# পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর দাবি সাদিক কায়েমের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা এবং সাইবার বুলিং প্রতিরোধের লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ’, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-১’ ও ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ-২’ সহ আরো কয়েকটি চিহ্নিত অনলাইন পেইজ অনতিবিলম্বে বন্ধ করে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত তা বলবৎ রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়েছে।

এছাড়া, গ্রিন ফিউচার ফাউন্ডেশন কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পরিচালিত বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম ডাকসু নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে বিধায় আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত সংগঠনটির সব ধরনের কার্যক্রম ও শাটল সার্ভিস ক্যাম্পাসে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও সংশ্লিষ্ট পক্ষ থেকে ক্যাম্পাসে যেসব প্রচারণামূলক বিলবোর্ড/ব্যানার টানানো রয়েছে কিংবা ইতোমধ্যে টানানো হয়েছে, সেগুলো সরিয়ে ফেলতে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো প্রার্থী বা পক্ষ স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো ধরনের সেবামূলক কাজে অংশ নিতে পারবেন না। সব ধরনের উপঢৌকন বিলি-বন্টন, আপ্যায়ন, অর্থ সহযোগিতা কিংবা অনুরূপ কার্যক্রম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ থাকবে। এসব কার্যক্রম নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ বলে বিবেচিত হবে।

প্রার্থীরা আগামী ২৫ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত হল কিংবা ক্যাম্পাসে প্রচারণা চালাতে পারবেন না। নির্ধারিত সময় অনুযায়ী ২৬ আগস্ট থেকে ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ রাত ১১টা পর্যন্ত ব্যক্তি অথবা সংগঠনের পরিচয়ে হল কিংবা ক্যাম্পাসে প্রচার কার্যক্রম চালাতে পারবেন। তবে এ সময়েও সামাজিক/আর্থিক/সেবামূলক সহযোগিতা বা কার্যক্রম পরিচালনা, মজলিশ-মাহফিল আয়োজন কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/প্রাঙ্গণে প্রচারণা চালানো নিষিদ্ধ থাকবে। এসব কর্মকা- আচরণবিধি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হবে এবং ‘নির্বাচন আচরণ বিধিমালা’ ধারা-১৭ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (ডাকসু) নির্বাচন উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার সময়সূচি পেছানোর দাবি জানিয়েছেন ইসলামি ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও ডাকসু নির্বাচনে শিবিরের ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল থেকে সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী সাদিক কায়েম। রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিন থেকে সাংবাদিকদের এ দাবি জানান তিনি। পরীক্ষা পেছানোর দাবি জানিয়ে সাদিক কায়েম বলেন, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু নির্বাচন। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে অনেক বিভাগের পরীক্ষা রয়েছে। কারও অ্যাসাইনমেন্ট, কারও প্রেজেন্টেশন এবং ফাইনাল-মিডটার্ম। কিন্তু নির্বাচন উপলক্ষে যে উৎসবমুখর পরিবেশ ও প্রচারণা চলছে, সে কারণে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বিঘিœত হচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, সব পরীক্ষা যেন ৯ সেপ্টেম্বরের পরে নিয়ে যাওয়া হয়। এটা শিক্ষার্থীদেরও দাবি।

বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই বিষয়টি নির্বাচন কমিশনারকে জানানো হয়েছে। তারাও যেন বিষয়টি আমলে নিয়ে পরীক্ষা পেছানোর ব্যবস্থা করেন। যেহেতু সারা দেশের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে এবং ডাকসুর মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি হতে যাচ্ছে। তাই আমাদের দাবি, পরীক্ষাগুলো যেন পিছিয়ে দেওয়া হয়।

নির্বাচিত হলে কী করবেন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিজনেস ফ্যাকাল্টির সমস্যা আছে। তাদের বসার জায়গা কম। লাইব্রেরি সংস্কার করবো। বিজনেস ফ্যাকাল্টির খাবারের দাম অনেক বেশি। এখানে এক ধরনের বাণিজ্য করা হয়। ক্লাসে পাঠদানের কোয়ালিটি বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের পড়াশোনার মানে গা ছাড়া ভাব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণাভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এখানে যে রাজনীতি করতে চায়, এবং যে চায় না, সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে।

ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মনোনীত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি আবাসিক হলের রিডিংরুমে (পাঠকক্ষ) ঢুকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে করমর্দন ও কোলাকুলি করে ভোট প্রার্থনা করেনÑযা আচরণবিধি অনুযায়ী নিষিদ্ধ। এ ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের কাছে এক শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। রবিবার দুপুর একটায় আবিদুল ইসলাম খান হল পাড়ায় আসেন শিক্ষার্থীদের কাছে।এর আগে গতকাল তিনি অমর একুশে হলের রিডিংরুমে প্রবেশ করে একাধিক শিক্ষার্থীর কাছে গিয়ে নিজের পরিচয় দিতে থাকেন দোয়া/সমর্থন চান এবং কয়েকজনের সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন।

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন–২০২৫-এর নির্বাচনি বিধিমালা ৬(চ) অনুযায়ী, শ্রেণিকক্ষ, পাঠকক্ষ, পরীক্ষার হলসহ পাঠদান বা অধ্যয়ন ব্যাহত হতে পারেÑএমন স্থানে সভা/সমাবেশ বা নির্বাচনি প্রচারণা করা যাবে না। আর বিধিমালা ১৭ অনুযায়ী, আচরণবিধি ভঙ্গের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার বা আইন অনুযায়ী অন্যান্য দ-ের বিধান আছে।

এদিকে এ ঘটনায় ২৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশনের চীফ রিটার্নিং অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কবি জসীমউদ্দীন হলের শিক্ষার্থী ও ভোটার শাহজামাল সায়েম। চিঠিতে তিনি দাবি করেছেন, ২১ আগস্ট থেকে অভিযোগের দিন পর্যন্ত প্রার্থী একাধিক কমিশন বিজ্ঞপ্তি অমান্য করে প্রচারণা চালিয়ে গেছেন। অভিযোগপত্রে বিভিন্ন গণমাধ্যমের স্ক্রিনশট ও একটি ভিডিও লিংক সংযুক্ত আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সুযোগ পাচ্ছেন ৩৪ প্রার্থী :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে আবেদনপত্রে ত্রুটি থাকায় স্থগিত হওয়া ৪৭ প্রার্থীর মধ্যে আপিল করা করা ৩৪ প্রার্থীই নির্বাচনের সুযোগ পাচ্ছেন। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে নিজ অফিসের সামনে এসব কথা জানান চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, যে ৩৪ প্রার্থী আপিল করেছিল তাদের পক্ষেই রায় হয়েছে বলে আনঅফিসিয়ালি আমরা জানতে পেরেছি। অর্থাৎ তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর সংসদ-১ ও ২ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চসহ বেশ কয়েকটি পেজের বিষয়ে বিটিআরসি অফিসে জানানো হয়েছে। আশা করি খুব দ্রুতই পেজগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।

আদালতে রিট :

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে (ডাকসু) ভোটার তালিকায় থাকা নারী শিক্ষার্থীদের ছবি ও ব্যক্তিগত তথ্য সীমিত আকারে প্রদর্শনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থী এ রিট দায়ের করেন। রিটকারীরা হলেন– সাবিকুন্নাহার তামান্না, মো. জাকারিয়া, ফাতেমা, তাসনিম ঝুমা ও রেদোয়ান ম-ল রিফাত। তাদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফয়জুল্লাহ ফয়েজ। রিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার তালিকায় প্রকাশিত নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ছবি অপসারণ চেয়ে ভিসি বরাবর চিঠি দেন শিক্ষার্থীরা।

চিঠিতে বলা হয়েছিল, সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভোটার তালিকায় নারী শিক্ষার্থীদের ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার গুরুতর লঙ্ঘন। ছবি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্যÑ যা শিক্ষার্থীর অনুমতি ছাড়া প্রকাশ করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ কারণে অনেক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে মানসিক অস্বস্তি ও বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ নিকাবি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি ছিল অত্যন্ত বিব্রতকর ও বিভ্রান্তিকর পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা এই সংবেদনশীল তথ্যগুলো সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। অথচ এত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রশাসনের নজরে আসেনি, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এজন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের জবাবদিহি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। অতএব, আমাদের বিনীত অনুরোধ– ১. দ্রুততম সময়ে নারী শিক্ষার্থীদের ছবি সম্বলিত ভোটার তালিকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হোক, ২. ভবিষ্যতে এ ধরনের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ না করে বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থী পরিষেবার মতো রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করেÑ তথ্য দেখার একটি নিরাপদ ব্যবস্থা চালু করা হোক। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, উপাচার্য মহোদয় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তবে সে চিঠি অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় রিট দায়ের করা হয়েছে।