ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) পুলিশ মেট্রোরেলের চারজন কর্মীকে মৌখিক ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনায় বিচারের দাবিসহ অন্যান্য দাবিতে কর্মবিরতিতে যাওয়া মেট্রোরেলের স্টাফরা কাজে ফিরেছেন। এমডির আশ্বাসে কাজে যোগ দিয়েছেন তারা।
গতকাল সোমবার সকাল থেকে স্টেশনে এসে হাজির হলেও কাজ করছিলেন না ডিএমটিসিএল’র স্টাফরা। ফলে সকালে ট্রেন চললেও কেউ যাত্রীদের কোনও সহায়তা করছিলেন না। এতে যাত্রীদের অধিকাংশই বিনা টিকিটে মেট্রোরেল চড়ার সুযোগ পান বলে জানান স্টেশনে উপস্থিত নিরাপত্তাকর্মীরা। পরে সকাল পৌনে ৯টায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুক আহমেদ মিরপুর-১০ মেট্রোরেল স্টেশনে এসে স্টাফদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। এরপর তারা কাজে ফেরেন।
গত ১৬ মার্চ বিকালে সচিবালয় মেট্রোরেল স্টেশনে সিভিল পোশাকে দুই নারী বিনা টিকিটে মেট্রোরেলে ভ্রমণ করেন সুইং গেট দিয়ে পেইড জোন থেকে বের হতে চান। কর্তব্যরত সিআরএ কারণ জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যরা তর্কে জড়ান এবং পরে কন্ট্রোল রুমে চলে যান। এরপর দুই এপিবিএন সদস্য একইভাবে সুইং গেট ব্যবহার করলে সিআরএ তাদের কাছেও কারণ জানতে চান। এ সময় তারা আগের ঘটনার জের ধরে তর্কে লিপ্ত হন। কিছুক্ষণ পর পুলিশের আরও কয়েকজন সদস্য এসে মেট্রোরেলকর্মীদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে এক পুলিশ সদস্য রাইফেল দিয়ে এক কর্মীর কাঁধে আঘাত করেন এবং অপর এক কর্মীকে টেনে নিয়ে মারধর ও বন্দুক তাক করে গুলী করার হুমকি দেন। পরবর্তীতে, উপস্থিত স্টাফ ও যাত্রীদের হস্তক্ষেপে আহত কর্মীকে উদ্ধার করা হয়। উভয়পক্ষই হাতাহাতির ঘটনায় আহত হওয়ার অভিযোগ করে।
এ ঘটনার পর ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর স্টাফরা ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো-
১. আগামী এক কার্যদিবসের মধ্যে ঘটনার মূল হোতা এসআই মাসুদকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের (কনস্টেবল রেজনুল, ইন্সপেক্টর রঞ্জিত) শাস্তি প্রদান ও প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
২. মেট্রোরেল স্টাফ ও যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য নিজস্ব সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে হবে।
৩. এমআরটি পুলিশকে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
৪. স্টেশনে কর্মরত সিআরএ, টিএমও, স্টেশন কন্ট্রোলারসহ সব কর্মীর শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
৫. অফিসিয়াল পরিচয়পত্র ও অনুমতি ছাড়া কেউ যেন পেইড জোনে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. আহত কর্মীদের সম্পূর্ণ চিকিৎসার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে।
মেট্রোরেলের ঘটনায় দুই পুলিশ
বরখাস্ত ॥ তদন্ত কমিটি গঠন
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) চার কর্মীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের ঘটনায় পুলিশের এক এসআইসহ দুজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশনে গণমাধ্যমকর্মীদের এ তথ্য জানিয়েছেন মেট্রোরেলের এমডি ফারুক আহমেদ।
মেট্রোরেলের সচিবালয় স্টেশনে দায়িত্বে থাকা টিএমওর সঙ্গে অসদাচরণ, দায়িত্ব অবহেলা ও শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণের কারণে এমআরটি পুলিশে কর্মরত এসআই মো. মাসুদকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এক অফিস আদেশে। অফিস আদেশে বলা হয়, এমআরটি পুলিশে কর্মরত এসআই মো. মাসুদ খানকে গত ১৬ মার্চ বাংলাদেশ সচিবালয় মেট্রোরেল স্টেশনে ইনচার্জ হিসেবে দ্বিতীয় পালায় নিরাপত্তা দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়। ওইদিন তিনি দায়িত্ব পালনকালে অনুমান বিকেল ৫টায় মেট্রোরেলের দায়িত্বে থাকা টিএমওর সঙ্গে অসদাচরণ, দায়িত্ব অবহেলা ও শৃঙ্খলাবহির্ভূত আচরণ করায় জনসম্মুখে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীসহ এমআরটি পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।
এতে আরও বলা হয়, এ সংক্রান্ত এসআই মো. মাসুদ খানকে পিআরবি রুলস-৮৮০ বিধি মোতাবেক গত ১৬ মার্চ অপরাহ্ন হতে বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের চাকরি হতে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালীন তিনি বিধি মোতাবেক খোরপোষ ভাতা প্রাপ্য হবেন। এমআরটি পুলিশ লাইনে সংযুক্ত থেকে বিভাগীয় নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলবেন।