*ভারত ছাড়লেন ২৭২ পাকিস্তানী, পাকিস্তান ছেড়েছেন ৬২৯ ভারতীয়

জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁয়ে হামলার প্রেক্ষিতে পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের মাঝে সীমান্তে আবারও গুলী বিনিময়ের খবর পাওয়া গেছে। দুদেশের মধ্যে উত্তেজনা চলমান এমন পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ভারত যদি উত্তেজনা ছড়ায় এবং এতে যদি পরিস্থিতির অবনতি ঘটে, তাহলে আমাদের কেউই থামাতে পারবে না। এদিকে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৫৪ ‘সন্ত্রাসী’ নিহত, সন্দেহের নজর ভারতের দিকে। গতকাল রোববার ভারত ছাড়লেন ২৭২ পাকিস্তানী, পাকিস্তান ছেড়েছেন ৬২৯ ভারতীয়। খবর এনডিটিভি, আলজাজিরা, জিও নিউজের। পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে টানটান উত্তেজনার মধ্যেই সীমান্তে সেনাদের মধ্যে আবারও গোলাগুলীর ঘটনা ঘটেছে। শনিবার রাতের এ ঘটনা নিয়ে টানা তিন রাত ধরে কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে গোলাগুলীর ঘটনা ঘটল। ভারতীয় গণমাধ্যমে গোলাগুলীর জন্য পাকিস্তানকে দোষারোপ করা হলেও পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বা দেশের সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

এদিকে পাকিস্তানের উত্তর ওয়াজিরিস্তানের হাসান খেল এলাকায় পাকিস্তান-আফগান সীমান্ত দিয়ে ব্যাপক অনুপ্রবেশের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় অন্তত ৫৪ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর গণমাধ্যম শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর)। গতকাল রোববার আইএসপিআর জানায়, ২৫, ২৬ এবং ২৭ এপ্রিলের মধ্যে হাসান খেল এলাকা দিয়ে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছিল একদল সন্ত্রাসী। তাদের গতিবিধি নজরে এনে দ্রুত প্রতিরোধ গড়ে তোলে নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়াও ভারত সরকার ঘোষিত সময়সীমার মধ্যে ২৭২ জন পাকিস্তানী নাগরিক গত দুই দিনে আত্তারি-ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে নিজ দেশে পৌঁছেছেন। এদিকে, একই সময়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে ফিরেছেন ৬২৯ জন ভারতীয় নাগরিক, যাদের মধ্যে ১৩ জন ছিলেন কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তা। জানা গেছে, গতকাল রোববার ‘লিভ ইন্ডিয়া’ নোটিশের শেষ দিনে আরও কয়েক শ পাকিস্তানি নাগরিক ভারত ত্যাগ করবেন। ভারতীয় এক সরকারি কর্মকর্তা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এনডিটিভি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, পহেলগাঁয়ে ভয়াবহ হামলার পর ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা (এলওসি) বরাবর পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে রয়েছে। পাকিস্তানি সেনা ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে নিয়মিত গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। পাকিস্তানি সেনারা নিয়মিতভাবেই নিয়ন্ত্রণরেখায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে। শনিবার রাতেও পাকিস্তানি সেনাদের পক্ষ থেকে ‘ছোট অস্ত্রের উসকানিমূলক গুলীবর্ষণ’র ঘটনা ঘটে। ভারতীয় সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, ২৬ ও ২৭ এপ্রিল রাতের মধ্যে পাকিস্তানের সেনা পোস্টগুলো তুতমারিগালি এবং রামপুর সেক্টরের বিপরীতে কোনো উসকানি ছাড়াই ছোট অস্ত্র দিয়ে গুলী চালিয়েছে। আমাদের সেনারা যথাযথভাবে এর জবাব দিয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ রোববার বলেছেন, পুরো পাকিস্তান আজ সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। ভারত যদি উত্তেজনা ছড়ায় তাহলে আমরা পুলওয়ামার ঘটনায় যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলাম ঠিক সেভাবে মোদি সরকারকে কঠোর জবাব দেওয়া হবে। পুরো পাকিস্তানে সশস্ত্র বাহিনীর পেছনে ঐক্যবদ্ধ আছে বলে দাবি করে খাজা আসিফ যে কোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলেও হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, পারমাণবিক শক্তিধর দুই রাষ্ট্রের যে কোনো সংঘাত আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হুমকি হয়ে উঠবে। এই বিষয়টি বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে আনা হয়েছে। তারা পহেলগাঁয়ের এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করতে পারে। ভারতকে সতর্ক করে দিয়ে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘উত্তেজনা যদি বাড়তে থাকে, তাহলে কেউই আমাদের থামাতে পারবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদি উত্তেজনা বাড়ানোর পথ বেছে নেন, তাহলে আমরা তাকে পুরো পথে তাড়া করব।

এদিকে, পরমাণু শক্তিধর দুদেশের মধ্যে যেন কোনো ধরনের সশস্ত্র সংঘাত শুরু না হয়, তা নিশ্চিত করতে দূতিয়ালি করছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। শনিবার তিনি ভারত ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এ নিয়ে টেলিফোনে কথা বলেছেন। পেজেশকিয়ানের সঙ্গে আলাপকাল শাহবাজ শরিফ বলেন, পানিকে অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা অগ্রহণযোগ্য। পাকিস্তান যে কোনো মূল্যে তার অধিকার রক্ষা করবে। শাহবাজ শরিফ বলেন, ‘পহেলগাঁয়ে হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো সম্পর্ক নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘পহেলগাঁয়ের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য পাকিস্তান প্রস্তুত। অপরদিকে, মোদির সঙ্গে আলাপকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান পহেলগাঁয়ে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যুর তীব্র নিন্দা জানান। ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘ইরান স্পষ্টভাবে এ ধরনের অমানবিক সন্ত্রাসী কর্মকা-ের নিন্দা জানায়।’ সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ওপর তিনি জোর দেন।