাথায়।