# আজ ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় বসছেন ইউরোপীয় মন্ত্রীরা

# ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া

# ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়াতে ট্রাম্পকে আহ্বান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর

#খামেনিকে হত্যার প্রকাশ্য হুমকি ইসরাইলী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

দখলদার ইসরাইলের হামলা প্রতিরোধে ইরানের পাল্টা হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইরানের সশস্ত্র বাহিনী ইহুদিবাদী ইসরাইলের বিরুদ্ধে অপারেশন ট্রু প্রমিজের ১৪তম দফা হামলা চালিয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। হামলায় এক গুচ্ছ কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ও আত্মঘাতী ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। এ হামলায় যেসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ নতুন ধরনের। ইসরাইলের কয়েক স্তর-বিশিষ্ট আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে এসব ক্ষেপণাস্ত্রের বেশিরভাগই রাজধানী তেল আবিবের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হেনেছে। ইসরাইল এসব ক্ষেপনাস্ত্রের ধরন এখনো চিহ্নিত করতে পারেনি। ইরানের একের পর এক হামলায় দিশেহারা ইসরাইল। ইসরাইলের ইহুদি নাগরিকরা মুসলিমদের কাছে ও ইরানের কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন। তারা স্যোসাল মিডিয়ায় কান্না জড়িত কন্ঠে ক্ষমা চাওয়ার ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা গেছে। ইসরাইল এ যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য কামনা করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো কোন সিদ্ধান্ত দেননি। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আজ শুক্রবার ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। জার্মান কূটনৈতিক সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

ইসরাইলে ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার দৃশ্য সম্প্রচার করার ব্যাপারে ইহুদিবাদী বাহিনীর পক্ষ থেকে ব্যাপক মাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও গতকালের হামলাগুলোর ছবি এবং ভিডিও ব্যাপকভাবে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ইহুদিবাদীরা প্রাণভয়ে দিগ্বিদিক ছুটে পালাচ্ছে, কেউ ভূগর্ভস্থ আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছে এবং কেউবা আতঙ্কে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে না গিয়ে উল্টোদিকে দৌড় দিচ্ছে। এ সময় ইহুদিবাদীদের আতঙ্ক বাড়িয়ে দিচ্ছে ভয়ঙ্কর শব্দের সাইরেন।

র্পাসটুডে জানিয়েছে কোনো কোনো রিপোর্টে বলা হয়েছে, গতকাল ইসরাইলের আকাশে অন্তত ৫০টি ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র দেখা গেছে যেগুলোর মধ্যে একাধিক প্রজন্মের ক্ষেপণাস্ত্র এই প্রথমবারের মতো ব্যবহার করা হয়েছে।

ইসরাইলী হতাহতের খবর প্রচার করার ওপর বিধিনিষেধ থাকলেও কোনো কোনো সূত্র শুধুমাত্র গতকালে হামলায় ৫০ জনের বেশি ইহুদিবাদী নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে।

গতকালের হামলায় ইসরাইল সরকারের বহু কৌশলগত স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়। এসব স্থাপনার মধ্যে রয়েছে সামরিক ও গোয়েন্দা সদরদপ্তর। এসব স্থাপনায় ইরানী ক্ষেপণাস্ত্র নিখুঁতভাবে আঘাত হানায় ইসরাইলী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোমের কার্যকারিতা নিয়ে আবার প্রশ্ন উঠেছে।

ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি বলেছে, ইসরাইলের রাজধানী তেল আবিবের একটি হাসপাতালের কাছে অবস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ গোয়েন্দা দপ্তরকে লক্ষ্য করে আজকের হামলা চালানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে ওই হাসপাতালের ভেতরের লোকজনকে আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করতে দেখা গেছে।

এদিকে এসব হামলাকে বির্তকিত করতে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা দাবি করেন ইরান বিরশেভা শহরের সোরোকা হাসপাতালে সরাসরি হামলা চালিয়েছে। তবে ইরান বলছে, বৃহস্পতিবার সকালে ইসরাইলের বিরশেভা শহরের সোরোকা হাসপাতালের পাশে একটি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্য করেই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ইসরাইলী প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) একটি কমান্ড ও গোয়েন্দা সদরদপ্তর (আইডিএফ-সিফোরআই) এবং গাভ-ইয়াম টেকনোলজি পার্কে অবস্থিত একটি সেনা গোয়েন্দা ক্যাম্পের ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘হাসপাতাল মূলত বিস্ফোরণের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বড় কোনো ক্ষতি হয়নি। আসল লক্ষ্য ছিল সামরিক অবকাঠামো, আর সেটাই সরাসরি ও নির্ভুলভাবে আঘাত করা হয়েছে।’

এছাড়াও ইসরাইলের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী শারেন হাসকেল সোরোকা হাসপাতালে তথাকথিত ইরানের হামলাকে ‘ইচ্ছাকৃত’ ও ‘অপরাধ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

শারেন হাসকেল এক এক্স পোস্ট করে বলেন, ‘যেটি আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে সেটি কোনো সামরিক ঘাঁটি নয়, বরং একটি হাসপাতাল এবং এটিই ইসরাইলের পুরো নেগেভ অঞ্চলের প্রধান চিকিৎসাকেন্দ্র।’

ইসরাইলী হামলায় ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩৯

ইসরাইলের বিমান হামলায় ইরানে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৬৩৯ জনে দাঁড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ইরানের মানবাধিকার সংবাদ সংস্থা (এইচআরএএনএ)।

এইচআরএএনএ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ১৩ জুন ভোরবেলায় ইসরাইলী হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে বুধবার (১৮ জুন) পর্যন্ত ইরানে কমপক্ষে ৬৩৯ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩২৯ জন আহত হয়েছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, ইরানের জানজান, ফারস, তেহরান, ইসফাহান, হামেদান, আলবোর্জ, পূর্ব আজারবাইজান, সেমনান, কেরমানশাহ, মাজান্দারান, খুজেস্তান, ইলাম, কোম, বুশেহর, গিলান এবং কাজভিনসহ ১৬টি প্রদেশে বিভিন্ন অবকাঠামো এবং সুযোগ-সুবিধা লক্ষ্য করে ইসরাইলী হামলা অব্যাহত রয়েছে, যার মধ্যে তেহরানের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।

যদিও ইরান সরকারের পক্ষ থেকে হতাহতের বিষয়ে নতুন কোনো আপডেট দেওয়া হয়নি। সবশেষ সোমবার (১৬ জুন) সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এক পোস্টে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হোসেইন কেরমানপুর বলেছেন, ইসরাইলী বিমান হামলায় ২৪৪ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে এবং ১,২৭৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এদিকে ইরান থেকে চালানো ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরাইলে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও তা ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে তেহরান।

গতকাল বৃহস্পতিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ এক প্রতিবেদনে জানায়, ইরানের হামলায় ইসরাইলের বহু মানুষ হতাহত হয়েছে এবং বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে এসব তথ্য গোপন রাখতে উঠে পড়ে লেগেছে ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ।

ইসরাইলী কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শুক্রবার থেকে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং প্রায় ৬০০ জন আহত হয়েছে। সূত্র: আনাদোলু

যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাওয়া ইসরাইলের ‘দুর্বলতার লক্ষণ’- খামেনি

চলমান সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য চাওয়া ইসরাইলের ‘দুর্বলতার লক্ষণ’ বলে মন্তব্য করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ এক পোস্টে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা এ মন্তব্য করেন।

পোস্টে তিনি বলেন, ‘ইহুদিবাদী সরকারের আমেরিকান বন্ধুরা এই দৃশপটে প্রবেশ করেছে এবং যে ধরনের কথা বলছে, তা ইহুদিবাদী সরকারের “দুর্বলতা এবং অক্ষমতার” লক্ষণ।’

খামেনি আরও বলেন, ‘আমি আমাদের প্রিয় জাতিকে বলতে চাই, শত্রু যদি বুঝতে পারে যে আপনি তাদের ভয় পান, তাহলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তাই আজ পর্যন্ত যে আচরণ করে এসেছেন তা চালিয়ে যান; আগের মতোই দৃঢ় মনোবল এবং আরও শক্তি নিয়ে এগিয়ে চলুন।’

এরআগে গত বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া বার্তায় খামেনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জানা উচিত তাদের যেকোনো সামরিক হস্তক্ষেপ সন্দেহাতীতভাবে তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনবে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থাপকের পাঠ করা এই বক্তব্যে আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, ‘ইরান, এর জনগণ এবং এর ইতিহাস সম্পর্কে জানা ব্যক্তিরা কখনোই এই জাতির সাথে হুমকির ভাষায় কথা বলেন না। কারণ, ইরানীরা আত্মসমর্পণকারী নয়।’ সূত্র: আলজাজিরা

ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় বসছেন ইউরোপীয় মন্ত্রীরা

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় আজ শুক্রবার ইরানী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পারমাণবিক আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। জার্মান কূটনৈতিক সূত্র ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

সূত্রটি জানায়, প্রথমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ কূটনীতিক কাজা কালাসের সঙ্গে জার্মানির জেনেভা স্থায়ী মিশনে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে যৌথ বৈঠক করবেন তারা।

ইউরোপীয় এই উদ্যোগ এমন এক সময়ে এসেছে, যখন মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল ও ইরানের মধ্যে সংঘাত ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। গত সপ্তাহে ইসরাইল তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের ওপর ব্যাপক সামরিক হামলা চালিয়েছে। জবাবে ইরানও ইসরাইলী লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনও স্পষ্ট করে বলেননি যে, যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র ইসরাইলের সামরিক অভিযানে যোগ দেবে কি না। ফলে এই সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

জার্মান সূত্র জানিয়েছে, ইরান ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে এই আলোচনার লক্ষ্য হচ্ছে- ইরান নিশ্চিতভাবে তার পারমাণবিক কর্মসূচি শুধু বেসামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে Ñ সেই প্রতিশ্রুতি আদায় করা। আলোচনাটি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বয় করেই অনুষ্ঠিত হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সূত্রটি।

সূত্র আরও জানিয়েছে, এই আলোচনা শেষ হওয়ার পর বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে একটি কাঠামোবদ্ধ সংলাপ শুরু হবে।

ইসরাইল বলছে, তাদের লক্ষ্য হলো তেহরান যেন পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে না পারে, সেই ক্ষমতা চিরতরে বন্ধ করা। তবে ইরান দাবি করেছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শুধুই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।

এদিকে,জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ র্মেজ ইসরাইলের হামলার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এ সপ্তাহে তিনি তেহরানকে সতর্ক করে বলেন, ইরান যদি উত্তেজনা প্রশমনে না আসে, তাহলে আরও বড় ধ্বংসের মুখোমুখি হতে পারে।

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে না জড়াতে ট্রাম্পকে আহ্বান ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর

ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ থেকে সরে আসতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ের স্টারমার। একই সঙ্গে সব পক্ষকে কূটনৈতিক সমাধান খোঁজার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সংঘাত ‘বৃদ্ধির বড় ঝুঁকি’ রয়েছে। ‘এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে এবং আমার মতে, এটিই এই সমস্যা সমাধানের উপায়’।

এমন সময়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য এসেছে যখন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এই উত্তেজনা কমানোর উদ্দেশ্যে আলোচনার জন্য ওয়াশিংটন যাচ্ছেন। যেখানে তিনি ট্রাম্পের শীর্ষ কূটনীতিক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গেও দেখা করবেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে ল্যামি এবং রুবিও আলোচনা করবেন।

ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করল রাশিয়া

ইরান-ইসরাইলের চলমান সংঘাতে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ না নেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছে রাশিয়া।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন ইসরাইল-ইরান সংঘাতে আমেরিকার হস্তক্ষেপ পরিবেশকে ‘আরেকটি ভয়াবহ উত্তেজনার দিকে নিয়ে যাবে’।

এদিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিকভাবে জড়িত না হওয়ার জন্য কঠোরভাবে পরামর্শ দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ‘আমরা বিশেষভাবে ওয়াশিংটনকে ইরান-ইসরাইলের চলমান সংঘাতে সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করতে চাই। এই ধরণের যেকোনো পদক্ষেপ “অত্যন্ত বিপজ্জনক” হবে এবং এর ফলে “অপ্রত্যাশিত নেতিবাচক পরিণতি” হতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরাইলী হামলা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, আন্তর্জাতিক আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অবৈধ, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য অগ্রহণযোগ্য হুমকি তৈরি করে এবং বিশ্বকে পারমাণবিক বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেয়।’

এছাড়া গত বুধবার ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা না দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ।

তিনি বলেছেন, ‘এটি নাটকীয়ভাবে পুরো পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করবে’। সূত্র: আনাদোলু, বিবিসি

মধ্যপ্রাচ্যের জন্য ইসরাইল হচ্ছে ‘ক্যান্সার’: উত্তর কোরিয়া

ইরানে ইসরাইলী বিমান হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গন। এই হামলার বিরুদ্ধে এবার সরব হয়েছে উত্তর কোরিয়া, তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়ে দেশটি বলেছে, ইসরাইল এখন মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য ‘ক্যান্সারের মতো এক সত্তা’। বিশ্বের নজর যখন ইসরাইল-ইরান সংঘাতের দিকে, তখন পিয়ংইয়ংয়ের এমন মন্তব্য নতুন উত্তেজনার ইঙ্গিত দিচ্ছে। খবর টিআরটি গ্লোবাল, মিন্ট

গতকাল বৃহস্পতিবার দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ-তে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, ‘আমরা ইরানের বেসামরিক, পারমাণবিক ও জ্বালানি স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরাইলের হামলায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং এ হামলাকে কঠোরভাবে নিন্দা জানাচ্ছি।’

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ-তে প্রকাশিত বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়া শুধু হামলার সমালোচনাই করেনি, বরং ইসরাইলকে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবেও আখ্যা দিয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের ছত্রছায়ায় ইসরাইল দিন দিন ‘বিশ্ব শান্তির প্রধান শত্রু’তে পরিণত হচ্ছে।

কেসিএনএর প্রতিবেদনে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, ‘ইসরাইল হচ্ছে এক ক্যান্সার-সদৃশ সত্তা, যা শান্তি ও স্থিতিশীলতার শত্রু। এর মাধ্যমে বিশ্ব বুঝে নিচ্ছে, মধ্যপ্রাচ্যের চলমান অস্থিরতার মূল হোতা কারা।’

তিনি আরও বলেন, ইসরাইলের হামলা আন্তর্জাতিক আইন, সার্বভৌমত্ব এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী। এটি এক ক্ষমাহীন মানবতাবিরোধী অপরাধ।

তিনি বলেন, ইসরাইলী হামলায় নিরীহ বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যা ‘ক্ষমার অযোগ্য মানবতা-বিরোধী অপরাধ’। ইসরাইলকে ‘রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সন্ত্রাসবাদী শক্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তেলআবিবের এই আচরণ গোটা অঞ্চলে একটি নতুন সর্বাত্মক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করছে।’

এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোকে সরাসরি সতর্ক করে উত্তর কোরিয়া জানায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা শক্তির মদদে ইসরাইল আজ মধ্যপ্রাচ্যের শান্তির জন্য এক ক্যান্সারসদৃশ অস্তিত্বে পরিণত হয়েছে। বিশ্বশান্তি ও নিরাপত্তা ধ্বংসের জন্য তারা প্রধান অপরাধী।’

এই বিবৃতি এমন সময়ে এসেছে, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরান নিয়ে তার ‘ধৈর্য শেষ হয়ে গেছে।’ ট্রাম্পের ওই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে উত্তর কোরিয়া হুঁশিয়ারি দিয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা যদি আগ্রাসী পদক্ষেপ অব্যাহত রাখে, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণহীন ও বিপর্যয়কর পর্যায়ে চলে যাবে।”

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিও সম্প্রতি ট্রাম্পের ‘নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ’ দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি হস্তক্ষেপ করে, তবে তাদের জন্য তা ‘অপূরণীয় ক্ষতি’ বয়ে আনবে।’

ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানের পরিকল্পনায় সম্মতি দিয়েছেন, তবে আপাতত তা কার্যকর করছেন না, ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখার অপেক্ষায় আছেন।

খামেনিকে হত্যার প্রকাশ্য হুমকি ইসরাইলী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

ইরানের সর্বোচ্চ ধমীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যা করা হবে বলে প্রকাশ্য হুমকি দিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ। তিনি বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হলেন ‘আধুনিক হিটলার’ এবং ‘তিনি আর বেচে থাকতে পারবেন না’।

গতকাল বৃহস্পতিবার বীরসেবার সোরোকা হাসপাতাল পরিদর্শন করেন কাৎজ, যেটি ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাইমস অব ইসরাইল এ তথ্য দিয়েছে।

পরিদর্শন শেষে তেল আবিবের কাছে হলোনে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন, ‘খামেনি প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, তিনি ইসরাইলকে ধ্বংস করতে চান, তিনি ব্যক্তিগতভাবে হাসপাতালগুলোতে হামলা চালানোর নির্দেশ দেন। আইডিএফের যুদ্ধ লক্ষ্য অনুসারে, নিঃসন্দেহে এই ব্যক্তির অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়।’