আগামী ৪ মে রোববার দেশে ফিরছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য দৈনিক সংগ্রামের এ প্রতিবেদককে জানান, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী ৪ মে দেশের ফিরবেন খালেদা জিয়া। ওইদিন ঠিক কয়টায় ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পেীছাবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটার জন্য আরও দু-একদিন অপেক্ষা করতে হবে। যেহেতু খালেদা জিয়া কাতার আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে দেশে ফিরবেন, তাই সময়টা এখনই বলা যাচ্ছে না। এটা নির্ভর করছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ও বেগম জিয়ার উপর। তিনি ৪ মে দেশে ফিরবেন এটা জানিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থঅ নিতে বলা হয়েছে।
সূত্র মতে, গত ৭ জানুয়ারি কাতারের আমিরের বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এর পরদিন যুক্তরাজ্য পৌঁছে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি হন তিনি। সেখানে চিকিৎসা শেষে এখন ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বাসায় আছে তিনি।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, গত সপ্তাহে দুই দফা শারীরিক নানা পরীক্ষার জন্য খালেদা জিয়াকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তিনি মোটামুটি সুস্থ আছেন। ব্যক্তিগত এ চিকিৎসক আরো জানান, লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত খালেদা জিয়ার লিভার প্রতিস্থাপন খুব জরুরি হলেও অস্ত্রোপচারের জন্য শারীরিক সক্ষমতা ও বয়স বিবেচনায় কোনো ঝুঁকি নিতে রাজি হননি লন্ডনের চিকিৎসকরা। লিভারের ঝুকি ছাড়া অন্য সমস্যগুলো এখন স্বাভাবিক।
খালেদা জিয়া লন্ডনে যাওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের ভিসাও নিয়েছেন। প্রয়োজনে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যেতে হতে পারে, এমন চিন্তা থেকে তিনি দেশটির ভিসা নেন। আর ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরবের ভিসা নিয়েছেন। তবে পবিত্র হজে¦র প্রস্তুতি শুরু হওয়ায় এখন আর ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যেতে পারবেন না খালেদা জিয়া।
তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন থেকে লিভার সিরোসিস, কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিসসহ নানা অসুস্থতায় ভুগছেন। ২০১৮ সালে একটি দুর্নীতির মামলায় দ-িত হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর তার অসুস্থতা বাড়ে। এর মধ্যে কয়েকবার তিনি জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও পড়েন।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের লন্ডনে উন্নত চিকিৎসা শেষে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার দেশে ফিরে আসার জন্য কাতারের আমিরের কাছে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুল্যান্স চেয়েছে তার দল। এছাড়া দেশেও সার্বিক সহযোগিতার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তবে সব কিছু নির্ভল করছিল এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের উপর। জানা গেছে, কাতারের আমিরের দেয়া বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলন্সের এর শিডিউল পাওয়া গেছে। সেই হিসেবে আগামী ৪ মে রোববার দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির শীর্ষ ওই নেতা বলেন, খালেদা জিয়াকে বিমানবন্দরে বরণ করে নেয়ার পাশাপাশি উত্তরা থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত শোডাউন করার জন্য কমিটি করা হয়েছে। তিনি জানান, বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে বেগম জিয়াকে বিএনপির ্স্থায়ী কমিটির সব সদস্য বরণ করে নিবেন। এসময় অন্যান্য সিনিয়র নেতারাও উপস্থিত থাকবেন। তিনি জানান, রিসিভ কমিটিতে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য, দেশের কয়েকজন বিশিষ্টজনকেও রাখা হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া এখন বেশ ভালো আছেন। তবু বয়স ও অসুস্থতা বিবেচনায় দীর্ঘ বিমানভ্রমণের ঝুঁকি নিতে চাইছে না তার পরিবার। তাই এয়ার অ্যাম্বুল্যান্সেই তাকে ঢাকায় আনতে চাইছে তারা।
বিএনপি চেয়ারপার্সনের একান্ত সচিব আবদুস সাত্তার বলেন, তারা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। তবে খালেদা জিয়া কবে আসবেন এখনই সে বিষয় সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান সংগ্রামকে বলেন, খালেদা জিয়া দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে ফেরার তারিখ নির্ধারণের আগে তার চিকিৎসকদের মতামত ও আনুষঙ্গিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার বিষয় রয়েছে। দলের পক্ষ থেকেও তাকে দেশে আনতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। খুব শিগগির তিনি জনগণের মাঝে ফিরে আসবেন।
জানা গেছে, বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান মা বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেশে না আসলেও দুই পুত্রবধূ সাথে আসবেন বলে জানা গেছে। বিএনপি চেয়ারপার্সনের দেশে ফেরা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন করে প্রাণসঞ্চার করবে বলে মনে করছেন সিনিয়র নেতারা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম ও আন্দোলনে যে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে, তা কাটাতে খালেদার দেশে ফেরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা তাদের। একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ম্যাডাম দেশে ফিরলে দলীয় কর্মসূচি নতুন করে গতি পাবে। কর্মী-সমর্থকরা উজ্জীবিত হবে।