পুলিশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের অংশ হিসেবে প্রথমবারের মতো সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে চায় সরকার। এরই অংশ হিসেবে পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামোতে এএসআই পদে ৮ হাজার নতুন পদ সৃষ্টি করতে নানা প্রশাসনিক প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। আর এই পদে নিয়োগ দিতে শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি ও সমমানে উন্নীতকরণ এবং সরাসরি এএসআই পদে নিয়োগ পদ্ধতি প্রচলন করতে ১৯৪৩ সালের পুলিশ রেগুলেশনস্ এর প্রবিধান ৭৪৩ সংশোধনের প্রস্তাব করেছে পুলিশ সদর দফতর।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের একজন কর্মকর্তা গতকাল বুধবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক সংগ্রামকে বলেন, এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ দিতে ৮ হাজার পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মতামত নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া পুলিশ রেগুলেশনস্ এর প্রবিধান ৭৪৩ সংশোধনেরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সূত্র বলেছে, পুলিশ রেগুলেশনস্ এর প্রবিধান ৭৪৩ এতে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশের (এসপি) কথা বলা হয়েছে। সেখানে এসপি অথবা সমপদমর্যাদার কর্মকর্তার কথা যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে। অন্যদিকে মেথড অব রিক্রুটমেন্টে বিদ্যমান প্রবিধানে শুধুমাত্র পুলিশ কনস্টেবলের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে নতুন সৃষ্টি করা এসিসটেন্ট সাব ইন্সপেক্টর অব পুলিশ (এএসআই) শব্দ যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবছর এএসআই পদে সরাসরি ৫০ শতাংশ নিয়োগ এবং ৫০ শতাংশ কনস্টেবল ও নায়েক পদ থেকে পােন্নতির মাধ্যমে শুন্য পদ পুরণের প্রস্তাব করা হয়েছে। বিদ্যমান প্রবিধানে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়স সর্বনি¤œ ১৯ এবং সর্বোচ্চ ২৫ বছরের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে চাকরিতে প্রবেশের বয়স সর্বনি¤œ ১৮ এবং সর্বোচচ ২২ বছর করার কথা বলা হয়েছে।
বিদ্যমান প্রবিধানে নিয়োগ প্রত্যাশীকে সিভিল সার্জনের মেডিকেল সনদ নেয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রবিধানে সংশ্লিষ্ট জেলা সিভিল সার্জন অথবা কেন্দ্রিয় পুলিশ হাসপাতাল ঢাকার সুপারিনটেনডেন্ট থেকে মেডিকেল পরীক্ষায় ফিটনেস সনদ নেওয়ার বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।
বিদ্যমান প্রবিধানে প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতা ম্যাট্রিকুলেশন অথবা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। প্রস্তাবিত প্রবিধানে শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি অথবা সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ন (জিপিএ ৩.৫) হতে হবে। এছাড়া এসএসসি পরীক্ষাতেও জিপিএ ৩.৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা সংযুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ধাপে ধাপে পুলিশ কনস্টেবল এবং নায়েক পদ পুলিশের মোট সাংগঠনিক কাঠামোয় মঞ্জুরীকৃত পদ থেকে বিলুপ্ত করতে চায়। এছাড়া ক্যাডেট এএসআই পদে সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি চালু হলে ক্যাডেট এসআই (নিরস্ত্র) পদেও সরাসরি নিয়োগ পদ্ধতি পর্যায়ক্রমে বাতিলের পরিকল্পনা রয়েছে। তখন এসআই (নিরস্ত্র ) পদটি শতভাগ পদোন্নতিযোগ্য পদ হিসেবে বিবেচিত হবে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে ৩টি গ্রেডে’র ৪টি পদে সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণের বিধান চালু রয়েছে। এর মধ্যে ৯ম গ্রেডের এএসপি পদে মঞ্জুরীকৃত পরে ৬৭ শতাংশ পদে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগ প্রদান করা হয়। অবশিষ্ট ৩৩ শতাংশ পদ ইন্সপেক্টর পদে হতে পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। এসআই (নিরস্ত্র) (গ্রেড-১০) বাংলাশে পুলিশ মঞ্জুরীকৃত এসআই (নিরস্ত্র) পদের ৫০ শতাংশ সরাসরি এবং ৫০ শতাংশ পদ বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়। দশম গ্রেডের সার্জেন্ট পদ শতভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। ১৭তম গ্রেডে কনস্টেবল বাংলাশে পুলিশের মঞ্জুরীকৃত কনস্টেবল পদ শতভাগ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে। তবে এএসআই পদটি বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা হয়ে থাকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের প্রস্তাব অনুযায়ী, পুলিশ সদর দপ্তর নতুন যে ৮ হাজার এএসআই পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ পদ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে এবং ৫০ শতাংশ পদ নায়েক/কনস্টেবল হতে বিভাগীয় পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের কথা বলেছে।