চলমান ১১টি কূপ খননের মাধ্যমে দৈনিক প্রায় ১৪৩ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। যা দেশের বিদ্যমান গ্যাস সংকট হ্রাসে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে পেট্রোবাংলা। পেট্রোবাংলা জানিয়েছে, বাপেক্সের নিজস্ব ৫টি রিগ এবং টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের ৩টি রিগসহ মোট ৮টি রিগের মাধ্যমে কূপ খনন কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের রিগ দ্বারা তিতাস-২৮ উন্নয়ন কূপ খনন কার্যক্রম শুরু হবে। আগামী জানুয়ারির মধ্যে বিজিএফসিএলের সাথে টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের আরও ১টি রিগের মাধ্যমে তিতাস-৩১ ডীপ অনুসন্ধান কূপের খনন কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে। এছাড়াও ভোলা এলাকায় ৫টি কূপ খননের লক্ষ্যে বাপেক্স ও টার্ন কি পদ্ধতিতে নিয়োজিত চুক্তিভিত্তিক ঠিকাদারের মধ্যে অতি শীঘ্রই চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ফলে ভোলা এলাকায় কূপ খননের লক্ষ্যে আরো একটি রিগ নিয়োজিত হবে। বাপেক্স কর্তৃক খনন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে বাপেক্সের ৫টি রিগের পাশাপাশি আরো ২টি নতুন রিগ ক্রয়ের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

কূপ খননের ওই কার্যক্রম সফল হলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে রেকর্ড হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে অতীতে কোন সময়েই একসঙ্গে ১১টি রিগ ব্যবহার করার নজীর নেই। তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে ঢিলেমির কারণে দীর্ঘদিন ধরেই দূয়োধ্বনি শুনতে হচ্ছে পেট্রোবাংলাকে। সেই ঢিলেমি ফেলে অনন্য নজীর স্থাপন করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।

পেট্রোবাংলা বলেছে, ২০২৫-২৬ সালের মধ্যে ৫০টি ও ২০২৬-২৮ সালের মধ্যে ১০০টি কূপ খনন ও ওয়ার্কওভার কর্মপরিকল্পনাসহ দেশের বিভিন্ন ব্লকে অনুসন্ধান ও নতুন কূপ খনন কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন এন্ড প্রোডাকশন কোম্পানী লিমিটেড (বাপেক্স) কর্তৃক জামালপুর-১ অনুসন্ধান কূপ খননের মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মত ব্লক-৮ এ বাণিজ্যিক গ্যাসের সন্ধান পাওয়া গেছে। জামালপুর স্ট্রাকচারে গ্যাসের রিজার্ভের পরিমাণ ও বিস্তৃতি মূল্যায়নের লক্ষ্যে আরও ২টি (১টি উন্নয়ন ও ১টি অনুসন্ধান) কূপ খননের ডিপিপি প্রণয়ন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

এছাড়াও সিলেট গ্যাস ফিল্ডস লিমিটেড (এসজিএফএল)-এর অর্ন্তগত হরিপুর গ্যাস ফিল্ডে সিলেট-১০ কূপ খননের সময় উক্ত এলাকায় জ্বালানি তেলের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। হরিপুর স্ট্রাকচারে মজুদকৃত জ্বালানি তেলের বাণিজ্যিকভাবে উত্তোলন নিশ্চিত হওয়ার লক্ষ্যে সিলেট-১২ তেল কূপ খননের কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা।

দেশের সিলেট অঞ্চলের পর গ্যাসের সবচেয়ে বড় রিজার্ভ ধারণা করা হচ্ছে ভোলা অঞ্চলে। ওই অঞ্চলে যেখানেই কূপ খনন করা হচ্ছে সেখানেই গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। ভোলা এলাকায় প্রাপ্ত গ্যাসের মজুদ ও বিস্তৃতি নির্ণয়ের লক্ষ্যে উক্ত এলাকায় আরও ১৯টি নতুন কূপ খননের লক্ষ্যে কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এতোদিন ৪ হাজার মিটারে সীমাবদ্ধ ছিল। সেখানেও নতুন রেকর্ড করতে চলেছে। ভূ-গর্ভস্থ গভীরতম স্তর হতে গ্যাস অনুসন্ধানে কূপ খনন করা হচ্ছে। তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস ফিল্ডে ২টি এবং বাপেক্সের আওতায় শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ড ও মোবারকপুর স্ট্রাকচারে ২টি সহ মোট ৪টি গভীর কূপ খননের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ব্লকে নতুন নতুন সম্ভাবনাময় কূপের লোকেশন চিহ্নিতকরণের জন্য বাপেক্স, বিজিএফসিএল ও এসজিএফএল কর্তৃক স্ব-স্ব ব্লকে সাইসমিক ডাটা আহরণ ও বিশ্লেষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

২৩০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা

২০২৪-২৫ অর্থবছরে ডিভিডেন্ড, আয়কর ও আমদানিশুল্ক বাবদ ২৩০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করেছে জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিসন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। কোম্পানির সার্বিক কর্মকান্ডে সন্তোষ প্রকাশ করেছে পরিচালনা পর্ষদ ও শেয়ারহোল্ডারগণ।

সম্প্রতি পেট্রোসেন্টারে অনুষ্ঠিত কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। কোম্পানিটির ৩৯তম বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন বোর্ড চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জিয়াউল হক।পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজানুর রহমানসহ শেয়ারহোল্ডারগণ অংশ নেন। সাধারণ সভা পরিচালনা করেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আতিকুর রহমান।

সভায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক বিবরণী অনুমোদন করা হয়। কোম্পানিটি আলোচিত অর্থবছরে ৩ হাজার ৮১৭ দশমিক ২২ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস বিক্রি করেছে। এতে ৭ হাজার ২৮৬ কোটি ১১ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করেছে।

১৯৭৮ সালের ১ জানুয়ারী হযরত শাহজালাল (রহ.) এর মাজার শরীফে শিখা প্রজ্জলনের মাধ্যমে সিলেট শহরে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্যাস সরবরাহের সূচনা হয়। সিলেট চা বাগান গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প-১, সুনামগঞ্জ শহর গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প, কৈলাসটিলা-ছাতক পাইপলাইন প্রকল্প ও ছাতক শহর গ্যাস সরবরাহ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলে গ্যাস ট্রান্সমিসন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পাইপলাইনের বিস্তৃতি ঘটে। ১৫০ কোটি টাকার অনুমোদিত মূলধন নিয়ে ১৯৮৬ সালের ১ ডিসেম্বর জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিসন এ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড (জেজিটিডিএসএল) এর কার্যক্রম শুরু হয়।

জালালাবাদ গ্যাস প্রতিষ্ঠালগ্ন হতেই সিলেট অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণের জন্য পাইপলাইন নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করে আসছে। কোম্পানিটির অধীনে বিভিন্ন শ্রেণির ২ লাখ ২১ হাজার ৮৮০ জন গ্রাহক রয়েছে।

বাংলাদেশের গ্যাস সম্পদ নিয়ে নানান রাজনীতি বিদ্যমান। এক সময় বলা হলো গ্যাসের উপর দেশ ভাসছে, আবার আরেক সময় বলা হলো গ্যাস নেই আমদানি করতে হবে। এই রাজনৈতিক খেলার কারণে অনুসন্ধান কার্যক্রম এখনও তিমিরেই বলা চলে। বাংলাদেশের ভূ-খন্ডে প্রথম কূপ খনন করা হয় ১৯১১ সালে। ১১৪ বছরে অনুসন্ধান কূপ খনন করা হয়েছে কমবেশি ১০০টির মতো। আন্তর্জাতিকভাবে ১০টি কূপ খনন করে একটিতে গ্যাস পাওয়া গেলে সফল বলা হয়। সেখানে বাংলাদেশের ১০০টি অনুসন্ধান কূপ খনন করে ২৯ গ্যাস ফিল্ড আবিস্কৃত হয়েছে। অর্থাৎ সাফল্যের হার প্রায় তিন অনুপাত এক।

১৯৯৫ সালের জ্বালানি নীতিমালায় বছরে ৪টি অনুসন্ধান কূপ খনন করার কথা বলা হয়। কিন্তু কোন সরকারেই সেই লক্ষ্যমাত্রার ধারের কাছেও ঘেষতে পারেনি। এক সময় দেশীয় গ্যাসফিল্ডগুলো থেকে দৈনিক ২৮০০ মিলিয়নের মতো গ্যাস উত্তোলন করা হয়েছে। মজুদ কমে আসায় অনেক বর্তমানে ১৭৫৮ (১১ নভেম্বর) মিলিয়নে নেমে এসেছে। অন্যদিকে বাড়ন্ত রয়েছে গ্যাসের চাহিদা। আমদানি করেও ঘাটতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পেট্রোবাংলা।