আজ ৭ এপ্রিল সোমবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। প্রতিবছর বিশ্বজুড়ে দিনটিকে গুরুত্ব দিয়ে পালন করা হয়। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই অধিকার বাংলাদেশের মানুষের জন্য কতটা স্বাচ্ছন্দের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এখানে সুচিকিৎসার অভাবে মানুষ দলে দলে বিদেশমূখী হয়। চিকিৎসা সেবা নিয়ে মানুষের অভিযোগের অন্ত নাই।

এতো দিন বিশেষায়িত চিকিৎসার জন্য মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ওপর নির্ভর করতো। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট স্বৈরাচার হাসিনার পলায়নের পর ভারত সরকার ভিসা দেওয়া প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের মানুষকে বিকল্প হিসেবে চীন এবং থাইল্যান্ডকে বেছে নিতে হচ্ছে।

এমন এক সময় বাংলাদেশে স্বাস্থ্য দিবস এসেছে যখন বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অর্ন্তবর্তী সরকার সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সমস্যগুলো দূরীকরণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। আগের সরকারের সময় বিভিন্ন গবেষণায় আসা স্বাস্থ্য খাতে সুশাসনের অভাবের কথা এসেছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিয়ে একটি ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। যুগোপযোগী একটা কাঠামো কেমন হওয়া উচিত, সে ব্যবস্থায় কী ধরনের পেশাদারি দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন, তার উত্তর খোজার পরামর্শ এসেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন, কার্যকর রেফারেল ব্যবস্থা ছাড়া কোনো আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা ভাবা যায় না। আমাদের দেশের অভাবনীয় দুরবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরি। কীভাবে এই ব্যবস্থা কাজ করবে, এ নিয়ে অতীতে অনেক আলাপ-আলোচনা হয়েছে, অগ্রগতি হয়নি। ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড নিয়ে অগ্রগতি সীমিত। এই কাজ দুটিকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবান জাতি গড়ে তুলতে জনস্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে। মোট কথা হলো --জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সবচেয়ে প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব সরকারের।

এবারের স্বাস্থ্য দিবসের বাণীতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সকল স্তরের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ২৪ এর গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী গঠিত অর্ন্তর্র্বতী সরকার নারী ও শিশুদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের মাধ্যমে একটি সুরক্ষিত ও আলোচিত জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে বিশ্বে দাঁড় করাতে অঙ্গীকারবদ্ধ। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘জন্ম হোক সুরক্ষিত, ভবিষ্যৎ হোক আলোকিত’। মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমানোর লক্ষ্যে অধিকতর কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন। কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হার এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এ জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল পর্যায় থেকে সম্মিলিত প্রয়াস জরুরি। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল’-এর মাধ্যমে অর্জিত সাফল্যকে টেকসই করতে বিশ্বনেতৃবৃন্দ ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য যে সব টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন, তার অন্যতম হলো সকলের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এ বছর মাতৃস্বাস্থ্য ও শিশুস্বাস্থ্য রক্ষার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে।