* পাকিস্তানের ১২৫টি যুদ্ধবিমান নিয়ে পাল্টা হামলা

* ভারতের ২১ বিমানবন্দর আগামী ১০ মে পর্যন্ত বন্ধ

* ভারত-পাকিস্তানের পাল্টাপাল্টি হামলায় ৪৬ নিহত আহত শতাধিক

* সর্বদলীয় বৈঠক করেছে মোদি

* ১৫টি শহরে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে বলে দাবি নয়াদিল্লীর

ভারত ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলওসি) বরাবর ফের উত্তেজনার মধ্যে দুই পক্ষের ব্যাপক গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে। এর আগে আকাশে পাকিস্তান-ভারত দুই দেশের যুদ্ধবিমানের মধ্যে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে ডগ ফাইট (সম্মুখ যুদ্ধ)। আর এ যুদ্ধকে আধুনিক সময়ের সবচেয়ে ‘বড় এবং দীর্ঘ ডগ ফাইট’ সংঘটিত হয়। পাকিস্তানের ১২৫টি যুদ্ধবিমান পাল্টা এই হামলায় অংশ নেয়। তবে দুই দেশের কোনো বিমানই একে অপরের অংশে প্রবেশ করেনি। পাকিস্তান ও ভারতীয় বিমানের মধ্যে ১৬০ কিলোমিটার দূর থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় অন্তত ১৫টি শহরে সামরিক স্থাপনা লক্ষ্য করে পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করেছে বলে দাবি করেছে নয়াদিল্লী। এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গতকাল বৃহস্পতিবার একটি সর্বদলীয় বৈঠক করেছেন। পাশাপাশি গতকাল বেলা ১১টায় ভারতের মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা কমিটির (সিসিএস) বৈঠকও আহ্বান করা হয়। এছাড়াও ভারতের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২১টি বিমানবন্দর যাত্রীবাহী ফ্লাইটের জন্য আগামী ১০ মে ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ভারতের হামলার প্রতিক্রিয়ায় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় গত বুধবার থেকে টানা গোলাবর্ষণ করেছে পাকিস্তানী সেনারা। এ ঘটনায় দিনেশ কুমার নামে একজন ভারতীয় সেনা নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। গত বুধবার রাত ১১টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে তার নিহত হওয়ার খবর জানানো হয়। সূত্র: খবর এনডিটিভি, এএফপি, বিবিসি, আল জাজিরা, সিএনএন, ডন, রয়টার্স, গার্ডিয়ান, জিও নিউজ।

এদিকে, ভারতের হামলা নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ। ভারত পাকিস্তানের ওপর হামলা চালিয়ে ‘ভুল করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মূল্য দিতে হবে তাদের। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আচমকা গোলাগুলী ও বিস্ফোরণের শব্দে শহরে চরম ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। হামলার পর অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হন। ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, পাকিস্তানের ছোড়া গোলায় ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন। গত বুধবার জম্মু ও কাশ্মীরের এলওসি সংলগ্ন সীমান্ত শহর পুঞ্চে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী একাধিক প্রাণঘাতী হামলা চালালে শহরটিতে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে নতুন করে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যেই ভারতের ২৫টি ড্রোন গুলী করে ভূপাতিত করার দাবি করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। আহত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ জনে। ভারতের হামলার জবাবে পাকিস্তানও ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে হামলা চালায়। দেশটি বলছে, ভারত-শাসিত কাশ্মীরে পাকিস্তানের পাল্টা হামলায় ১৫ জন নিহত ও ৪৩ জন আহত হয়েছেন। এদিকে, পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পাঞ্জাবের রাজধানী লাহোরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বিস্ফোরক-বোঝাই একটি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে। লাহোরের ওয়ালটন বিমানবন্দরের কাছে ড্রোনটি ভূপাতিত করা হয়।

পাকিস্তানের বিভিন্ন শহরে ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত: পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র মেজর জেনারেল আহমেদ শরিফ চৌধুরী জানান, ভারতের পাঠানো ইসরাইলী তৈরি হারপ ড্রোনগুলো করাচি ও লাহোরসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় প্রবেশ করে। এসব ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, ভারতীয় ড্রোনগুলো বারবার আমাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করছে...এই নগ্ন আগ্রাসনের জন্য ভারতকে চড়া মূল্য দিতে হবে। আহমেদ শরিফ চৌধুরী আরও বলেন, ইসরায়েলের তৈরি হারপ ড্রোন ব্যবহার ভারতের হতাশা ও আতঙ্কের বহিঃপ্রকাশই। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পড়ে থাকা এসব ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হচ্ছে। ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে কোনো তাৎক্ষণিক মন্তব্য করেনি। এর আগের দিন বুধবার ভোরে ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা চালানো হয়। নয়াদিল্লির দাবি, সন্ত্রাসী অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে তারা।

ভারতের ২১ বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা: বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয় সূত্রে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু পত্রিকার হাতে আসা একটি নোটিশ টু এয়ারম্যান (এনওটিএএম)-এ জানানো হয়েছে। এই বিমানবন্দরগুলো ১০ মে সকাল পর্যন্ত সাময়িকভাবে ফ্লাইট চলাচলের বাইরে থাকবে। এই তালিকায় জম্মু-কাশ্মীর ও লেহ-এর পাশাপাশি পাঞ্জাব, হিমাচল প্রদেশ, রাজস্থান এবং গুজরাট রাজ্যের একাধিক বিমানবন্দর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে ভারতের অভ্যন্তরীণ রুটে বিপুল সংখ্যক ফ্লাইট বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে দেশটির এয়ারলাইন্সগুলো। এনওটিএএম অনুযায়ী, জম্মু ও শ্রীনগর (জম্মু-কাশ্মীর), লেহ, অমৃতসর, চণ্ডীগড়, পাতিয়ালা, হালওয়ারা (পাঞ্জাব), শিমলা ও ধরমশালা (হিমাচল প্রদেশ), যোধপুর, বিকানের, জয়সলমের, কিশনগড় (রাজস্থান) এবং ভূজ, জামনগর, রাজকোট, মুন্দ্রা, পোরবন্দর, কান্ডলা, কেশোদ (গুজরাট) বিমানবন্দরের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। এছাড়াও গোয়ালিয়র ও হিন্দন বিমানবন্দরেও ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে এক্স-এ (সাবেক টুইটার) জানিয়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স।

ভারতের ১৫ শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা পাকিস্তানের: ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার বলেছে, বৃহস্পতিবার রাতভর ও সকালের দিকে জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব এবং গুজরাটসহ দেশের ১৫টি শহরে সামরিক স্থাপনা নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে পাকিস্তান। তবে এসব হামলায় ভারতে কোনও হতাহত কিংবা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার বলেছে, ভারতীয় বাহিনী শ্রীনগর, পাঠানকোট, অমৃতসর, লুধিয়ানা, চণ্ডীগড় এবং অন্যান্য স্থানের সামরিক স্থাপনায় পাকিস্তানের হামলার চেষ্টার জবাবে লাহোরসহ কয়েকটি স্থানে পাকিস্তানি আকাশ প্রতিরক্ষা রাডার ও অন্যান্য ব্যবস্থাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। পাকিস্তানের একাধিক স্থানের সামরিক স্থাপনা থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে ভারতীয় সামরিক বাহিনী। তারা বলেছে, ভারতের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলীয় ১৫ শহরে পাকিস্তানের ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ধ্বংস করার জন্য ভারতীয় সামরিক বাহিনী রাশিয়ার তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এস-৪০০ ব্যবহার করেছে। ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, পাকিস্তানের ছোড়া ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের ধ্বংসাবশেষ সংগ্রহ করা হচ্ছে।