দেশ যখন আগুনের মতো জ্বলছিলো তখন ছাত্র-জনতা রাজপথে নেমে এসেছিলো অন্যায়, খুন-খারাবী ও বৈষম্য থেকে দেশকে মুক্ত করার জন্য। তারা রক্ত দিয়ে দেশকে উদ্ধার করেছে। যদি কোন অশুভচক্র চাপ প্রয়োগ করে প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কারের আগে নির্বাচনের ঘোষণা দিতে বাধ্য করে তাহলে আমরা পরিষ্কার বলছি, আমরা ছাত্র-জনতা কিন্তু রাজপথ ছাড়ি নাই। যতদিন পর্যন্ত দেশের আইনশৃঙ্খলা সুন্দর না হবে, কাক্সিক্ষত সংস্কার না হবে, বিচার দৃশ্যমান না হবে ততদিন পর্যন্ত বাংলার জমিনে পূর্বের নিয়মে নির্বাচন হতে পারে না; হতে দেয়া হবে না।

গতকাল মঙ্গলবার, বিকাল তিনটায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে পীর সাহেব চরমোনাই এ মন্তব্য করেছেন।

পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, বিগত ৫৪ বছরে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন হয়েছে সেই নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারই হলো সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য। সেই সংস্কারটাই হলো বিশ্বের বহুদেশের মতো পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। এর মাধ্যমে বহুদেশে শান্তি এসেছে। কালোটাকার দৌরাত্ম্য, মাস্তানি ও সন্ত্রাস বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো পিআর পিদ্ধতির নির্বাচন। বিভিন্ন জরিপেও উঠে আসছে যে, অধিকাংশ মানুষই পিআর চায়। পিআর আজকে দেশের সকল ধারার মানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

পীর সাহ্বে চরমোনাই দৃঢ়তার সাথে বলেন, সংস্কার দৃশ্যমান হতে হবে। নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে। নির্বাচনের পরে জুলাই সনদের আইনি স্বীকৃতি কেউ দিয়ে দেবে সে আশার গুড়েবালি। সবাইকে আহ্বান জানাবো, টেন্ডারবাজি, রাহাজানি, সন্ত্রাস থেকে এবং বিদেশি অধিপত্য থেকে মুক্তির জন্য একমাত্র পদ্ধতি হলো পিআর পদ্ধতি। এই দাবি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কর্মসূচি চালিয়ে যাবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আমরা রাজপথ ছাড়ছি না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, ঢাকা মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন, মহানগর উত্তরের সভাপতি ও দলের যুগ্মমহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, দলের যুগ্মমহাসচিব ও মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাউয়ুম, সহপ্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক কেএম শরীয়াতুল্লাহসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃবৃন্দ।

মাওলানা মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, সংস্কার ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনে যেতে চায় না।

দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ ইউনুস আহমদ প্রশ্ন রেখে বলেন, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি হলে সমস্যা কোথায়?

দলের মুখপাত্র মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, এই সরকারের আমলেই জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিশ্চিত করতে হবে কারণ পরবর্তী কেউ তা বাস্তবায়ন করবেন সে আশা করা যায় না। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার আচরণ রহস্যজনক। তিনি নিজেই বলছেন, সংস্কার না হলে দেশ আগের ধারায় ফিরে যাবে অথচ তিনি নিজেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত না করেই নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। মাওলানা গাজী আতাউর রহমান প্রশ্ন করে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা কার চাপে গণমানুষের প্রত্যাশাকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে দিলেন?

তিনি বলেন, কুমিল্লা বিএনপির এক নেতা একজন বোর্ড চেয়ারম্যানের কলিজা খুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছে। এই দৈত্য-দানবদের কারণে বিদ্যমান পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব না। তাই দেশকে রক্ষা করতে হলে এমনকি বিএনপি নেতাদের নিরাপত্তার জন্যও পিআর পদ্ধতিই একমাত্র সমাধান। মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, নির্বাচনে লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড না হলে কেবল সাক্ষী গোপাল হওয়ার জন্য ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নির্বাচনে যাবে না। বরং দেশের মানুষকে সাথে নিয়ে ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য আন্দোলন করে যাবে ।

প্রধান বক্তার বক্তব্য দেন মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ও দলের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা ইমতেয়াজ আলম। তিনি বলেন, নির্বাচনের বিদ্যমান ধারায় আমাদের ৫৪ বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। দেশ ও জনতার কোন লাভ হয় নাই। আগের ধারায় নির্বাচন করে দেশকে আগের তিমিরে রাখার জন্য মাওলানা খুবাইব, আবু সাইদ, মুগ্ধরা জীবন দেয় নাই। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যদি মনে করেন, আগের ধারায় নির্বাচন করে আগের মতোই চাঁদাবাজি, মাস্তানী করবেন তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। জুলাইয়ের জনতা এখনো জেগে আছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তি।